চামোলি, ২৩ আগস্ট : উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলার থারালি তহশিলে শুক্রবার গভীর রাতে ভয়াবহ মেঘভাঙার ঘটনা ঘটে, যার ফলে পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। রাত প্রায় ২টা নাগাদ প্রবল বর্ষণের পর টুনরি গধেরা নামে একটি পাহাড়ি নালা হঠাৎ করেই উপচে পড়ে। তীব্র জলস্রোত বয়ে নিয়ে যায় কাদামাটি, পাথর ও অন্যান্য ধ্বংসস্তূপ, যা থারালি শহরের আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায় ঢুকে পড়ে। এর ফলে বাজার, তহশিল কমপ্লেক্স, সাব-ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেটের আবাসন, দোকানপাট, যানবাহন এমনকি বহু সাধারণ মানুষের বাড়ি সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাগওয়ারা গ্রামে একটি বাড়ি ধসে পড়লে এক কিশোরী ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে প্রাণ হারান। অন্যদিকে, চেপডো গ্রাম ও বাজার এলাকায় একজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এই দুর্যোগের পর জেলা প্রশাসন, এসডিআরএফ, পুলিশ ও সেনাবাহিনী রাতেই তৎপর হয়ে ওঠে। তবে মেঘভাঙার পরপরই রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উদ্ধারকাজে অনেকটা দেরি হয়। সেনাবাহিনীর রুদ্রপ্রয়াগ এবং জোশীমঠ ইউনিট থেকে প্রায় ৫০ জন সেনা সদস্য, চিকিৎসক দল, সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ ডগ ও ড্রোন নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যৌথভাবে উদ্ধার ও ত্রাণকার্যে লিপ্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে বহু মানুষকে তাঁদের বাড়ি থেকে সরিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং প্রশাসনের তরফে একাধিক ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে, যেখানে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য খাওয়াদাওয়া, চিকিৎসা ও আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এছাড়াও, থারালি-গওলদাম জাতীয় সড়ক সহ থারালি-সাগওয়ারা ও ডুঙ্গরি মোটর রাস্তাও সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে ধ্বংসস্তূপ জমে যাওয়ার কারণে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। জেলার তিনটি ডেভেলপমেন্ট ব্লকে শনিবার সমস্ত স্কুল ও কলেজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। চামোলির জেলা শাসক সন্দীপ তিওয়ারি ও অতিরিক্ত জেলা শাসক বিবেক প্রকাশ সকালে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন এবং জানান যে, তহশিল সদর দপ্তর থেকে শুরু করে আশপাশের এক কিলোমিটার জুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
মেঘভাঙার ঘটনা প্রসঙ্গে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী সামাজিক মাধ্যমে একটি বার্তা দিয়ে বলেন, “গতরাতে চামোলি জেলার থারালি এলাকায় মেঘভাঙার মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। এসডিআরএফ, পুলিশ ও প্রশাসন দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার ও ত্রাণকার্যে নিয়োজিত রয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি এবং ঈশ্বরের কাছে সবার নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করছি।” মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকেও জানানো হয়েছে যে, প্রয়োজনে অতিরিক্ত বাহিনী ও সম্পদ পাঠানো হবে।
এই ঘটনা আবারও সামনে এনে দিল পাহাড়ি রাজ্য উত্তরাখণ্ডের প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রতি দুর্বলতা। গত কয়েক সপ্তাহে রাজ্যজুড়ে একাধিক মেঘভাঙা, ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যার ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি উত্তরকাশীর ধারালি ও হরসিল এলাকায় মেঘভাঙার ফলে বহু মানুষ নিখোঁজ হন এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। চামোলির এই ঘটনা সেই তালিকায় নতুন সংযোজন।
ভারতীয় আবহাওয়া দফতর ইতিমধ্যেই রাজ্যে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত কমলা সতর্কতা জারি করেছে। বাগেশ্বর, পিথোরাগড়, টেহরি, দেরাদুন, নৈনিতাল ও উত্তরকাশী জেলায় অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা প্রকাশ করা হয়েছে। তাই আগামী কয়েক দিন পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রশাসনের তরফে নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে এবং গুজবে কান না দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি কোনও ধরনের প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনিক দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এই মুহূর্তে পুরো থারালি অঞ্চল বিপর্যস্ত। বহু পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়েছে, অনেকে এখনও নিখোঁজ। উদ্ধারকার্য চলছে, সেনা ও প্রশাসনের যৌথ প্রচেষ্টায় ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে জীবিতদের খোঁজ চালানো হচ্ছে। পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে নয়, তবে প্রশাসনের তরফে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে।

