কলকাতা, ১২ আগস্ট :ভারতের একাধিক রাজ্য জুড়ে মৌসুমি বৃষ্টির প্রকোপ চরমে উঠেছে। জম্মু-কাশ্মীর থেকে শুরু করে উত্তরাখণ্ড, দিল্লি, হায়দরাবাদ এবং উত্তরপ্রদেশ—প্রবল বৃষ্টিপাতে কোথাও পাহাড় ধস, কোথাও জলবন্দি অবস্থা, কোথাও আবার মানুষের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। সরকারি ও আবহাওয়া দপ্তরের সূত্রে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই বৃষ্টি আগামী কয়েকদিন আরও তীব্র হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জম্মু বিভাগের রাজৌরি, রিয়াসি ও পুঞ্চ জেলায় প্রবল বৃষ্টির জেরে মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সব স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি করেছে জেলা প্রশাসন। আবহাওয়া দপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় রিয়াসিতে ২৮০.৫ মিমি, কাঠুয়ায় ১৪৮ মিমি এবং সাম্বা ও জম্মুতে ৯৬ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এই প্রবল বর্ষণে একাধিক স্থানে হঠাৎ বন্যা ও কাদামাটির ধস দেখা দিয়েছে। এতে অন্তত দুটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং একাধিক আন্তঃজেলা রাস্তা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে পড়েছে। যদিও প্রশাসনের দাবি, এখন পর্যন্ত কোনো প্রাণহানির খবর নেই।
জম্মুর বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কাজ করছে এবং দ্রুত স্বাভাবিকতা ফেরানোর চেষ্টাও চলছে।
উত্তরাখণ্ডের দেরাদুন, উত্তরকাশী এবং গাড়ওয়াল অঞ্চলে টানা বৃষ্টিপাত জনজীবন স্তব্ধ করে দিয়েছে। দেরাদুন জেলা প্রশাসন সোমবার (১১ আগস্ট) রাতে এক সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে ঘোষণা করেছে, আজ মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) জেলার সব স্কুল (শ্রেণি ১ থেকে ১২) ও আঙনওয়াড়ি কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। এই ছুটি শুধু ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নয়, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে কেদারনাথ যাত্রা সোমবার থেকে আগামী তিনদিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বুধবার (১৪ আগস্ট) পর্যন্ত বৃষ্টি জারি থাকতে পারে।
উত্তরকাশীর ধারালি গ্রামে গত ৫ আগস্ট যে ধ্বংসাত্মক বন্যা ও ধস দেখা দিয়েছিল, তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত একাধিক ব্যক্তি নিখোঁজ। উদ্ধারকার্যে মোতায়েন করা হয়েছে সেনা ও এনডিআরএফ। তবে প্রবল বৃষ্টিপাত ও ধসের কারণে উদ্ধারকার্য মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
গঙ্গোত্রী জাতীয় সড়কের সোনগাড় ও ডাবরানির ক্ষতিগ্রস্ত অংশ এখনও মেরামতাধীন। যদিও গঙ্গনানির কাছে লিমচাগাড়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বেইলি ব্রিজ চালু করা হয়েছে, তবে আবহাওয়া অনুকূল না হওয়ায় ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধার সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে ওয়াডিয়া ইন্সটিটিউট অফ হিমালয়ান জিওলজির একটি ১০ সদস্যের ভূতত্ত্ববিদ দলের গন্তব্য ধারালি হলেও রাস্তা বন্ধ থাকায় তারা এখনও দুর্গত অঞ্চলে পৌঁছতে পারেননি।
রাজধানী দিল্লিতে আজ সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা। ভারতের আবহাওয়া দপ্তর পূর্বাভাস দিয়েছে, মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) দিনভর বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি চলবে। ইতিমধ্যেই শহরের একাধিক এলাকায় জল জমে যাওয়ায় যানজট ও জনভোগান্তি তৈরি হয়েছে।
নদীসংলগ্ন নিচু এলাকাগুলিতে জলের স্তর বেড়ে যাওয়ায় বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সড়ক ও নাগরিক পরিষেবা দফতর শহরের জলনিকাশি ব্যবস্থা সচল রাখতে অতিরিক্ত কর্মী মোতায়েন করেছে।
ভারতের দক্ষিণাংশে অবস্থিত হায়দরাবাদ শহরও প্রবল বর্ষণের জন্য সতর্কতায় আছে। মঙ্গলবার সকালেই আইএমডি ‘অরেঞ্জ অ্যালার্ট’ জারি করে জানিয়েছে, আগামী ১৩ ও ১৪ আগস্ট হায়দরাবাদ ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
জিএইচএমসি-র অন্তর্গত এলাকাগুলিতে ৭ থেকে ১২ সেন্টিমিটার বা তারও বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সঙ্গে হঠাৎ বন্যার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। নাগরিকদের বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার ও দুর্বল স্থানে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশের গোরখপুরে মৌসুমি বৃষ্টির মধ্যে ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। সোমবার বিকেলে আফরিন নামে আট বছরের এক কন্যা সন্তান খোলা ড্রেনে পড়ে মৃত্যুবরণ করে।
জানা গিয়েছে, আফরিন মাদ্রাসা থেকে পড়াশোনা শেষে বাড়ি ফেরার পথে গোসীপুর এলাকার একটি খোলা নালায় পা পিছলে পড়ে যায়। স্থানীয়রা সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই ঘটনায় গোরখপুর পুরসভা শোকপ্রকাশ করে বলেছে, “এই ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তদন্ত হবে।” শহরের খোলা নালাগুলিকে অবিলম্বে বন্ধ করার দাবিও উঠেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
বর্তমানে দেশের একাধিক রাজ্যে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রশাসন ও উদ্ধারকারী দলগুলির নিরলস প্রচেষ্টা সত্ত্বেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে মোকাবিলা কঠিন হয়ে পড়ছে। আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, আগামী কয়েকদিন এই পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা কম।
সাধারণ নাগরিকদের অনুরোধ করা হয়েছে, সরকারি নির্দেশিকা ও আবহাওয়া সংক্রান্ত সতর্কতা কঠোরভাবে মেনে চলার জন্য। অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়িয়ে চলা এবং দুর্বল অবকাঠামোর আশেপাশে না যাওয়াই এই মুহূর্তে সবচেয়ে নিরাপদ পদক্ষেপ।

