নয়াদিল্লি, ১৪ আগস্ট : ৭৯তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সারা দেশে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে ‘হার ঘর তিরঙ্গা’ অভিযান। জম্মু ও কাশ্মীরের রাজৌরি, চণ্ডীগড় ও মহারাষ্ট্রে এই কর্মসূচির আওতায় আয়োজিত হয়েছে নানা বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের, যার মাধ্যমে দেশের প্রতিটি প্রান্তে জাতীয় পতাকার প্রতি শ্রদ্ধা ও দেশপ্রেমের এক অনন্য আবেগের প্রকাশ ঘটেছে।
জম্মু ও কাশ্মীরের রাজৌরি জেলায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এক বিশাল তিরঙ্গা র্যা লির আয়োজন করা হয়। জেলা শাসক অভিষেক শর্মা এবং জেলা পুলিশ সুপার গৌরব সিকরওয়ার কোত্রাঙ্কার নাঙ্গা থুব থেকে এক বিশিষ্ট অশ্বারোহী র্যা লির সূচনা করেন, যেখানে প্রতিটি ঘোড়সওয়ার গর্বের সঙ্গে হাতে বহন করছিলেন জাতীয় পতাকা। র্যা লিটিতে অংশগ্রহণ করে প্রায় সাত হাজার মানুষ, যারা একসঙ্গে একটি দুই কিলোমিটার দীর্ঘ জাতীয় পতাকা বহন করেন, যা ছিল দেশপ্রেম ও ঐক্যের এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত। র্যা লির শেষপর্বে ধানিধার কেল্লায় আয়োজিত হয় এক দেশাত্মবোধক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যেখানে অংশ নেয় রাজৌরির বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাবাঘুলাম শাহ বদশাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। জেলা শাসক জানান, এই ধরনের কর্মসূচি শুধু পতাকা প্রদর্শন নয়, বরং তা আমাদের স্বাধীনতা, ঐক্য এবং জাতীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের মাধ্যম।
অন্যদিকে, চণ্ডীগড়ের সুখনা লেকে চণ্ডীগড় প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে এবং সিটকো-র উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় এক মনোমুগ্ধকর নৌকা র্যা লি। মুখ্য সচিব রাজীব বর্মা এই অনুষ্ঠানে দুটি ক্রুজ, ১২৫টি নৌকা ও শিকারার মাধ্যমে র্যা লির শুভ সূচনা করেন। নৌকাগুলো তেরঙা পতাকা ও সজ্জায় ভূষিত ছিল, যা ভারতের একতা ও স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে উপস্থাপিত হয়। শতাধিক তেরঙা বেলুন আকাশে ছেড়ে দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়, এবং এরপর উত্তরাঞ্চল সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের শিল্পীরা ভাংড়া ও গিদ্দা পরিবেশনার মাধ্যমে উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করেন। এই উদ্যাপন শুধু একটি ভৌগোলিক কর্মসূচি নয়, বরং শহরবাসীর হৃদয়ে দেশপ্রেমের এক গভীর অনুরণন তৈরি করে।
মহারাষ্ট্রে ‘হার ঘর তিরঙ্গা’ অভিযানের আওতায় বিভিন্ন জেলার প্রশাসন ও স্থানীয় সংস্থাগুলোর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছে নানা সমাজমুখী এবং সৃজনশীল কর্মসূচি। ১৩ থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত রাজ্যজুড়ে ঘরে ঘরে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষ এই অভিযানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। আলন্দি ও ইন্দাপুরে বিদ্যালয় পর্যায়ে পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশ সচেতনতা বিষয়ক প্রতিযোগিতা, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি আয়োজিত হয়। সিন্ধুদুর্গ জেলার ভেংগুরলায় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয় এবং পালঘারে প্রাক্তন সেনানিদের সংবর্ধিত করা হয়। রত্নগিরিতে জেলা পুলিশের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় ‘ড্রাগ-ফ্রি রত্নগিরি রান’, যা ছিল একটি পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রতিযোগিতা। পিম্পরি-চিনচওয়াড়ে ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’-এর আওতায় ‘হার ঘর তিরঙ্গা, হার ঘর স্বচ্ছতা’ শীর্ষক একটি বিশেষ প্রচারাভিযান চালানো হয়, যেখানে পথনাটিকা ও গণসচেতনতা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়।
এই উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে ‘হার ঘর তিরঙ্গা’ শুধুমাত্র একটি পতাকা প্রদর্শনের কর্মসূচি না থেকে এক গণআন্দোলনে পরিণত হয়েছে। তা নাগরিকদের মধ্যে দেশপ্রেম, ঐক্য এবং সামাজিক দায়িত্ববোধের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে। জাতীয় পতাকার ছায়ায় দেশবাসী আজ একত্রিত, এবং এই চেতনা আমাদের ভবিষ্যতের পথনির্দেশ হয়ে উঠছে।

