ভারতের আবহাওয়া সতর্কতা: বর্ষার প্রভাবে ভারী বৃষ্টি, বন্যা ও ভূমিধসের আশঙ্কা

নয়াদিল্লি, ১০ আগস্ট : আগামী এক সপ্তাহ ধরে ভারতের উত্তর-পূর্ব এবং পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে অতিভারী বৃষ্টি ও বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য সতর্কতা জারি করেছে, বিশেষত অরুণাচল প্রদেশের জন্য, যেখানে ৮ আগস্ট একক স্থানে ২১ সেন্টিমিটার বা তার বেশি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এই পরিস্থিতি ভারী বৃষ্টির ফলে ভূমিধস এবং নদীগুলির পানি বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

এবারের বর্ষা মৌসুমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টির তীব্রতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আইএমডি জানিয়েছে যে, আগামী ৭ দিন উত্তর-পূর্ব ভারত ও সংলগ্ন পূর্ব ভারতীয় রাজ্যগুলোতে ভারী বৃষ্টি চলতে থাকবে। বিশেষত, ৮ আগস্ট অরুণাচল প্রদেশে অতিভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে একক স্থানে ২১ সেন্টিমিটার বা তারও বেশি বৃষ্টি হতে পারে। অন্যদিকে, অসম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম এবং ত্রিপুরা অঞ্চলে ৬ ও ৭ আগস্ট তীব্র বৃষ্টি হতে পারে, এবং এই অঞ্চলে বন্যা ও ভূমিধসের ঝুঁকি রয়েছে।

এছাড়া, ১২ ও ১৩ আগস্ট আবারও অসম ও মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এই সকল রাজ্যে ভারী বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন নদী ও উপনদী বৃদ্ধি পেতে পারে, ফলে বন্যার পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। রাজ্য সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনকে নদী তীরবর্তী এলাকায় সতর্কতা জারি করতে বলা হয়েছে।

হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডেও আগামী সপ্তাহে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ৭ আগস্ট থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত এই দুই রাজ্যে মাঝে মাঝে ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষত, ১০ আগস্ট থেকে বৃষ্টির তীব্রতা বৃদ্ধি পাবে এবং সেসব অঞ্চলে ভূমিধসের আশঙ্কা থাকতে পারে। এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের, বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলের, আরও সাবধান থাকার জন্য সতর্ক করা হয়েছে।

এছাড়া, পশ্চিমবঙ্গের উপ-পাহাড়ি এলাকায় এবং সিকিমেও ৭ ও ১১ আগস্ট ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এখানে বৃষ্টির তীব্রতা এমন পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে যে, নিম্নভূমি অঞ্চলে জলাবদ্ধতা এবং ভূমিধসের ঘটনা ঘটতে পারে। সিকিমের কিছু এলাকায় ইতোমধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে এবং আগামী কয়েক দিনে এই অঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

দিল্লি ও এর আশেপাশের অঞ্চল (এনসিআর) আগামী কয়েকদিন আংশিক মেঘলা আকাশ এবং হালকা বৃষ্টি বা বজ্রপাতের শিকার হতে পারে। দিল্লিতে ৮ আগস্টের জন্য তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮°C থাকার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, যা স্বাভাবিকের থেকে ২-৪ ডিগ্রি বেশি হতে পারে। বাতাসের গতি থাকবে ১০-১৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। তবে, সন্ধ্যায় বৃষ্টি অথবা বজ্রপাত হতে পারে।

হায়দ্রাবাদে ১০ আগস্ট রবিবার সকাল পর্যন্ত শুকনো আবহাওয়া থাকবে, তবে দুপুরের পর বজ্রসহ তীব্র বৃষ্টি শুরু হতে পারে। শহরটির কিছু এলাকায় ইতোমধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, এবং পূর্বাভাস অনুযায়ী, বৃষ্টির তীব্রতা আরও বাড়তে পারে। ১১ আগস্ট পর্যন্ত হায়দ্রাবাদে ভারী বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গত শনিবার শহরে ১১.৭ সেন্টিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড হয়েছে, যার ফলে অনেক নিম্নভূমি এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতি সড়ক অবরোধ এবং যানজটের সৃষ্টি করেছে, এবং শহরের নাগরিকদের সাবধান থাকতে বলা হয়েছে।

এদিকে, বেঙ্গালুরুতেও ভারী বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে, যা শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি করেছে। আইএমডি জানিয়েছে যে, আগামী ৪৮ ঘণ্টা ধরে এই শহরে ভারী বৃষ্টি চলতে থাকবে। ১০ আগস্ট থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত মেঘলা আকাশ এবং মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। ১১ আগস্ট পর্যন্ত ‘ইয়েলো অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে, এবং শহরের বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি, বেঙ্গালুরুতে বৃষ্টির কারণে অনেক সড়ক তলিয়ে গেছে এবং যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়েছে।

এছাড়া, ভারতের অন্যান্য অংশে যেমন মুম্বাই, চেন্নাই এবং কলকাতা এলাকাতেও কিছুটা বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। পশ্চিম ভারতে ১০ আগস্ট থেকে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষত মহারাষ্ট্রের উপকূলীয় অঞ্চলে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে, প্রশাসন ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে বন্যা, ভূমিধস এবং জলাবদ্ধতার প্রভাব মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। ভারী বৃষ্টির ফলে যদি নদীর পানি বৃদ্ধি পায়, তবে আশ্রয়কেন্দ্র ও সেফটি নেটওয়ার্কের প্রস্তুতি বাড়ানোর জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।

সকলকে আবহাওয়া পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাগুলি মেনে চলার জন্য জনগণকে সতর্ক করা হয়েছে।