নয়াদিল্লি, ১৬ আগস্ট : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে আলাস্কায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনটি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বহু প্রতীক্ষিত এক ঘটনা হলেও, প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠক শেষে কোনো বড় ধরনের চুক্তি ছাড়াই এটি শেষ হয়। বৈঠকের শুরুতে দুই নেতা উষ্ণ করমর্দন করেন এবং পরে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প জানান, “অনেক বিষয়ে একমত হওয়া গেছে,” তবে ইউক্রেন ইস্যুতে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি। তার ভাষায়, “চুক্তি হয়নি মানেই চুক্তি হয়নি।” অন্যদিকে পুতিন আবারও তার আগের কঠোর শর্তগুলো পুনর্ব্যক্ত করেন—ইউক্রেনকে দখলকৃত অঞ্চল ছাড়তে হবে, নিরস্ত্র হতে হবে, ন্যাটো থেকে দূরে থাকতে হবে এবং সরকার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। পশ্চিমা বিশ্ব ও কিয়েভ এসব শর্ত বরাবরই অগ্রহণযোগ্য বলে প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
বৈঠকের আগে ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য একটি “ল্যান্ড-সোয়াপিং” বা ভূখণ্ড বিনিময় প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যাতে ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডের কিছু অংশ বিনিময়ের মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান ঘটানো যায়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই প্রক্রিয়ায় ইউক্রেনকে অবশ্যই অংশ নিতে হবে এবং যুদ্ধ-পরবর্তী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে—তবে সেটা ন্যাটোর অংশ না হয়ে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এই প্রস্তাবের কথা নিশ্চিত করেন। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়া অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি না মানলে তার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানান।
এই আলোচনার ব্যর্থতা ভারতের ওপরও পরোক্ষ প্রভাব ফেলতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি শান্তি আলোচনা সফল না হয়, তাহলে ভারতকে ‘সেকেন্ডারি ট্যারিফ’-এর মুখোমুখি হতে হতে পারে। এতে ভারতের রপ্তানিনির্ভর শিল্প যেমন টেক্সটাইল, গহনা, ওষুধ ও যন্ত্রপাতি খাত বিপদের সম্মুখীন হতে পারে। বর্তমানে ভারত ৫০ শতাংশ মার্কিন শুল্কের আওতায় রয়েছে, যার মধ্যে ২৫ শতাংশ মূল শুল্ক এবং বাকি ২৫ শতাংশ রাশিয়া থেকে তেল ও অস্ত্র কেনার জন্য আরোপিত শাস্তিমূলক শুল্ক।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি ন্যাটো নেতৃবৃন্দ ও প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে ফোন করে বৈঠকের বিষয়ে অবহিত করবেন এবং পুতিনের সঙ্গে “সম্ভবত” শিগগিরই আবারও বৈঠক করবেন। সম্মেলনের শেষে পুতিন রসিকতা করে বলেন, “পরেরবার মস্কোয়,” যা ভবিষ্যতের সম্ভাব্য আরেকটি বৈঠকের ইঙ্গিত হতে পারে। তবে এই বৈঠকের বাস্তবিক ফলাফল না থাকায় আন্তর্জাতিক মহলে একে আরও একটি ব্যর্থ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। ভারতের মতো দেশগুলোর জন্য এতে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা আরও বাড়ছে।

