ডিমাপুর, ৯ আগস্ট: নাগাল্যান্ডের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা, তুলি সাব-ডিভিশন, লংলেং এবং মন, বৃহস্পতি বার সকালে ব্যাপক বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। ইয়িসেমিওং এলাকায় একটি 66 কেভি ট্রান্সমিশন টাওয়ার ভূমিধসে ভেঙে পড়ে, যার ফলে এই এলাকাগুলোর বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
এ ঘটনা ভোর ৫টার দিকে ঘটে, যখন বৃহত্তর ভূমিধসের কারণে ওই এলাকার পরিবহন ব্যবস্থা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, ভূমিধসের কারণে যে ট্রান্সমিশন টাওয়ারটি ধসে পড়ে, সেটি ছিল এই অঞ্চলের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন। সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, এই ট্রান্সমিশন টাওয়ারটি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান থেকে বিদ্যুৎ পরিবহন করত এবং তার ধ্বংস হওয়া অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থায় মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।
ঘটনার পর, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দ্রুত লাইন প্যাট্রোলিং শুরু করে। দুপুর ৪টার দিকে ত্রুটির স্থান চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। এই সময়ে, বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরুদ্ধার কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মীরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে শুরু করেন।
নাগাল্যান্ড বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা পরিস্থিতি দ্রুত সমাধান করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে এবং বর্তমানে প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন করা হচ্ছে। তবে, ভূমিধসের পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে এখনও সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
অধিকারিকরা আরও জানান, বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরুদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও ম্যান পাওয়ার দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবুও, দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের পুনঃস্থাপন কাজ কিছুটা সময়সাপেক্ষ হতে পারে, এমনটাই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। নাগাল্যান্ড বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা নাথুলাল ইয়াংথু বলেন, “আমরা জোর চেষ্টা করছি যাতে দ্রুততম সময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা যায়, তবে আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পাহাড়ি অঞ্চলের ত্রুটিগুলি সমাধান করতে আরও সময় লাগতে পারে।”
এই বিপর্যয়টি নাগাল্যান্ডের পাহাড়ি জেলা গুলোর জন্য নতুন কোনো বিষয় নয়। প্রতি বছর বর্ষাকালে ভূমিধস এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহে এই ধরনের বিঘ্ন ঘটতে দেখা যায়। বিশেষত, পাহাড়ি এলাকাগুলিতে ট্রান্সমিশন টাওয়ারগুলির নিরাপত্তা এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ধরনের ঘটনা থেকে প্রতিকার পেতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ সরবরাহ অবকাঠামো শক্তিশালী করার কথা ভাবছে।
স্থানীয় জনগণ এই পরিস্থিতিতে কিছুটা বিরক্ত, কিন্তু তারা কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টাকে সমর্থন জানিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু স্থানীয়রা তাদের দুর্ভোগ প্রকাশ করেছে, তবে তাদের আশাবাদী যে বিদ্যুৎ পরিষেবা দ্রুত পুনরুদ্ধার করা হবে। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমরা জানি বর্ষাকালে এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, তবে আশা করি কর্তৃপক্ষ খুব তাড়াতাড়ি সমস্যা সমাধান করবে।”
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, তারা জনসাধারণকে আশ্বস্ত করছে যে বিদ্যুৎ পরিষেবা পুনরুদ্ধার করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে এবং দ্রুততম সময়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হবে। এই সময়ে জনগণকে ধৈর্য ধরার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
এই ঘটনা নাগাল্যান্ডের পাহাড়ি জেলাগুলির প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীলতার প্রমাণ। বিশেষত, বর্ষাকালে ভূমিধসের কারণে বিদ্যুৎ সংযোগের ওপর গুরুতর প্রভাব পড়ে, এবং এই ধরনের ঘটনা নিয়মিত হয়ে উঠছে। কর্তৃপক্ষ আগামী দিনে বিদ্যুৎ অবকাঠামো আরও উন্নত করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে, যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে না হয়।
এ বিষয়ে আরও আপডেটের জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে।

