নয়াদিল্লি, ১২ আগস্ট : আধার কার্ড নাগরিকত্বের প্রমাণ হতে পারে না। বিহারে আসন্ন নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (সার) নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হওয়া একাধিক মামলার শুনানিতে মঙ্গলবার বিচারপতি সূর্যকান্ত একথা সাফ জানিয়ে দেন। আদালত জানিয়েছে, ভোটার তালিকায় কার নাম থাকবে আর কার থাকবে না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নির্বাচন কমিশনেরই রয়েছে।
বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেন, পিটিশনাররা কি বলছেন আধার নাগরিকত্বের প্রমাণ? আধার আইনেই বলা আছে, এটি কোনও চূড়ান্ত নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়। নির্বাচন কমিশন ঠিক বলেছে, আধার যাচাইয়ের প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়ে। কিন্তু এটি একমাত্র প্রমাণ হতে পারে না। দেখুন আধার আইনের ধারা ৯ কী বলছে। আদালত এই যুক্তিকে মানতে চায়নি, বিহারের সাধারণ মানুষ নির্বাচন কমিশনের চাওয়া নথিগুলি জমা দিতে পারছেন না। বিচারপতির মন্তব্য, এটি মূলত বিশ্বাসের ঘাটতির বিষয়, এর বেশি কিছু নয়।
সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, শুনানিতে বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেন, প্রথমে স্থির করতে হবে কমিশনের এই যাচাই প্রক্রিয়া চালানোর ক্ষমতা আছে কি না। যদি না থাকে, তাহলে সব কিছু শেষ। আর যদি থাকে, তাহলে সমস্যার অবকাশ নেই।
আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝার পক্ষে সিনিয়র অ্যাডভোকেট কপিল সিব্বল দাবি করেন, নির্বাচন কমিশনের এই প্রক্রিয়ায় বহু মানুষের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়ছে। বিশেষ করে যারা নির্দিষ্ট নথি দিতে পারছেন না। তিনি জানান, এমনকি ২০০৩ সালের ভোটার তালিকায় থাকা ব্যক্তিদেরও নতুন করে ফর্ম জমা দিতে বলা হয়েছে। নথি না দিলে সরাসরি নাম কেটে দেওয়া হচ্ছে, যদিও তাদের ঠিকানায় কোনও পরিবর্তন হয়নি।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সিনিয়র অ্যাডভোকেট রাকেশ দ্বিবেদী বলেন, ৭.৯ কোটির মধ্যে ৭.২৪ কোটি ভোটার সাড়া দিয়েছেন। ফলে এক কোটির বেশি নাম বাদ পড়েছে, এই ধারণা ঠিক নয়। তিনি আরও জানান, ৬.৫ কোটি মানুষকে কোনও নথি জমা দিতে হয়নি, কারণ তারা বা তাদের বাবা-মা ২০০৩ সালের তালিকায় ছিলেন।
কপিল সিব্বল দাবি করেন, জীবিত অনেক মানুষকে মৃত দেখানো হয়েছে। আবার যাদের নাম কাটা হয়েছে তারা অনেকেই জীবিত ও ভোটার তালিকায় আগে থেকেই ছিলেন। অ্যাক্টিভিস্ট যোগেন্দ্র যাদব এই অভিযানে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এটি বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভোটাধিকার বঞ্চিত করার ঘটনা। ইতিমধ্যেই ৬৫ লক্ষ নাম কাটা হয়েছে, যার মধ্যে ৩১ লক্ষ নারী এবং ২৫ লক্ষ পুরুষ রয়েছেন।
বিচারপতিরা কমিশনকে নির্দেশ দেন, আগামী শুনানিতে তারা যেন সমস্ত তথ্য ও পরিসংখ্যান নিয়ে হাজির হন। মোট কত ভোটার আগে ছিলেন, কত মৃত ভোটার ছিলেন, এখন কতজন আছেন সমস্ত কিছুই আদালতে জানাতে হবে। প্রসঙ্গত, এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছেন আরজেডি’র মনোজ ঝা, তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র, কংগ্রেসের কেসি বেণুগোপাল, এনসিপি (শরদ পওয়ার) নেত্রী সুপ্রিয়া সুলে, সিপিআই নেতা ডি রাজা, এসপি নেতা হরিন্দর সিং মালিক, শিবসেনা (ইউবিটি)-এর অরবিন্দ সাওয়ান্ত, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সরফরাজ আহমেদ এবং সিপিআই(এমএল) নেতা দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। এছাড়াও পিইউসিএল, এডিআর এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠন ও কর্মীরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।
কমিশন ১ আগস্ট খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হবে ৩০ সেপ্টেম্বর। তার আগে আদালতের নির্দেশ অনুসারে সমস্ত তথ্য ও ব্যাখ্যা নিয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।

