ওয়াশিংটন/ব্রাসেলস, ১৭ আগস্ট: সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে হোয়াইট হাউসে যে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হতে যাচ্ছে, তার আগে ইউরোপজুড়ে কূটনৈতিক তৎপরতা তুঙ্গে। ইউরোপীয় নেতারা এবার কোনো সংঘর্ষ বা বিবাদ এড়াতে জেলেনস্কির সঙ্গে একজন সিনিয়র প্রতিনিধি পাঠানোর পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার স্টুব এবং ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুটের নাম উঠে এসেছে।
এই উদ্যোগের পেছনে মূল উদ্দেশ্য—জেলেনস্কিকে ট্রাম্পের সঙ্গে একা মুখোমুখি না হতে দেওয়া, বিশেষত ফেব্রুয়ারিতে তাঁদের মধ্যকার বিতণ্ডার পর, যেখানে ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে ‘অশ্রদ্ধাশীল’ বলে আক্রমণ করেছিলেন।
ইউরোপীয় নেতারা বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন ট্রাম্প-পুতিনের সদ্যসমাপ্ত আলাস্কা সম্মেলনের পর। সেখানে পুতিনকে ট্রাম্পের উষ্ণ অভ্যর্থনা এবং আলোচনার ধরণ দেখে আশঙ্কা জেগেছে যে জেলেনস্কি এবার কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন।
ইউক্রেন ও ইউরোপ এখন চেষ্টা করছে যাতে সোমবারের বৈঠকে ট্রাম্প রাশিয়ার কোনো প্রস্তাব, বিশেষ করে ইউক্রেনের অঞ্চল হস্তান্তরের বিষয়ে, সম্মত না হন। সূত্র জানিয়েছে, পুতিন ডোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল পুরোপুরি রাশিয়ার দখলে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন এবং ট্রাম্প এই প্রস্তাবের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন। বিনিময়ে খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়ার আংশিক দখলকৃত অঞ্চলগুলিতে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব করা হয়েছে।
তবে জেলেনস্কি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, তিনি ডনবাস (ডোনেৎস্ক-লুহানস্ক) ছাড়তে রাজি নন। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এই অঞ্চলগুলিকে কোনোভাবেই রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া হবে না বলেই জানানো হয়েছে।
পুতিনের সঙ্গে আলাস্কা বৈঠকের পর ট্রাম্প তাঁর অবস্থানে পরিবর্তন এনে যুদ্ধবিরতির বদলে পূর্ণাঙ্গ শান্তি চুক্তির পক্ষে মত দেন, যা ইউক্রেন ও ইউরোপীয় নেতৃত্বের মতে, রাশিয়ার কৌশলগত বিজয় হতে পারে। এ নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক কায়া কালাস কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “রাশিয়া এখনো এই যুদ্ধ থামাতে চায় না। ওদের উদ্দেশ্য হচ্ছে আলোচনার আড়ালে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া।”
মাঝেমধ্যেই যুদ্ধবিরতির ব্যর্থতার উদাহরণ টেনে ট্রাম্প বলেছেন, “শান্তি চুক্তিই এখন একমাত্র কার্যকর পথ।” তিনি জানিয়েছেন, “জেলেনস্কির উপরেই এখন দায়িত্ব—শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ খুঁজে বের করার।”
ইউরোপীয় নেতারা অবশ্য এই অবস্থানকে রাশিয়ার পক্ষের সুবিধাজনক বলে মনে করছেন। ফ্রান্স, ব্রিটেন ও জার্মানির নেতারা রোববার এক ভিডিও বৈঠকে ‘কোয়ালিশন অফ দ্য উইলিং’-এর পক্ষ থেকে জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি না হলে রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা ও অর্থনৈতিক চাপ অব্যাহত থাকবে।
জেলেনস্কি শনিবার এক বিবৃতিতে জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে আলাস্কা সম্মেলন নিয়ে তাঁর একটি “গঠনমূলক আলোচনা” হয়েছে এবং তিনি হোয়াইট হাউসে সোমবারের বৈঠকে “যুদ্ধ থামানো এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার যাবতীয় দিক নিয়ে” বিস্তারিত আলোচনা করবেন।
এই বৈঠকের প্রতি এখন নজর শুধু ইউক্রেন ও আমেরিকান প্রশাসনের নয়, গোটা ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক সূত্র জানিয়েছে, হোয়াইট হাউসের এই বৈঠকে ইউরোপের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নেতা উপস্থিত থাকতে পারেন।
এদিকে ইউক্রেনের যুদ্ধ থামেনি। কিয়েভ জানিয়েছে, শনিবার রাতে রাশিয়া ৮৫টি ড্রোন ও একটি ব্যালিস্টিক মিসাইল দিয়ে হামলা চালিয়েছে।
মস্কোতে পুতিন তাঁর সম্মেলন পরবর্তী বিবৃতিতে জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা “খুবই গঠনমূলক” এবং “প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তের দিকে অগ্রসর হওয়ার পথ তৈরি হয়েছে।” তিনি ইউক্রেন ও ইউরোপকে সতর্ক করে বলেছেন, “আড়ালে কোনো ষড়যন্ত্র বা চক্রান্ত যেন না চলে যা এই অগ্রগতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।”

