কুয়েত, ১১ আগস্ট : গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল দেশগুলির প্রবাসীদের জন্য বড় সুখবর। কুয়েত সরকার ঘোষণা করেছে, এখন থেকে জিসিসি সদস্য দেশগুলিতে (সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন, ওমান এবং কুয়েত) বৈধ ছয় মাসের রেসিডেন্সি থাকা যে কোনও বিদেশি নাগরিক কুয়েতে পর্যটক ভিসা ‘অন অ্যারাইভাল’ পাবেন। এর ফলে ভারতসহ বিভিন্ন দেশের লাখ লাখ প্রবাসী সরাসরি কুয়েতের বিমানবন্দর বা স্থলসীমান্তে পৌঁছে ভিসা নিতে পারবেন, পূর্বের মতো আগে থেকে অনলাইনে আবেদন বা দূতাবাসে যোগাযোগের প্রয়োজন হবে না।
এই নীতি কার্যকর হয়েছে ২০২৫ সালের ১০ আগস্ট রবিবার, যখন কুয়েতের প্রথম উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ ফাহাদ আল-ইউসুফ আল-সাবাহ দেশের সরকারি গেজেট কুয়েত আলিউম-এ নির্দেশনা প্রকাশ করেন। এর মাধ্যমে ২০০৮ সালের পুরনো বিধিনিষেধ বাতিল করা হয়েছে, যা এতদিন জিসিসি প্রবাসীদের কুয়েত ভ্রমণে আলাদা অনুমতির শর্ত বেঁধে দিত।
ভিসা প্রাপ্তির প্রক্রিয়া অনুযায়ী, কুয়েতে পৌঁছেই নির্দিষ্ট ইমিগ্রেশন কাউন্টারে গিয়ে ভিসা নেওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে দুটি শর্ত পূরণ করতে হবে—প্রথমত, ভ্রমণকারীর জিসিসি রেসিডেন্সি পারমিট অন্তত ছয় মাসের জন্য বৈধ থাকতে হবে এবং দ্বিতীয়ত, তার কাছে বৈধ পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় ভ্রমণ নথি থাকতে হবে। শর্তগুলো যাচাই হয়ে গেলে সেখানেই সঙ্গে সঙ্গে পর্যটক ভিসা ইস্যু করা হবে।
সব কিছু যাচাইয়ের পর সেখানেই ভিসা ইস্যু করা হবে। এর ফলে জরুরি বা স্বল্প নোটিশে অবকাশ যাপন, পারিবারিক দেখা-সাক্ষাৎ কিংবা অন্যান্য অ-কর্মসংক্রান্ত ভ্রমণ আরও সহজ হবে।
২০২৪ সালের শেষে জিসিসি অঞ্চলের মোট জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৬১.২ মিলিয়ন, যার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি বিদেশি প্রবাসী। এতদিন জিসিসি নাগরিকরা সহজে এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাতায়াত করতে পারলেও প্রবাসীদের ক্ষেত্রে নানা সীমাবদ্ধতা ছিল, বিশেষত কুয়েতে। নতুন নীতি সেই বাধা দূর করে, আঞ্চলিক পর্যটনকে উৎসাহিত করবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত কেবল ভ্রমণ সহজ করতেই নয়, কুয়েতের অর্থনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৫ সালে পর্যটন খাত থেকে কুয়েতের আয় ১.১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ‘ভিশন ২০৩৫’-এর অধীনে তেলের বাইরে অর্থনৈতিক বহুমুখীকরণ ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন কুয়েতের প্রধান লক্ষ্য।
সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানের মতো অন্যান্য উপসাগরীয় দেশ ইতিমধ্যেই জিসিসি প্রবাসীদের জন্য ভিসা নীতি সহজ করেছে। কুয়েতও সেই ধারায় শামিল হয়ে আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক বিনিময়, টেকসই পর্যটন এবং অর্থনৈতিক একীকরণকে এগিয়ে নিচ্ছে। এর ফলে রিয়াদ, দাম্মাম, মানামা ও দোহা’র মতো নিকটবর্তী শহর থেকে সপ্তাহান্তে বা স্বল্পমেয়াদী অবকাশ যাপন এখন আরও সহজলভ্য হবে।

