ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানি ২৪,০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে : রাজনাথ

নয়াদিল্লি, ১০ আগস্ট : ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রজনাথ সিং রবিবার এক অনুষ্ঠানে ঘোষণা করেছেন যে, ভারতীয় প্রতিরক্ষা খাতের রপ্তানি ₹২৪,০০০ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে, যা দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা ও উদীয়মান শক্তির প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে। তাঁর এই মন্তব্য দেশের প্রতিরক্ষা খাতের সাফল্য ও স্বনির্ভরতার দিকে ইঙ্গিত দেয়, যেখানে ভারতের উৎপাদিত অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম এখন শুধু দেশের প্রয়োজন মেটাচ্ছে না, বরং বিশ্বব্যাপী রপ্তানি হচ্ছে।

রজনাথ সিংয়ের বক্তব্য ভারতের প্রতিরক্ষা খাতের গতিশীলতা ও উন্নতির একটি বড় স্বীকৃতি হিসেবে এসেছে। তিনি বলেছেন, “এখন আমাদের দেশে তৈরি প্রতিরক্ষা সামগ্রী আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলকভাবে বিক্রি হচ্ছে, যা দেশের স্বনির্ভরতা এবং শক্তির প্রমাণ। একসময় আমরা বিদেশি সরবরাহকারীদের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম, কিন্তু এখন ভারতীয় মাটিতে উৎপাদিত প্রতিরক্ষা সামগ্রীই দেশের প্রতিরক্ষা প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হয়েছে।”

ভারত গত কয়েক বছরে প্রতিরক্ষা খাতে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে। একসময় ভারত বিদেশি অস্ত্র, বিমান ও অন্যান্য প্রতিরক্ষা সামগ্রী আমদানি করলেও এখন দেশীয় উৎপাদন থেকে সেই সব সামগ্রী তৈরি হচ্ছে। এই পরিবর্তন শুধু ভারতীয় বাহিনীকে শক্তিশালী করছে না, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও ভারতের উপস্থিতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। রজনাথ সিং বলেন, “আগে আমাদের সব কিছুই বিদেশ থেকে কিনতে হতো, কিন্তু আজকাল আমাদের নিজস্ব প্রযুক্তি, দক্ষতা এবং উদ্ভাবন দ্বারা এই সামগ্রী তৈরি হচ্ছে, যা শুধু ভারতের জন্য নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও রপ্তানি হচ্ছে।”

রপ্তানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভারত প্রতিরক্ষা খাতে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে, যেখানে স্বনির্ভরতার পথে দেশটি সমান্তরালভাবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং বাণিজ্যিক কূটনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

রজনাথ সিং তাঁর বক্তব্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি একটি পরোক্ষ মন্তব্য করেন, যা অনেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য নীতির প্রতি ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, “কিছু মানুষ মনে করেন, ‘সবকিছুর বস তো আমরা’ (আমরাই সবাইকে নেতৃত্ব দিচ্ছি)। তারা ভারতের দ্রুত উন্নতি দেখতে পারে না এবং সেই কারণে বিশ্ব বাজারে ভারতীয় পণ্যের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে প্রতিযোগিতায় ভারতের পণ্য পিছিয়ে পড়বে।”

এটি স্পষ্টভাবে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কের উত্তেজনা নিয়ে একটি মন্তব্য হিসেবে ধরা হচ্ছে। ভারত যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক আরোপকে “অন্যায়, অযৌক্তিক ও অবিচারপূর্ণ” বলে অভিহিত করেছে এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

রজনাথ সিং তাঁর বক্তব্যে একদিকে যেমন ভারতীয় প্রতিরক্ষা খাতের উন্নতির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন, তেমনই তিনি ভারতের অবিচলিত গতিতে এগিয়ে চলার কথা উল্লেখ করে বলেন, “ভারতের অগ্রগতি এখন আর কোনো শক্তি থামাতে পারবে না। আমরা দ্রুত বিশ্ব শক্তি হয়ে উঠছি।”

তিনি আরও বলেন, “আগে আমাদের সব কিছু ছিল বিদেশি, কিন্তু এখন ভারতীয় প্রযুক্তিতে তৈরি অস্ত্র, বিমান, ট্যাংক ও অন্যান্য সামগ্রী আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ভারতের তৈরি পণ্য বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে, যা ভারতকে একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা শক্তিতে পরিণত করেছে।”

ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কের এই উত্তেজনা ছাড়াও, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আরও বড় চ্যালেঞ্জ আসতে পারে। বিশেষ করে, যেখানে ভারতের প্রতিরক্ষা খাতের উদীয়মান শক্তি বিভিন্ন দেশ ও জোটের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নতুন মাত্রা যোগ করছে। রপ্তানি বৃদ্ধি এবং দেশীয় প্রযুক্তির বিকাশের কারণে ভারত নিজেকে ক্রমবর্ধমানভাবে বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে।

ভারত যদি এভাবে এগিয়ে যেতে থাকে, তাহলে আগামী দিনে তা শুধুমাত্র দেশের প্রতিরক্ষা শক্তিকে আরো দৃঢ় করবে না, বরং ভারতীয় অর্থনীতির অন্যান্য খাতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে, প্রতিরক্ষা শিল্পে স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ, গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রেও নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।

রজনাথ সিংয়ের কথায়, “ভারত প্রতিরক্ষা খাতে নিজেকে বিশ্বমানের শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পথে রয়েছে এবং এই দ্রুত অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে। আমরা জানি, আমাদের ভবিষ্যৎ দৃঢ় এবং কোনো শক্তি আমাদের অগ্রযাত্রা থামাতে পারবে না।”

এছাড়া, তিনি বলেন, “ভারত একটি বৃহৎ বৈশ্বিক শক্তি হতে চলেছে এবং এই যাত্রায় দেশীয় উদ্যোগ, প্রযুক্তি এবং কৌশলের ওপর নির্ভরশীলতা ভবিষ্যতের প্রতিরক্ষা নীতির মূল ভিত্তি হয়ে থাকবে।”

ভারতের প্রতিরক্ষা খাতের এই অগ্রগতি দেশটির সামরিক শক্তি, অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক প্রভাব বৃদ্ধির পথ উন্মুক্ত করবে, যা সামগ্রিকভাবে ভারতকে একটি শক্তিশালী বিশ্বশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।