কলকাতা, ১২ অগস্ট: পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের প্রতীক দুর্গা পুজো এবার স্থায়ী রূপ পেতে চলেছে। রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, ‘দুর্গা অঙ্গন’ নামে এক স্থায়ী মন্দির কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে, যেখানে সারা বছর ধরেই মা দুর্গার পূজা এবং দর্শন সম্ভব হবে।
দুর্গা অঙ্গন গড়ে তুলবে রাজ্যের পর্যটন দফতর এবং হিডকো। ইতিমধ্যেই কলকাতার কাছাকাছি একটি উপযুক্ত জমির সন্ধান শুরু হয়েছে। রাজ্য সরকার জমি বরাদ্দ করলে প্রকল্পের বাজেট এবং স্থাপত্য পরিকল্পনা চূড়ান্ত হবে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর রাজ্যের বিদ্যুৎ, ক্রীড়া ও আবাসনমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, “ইউনেসকো পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুজোকে হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এবার স্থায়ী দুর্গামন্দির কমপ্লেক্স তৈরি হবে। হিডকো ও পর্যটন দফতর যৌথভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। একটি ট্রাস্ট গঠিত হবে এই মন্দির পরিচালনার জন্য, যার সদস্যদের নাম পরে ঘোষণা করা হবে।”
তিনি আরও জানান, এটি পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠবে, ঠিক যেমন দিঘায় তৈরি জগন্নাথ মন্দির কমপ্লেক্স। জগন্নাথ ধামের আদলে দুর্গা অঙ্গনও হবে একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, যেখানে দুর্গাপুজোর ধর্মীয় দিক ছাড়াও তার সমাজ-সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্বও তুলে ধরা হবে।
প্রসঙ্গত, ২১ জুলাই শহীদ দিবসের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী প্রথম এই প্রকল্পের ঘোষণা করেন। তিনি বলেছিলেন, “দুর্গাপুজো আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের আত্মার অংশ। যেমন জগন্নাথ ধাম তৈরি করেছি, তেমনই দুর্গা অঙ্গন গড়ে তুলব, যেখানে সারা বছর ধরে দুর্গাপুজোর রঙ ও আবহ অনুভব করতে পারবেন সকলে।”
তৃণমূল কংগ্রেসের এক সিনিয়র নেতা বলেন, “দুর্গা অঙ্গন হবে এক প্রকার ওপেন-এয়ার মিউজিয়ামের মতো, যেখানে ধর্মীয় পূজা ছাড়াও বাংলার দুর্গাপুজোর সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য দর্শকদের সামনে তুলে ধরা হবে।”
রাজনৈতিক মহলে এই প্রকল্পকে বিজেপির হিন্দুত্ব রাজনীতির মোকাবিলায় তৃণমূলের সাংস্কৃতিক রণনীতি হিসেবেও দেখা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই পদক্ষেপে বাংলার আদি ও অকৃত্রিম সংস্কৃতিকে সামনে এনে একদিকে যেমন রাজ্যবাসীর আবেগের প্রতি সম্মান জানানো হচ্ছে, তেমনি রাজনৈতিক বার্তাও স্পষ্ট।

