পুরী, ১৩ আগস্ট— ওডিশার পুরীতে অবস্থিত বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ও পবিত্র তীর্থস্থান শ্রী জগন্নাথ মন্দির-কে ঘিরে এক চাঞ্চল্যকর ও উদ্বেগজনক ঘটনা সামনে এসেছে। মঙ্গলবার রাতে মন্দির সংলগ্ন একটি স্থানে সন্ত্রাসী হুমকি দিয়ে লেখা গ্রাফিতি পাওয়া গেছে। এতে দাবি করা হয়েছে, “সন্ত্রাসবাদীরা জগন্নাথ মন্দির ধ্বংস করবে”, এবং এই ভয়ঙ্কর হুমকির পাশে একাধিক ফোন নম্বর, ‘পি এম মোদি’, ‘দিল্লি’ ইত্যাদি শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে।
এই হুমকির বার্তাটি পাওয়া গেছে পুরী শহরের বালিসাহী এলাকায় অবস্থিত মা বুড়ি ঠাকুরাণী মন্দিরের দেয়ালে। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই স্থানটি প্রাচীন শ্রী জগন্নাথ মন্দির থেকে বেশি দূরে নয়। দেয়ালে লেখা গ্রাফিতিটি ওড়িয়া ভাষায় লেখা, যা দেখে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনার খবর পাওয়ার পরই পুরী জেলার পুলিশ সুপার পিনাক মিশ্র ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে জানান, “আমরা বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছি। এটি নিছক কৌতুক বা দুষ্টামি হতে পারে, তবে আমরা তা ধরে নিচ্ছি না। ইতিমধ্যেই আমরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি এবং একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়েছে। অপরাধীদের খুঁজে বের করার জন্য সমস্ত প্রচেষ্টা নেওয়া হচ্ছে।”
পুলিশ সূত্রে আরও জানা গেছে, মঙ্গলবার গভীর রাতে এই হুমকির বার্তাগুলি দেয়ালে লেখা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান করা হয়েছে। আশেপাশের এলাকা থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, অতিরিক্ত নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে মন্দির চত্বর ও সংলগ্ন এলাকায়।
পুলিশ এখনও নিশ্চিত নয়, এই হুমকি বাস্তব কোনো সন্ত্রাসী ষড়যন্ত্রের অংশ, নাকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানোর একটি চেষ্টা। তদন্তকারীরা বলছেন, “প্রথমত, আমরা ফোন নম্বরগুলির উৎস শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি, যেহেতু বার্তায় রাজনৈতিক এবং ভৌগোলিক ইঙ্গিত রয়েছে (যেমন: দিল্লি, প্রধানমন্ত্রীর নাম), তাই বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।”
পুরীর বহু ভক্ত ও স্থানীয় নাগরিক এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, এই ধরনের হুমকি শুধুমাত্র ভক্তদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য নয়, বরং একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিতও হতে পারে।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে পুরী জগন্নাথ মন্দির ঘিরে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওডিশা সরকার। সম্প্রতি কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা প্রস্তাব দিয়েছিল, মন্দিরের ‘মহাপ্রসাদ’ ও ‘শুকনো প্রসাদ’ অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হোক, যাতে দেশ-বিদেশের ভক্তরা এই পবিত্র প্রসাদ গ্রহণ করতে পারেন।
তবে ওডিশা সরকারের আইনমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দন সোমবার এক প্রেস কনফারেন্সে স্পষ্ট জানান, সরকার এবং শ্রী জগন্নাথ টেম্পল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন যৌথভাবে এই প্রস্তাব খারিজ করেছে। তিনি বলেন, “যদিও এটি একটি সদিচ্ছা থেকে আসা উদ্যোগ, আমরা মহাপ্রসাদের পবিত্রতা ও ঐতিহ্য বজায় রাখার দিকটি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। অনলাইন পরিবহণের মাধ্যমে প্রসাদের মান ও পবিত্রতা রক্ষা করা কঠিন।”
তিনি আরও বলেন, “ভবিষ্যতে যদি কোনো উপযুক্ত প্রক্রিয়া তৈরি করা যায়, যেখানে মহাপ্রসাদের ধর্মীয় মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকে, তাহলে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে।”
শ্রী জগন্নাথ মন্দির শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় স্থান নয়, বরং ওডিশার সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক ও জাতীয় গর্বের প্রতীক। এই মন্দিরে প্রতিদিন হাজার হাজার ভক্ত আসেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে, এমনকি বিদেশ থেকেও। এরকম একটি পবিত্র স্থানকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাস হুমকি শুধু স্থানীয় নয়, গোটা দেশের নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলছে।
বর্তমানে রাজ্য সরকার ও প্রশাসন পুরী এবং তার আশপাশে সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রেখেছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলিও জোরদার নজরদারি চালাচ্ছে।

