মুম্বই, ৯ আগস্ট :ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (শারদচন্দ্র পাওয়ার গোষ্ঠী) বা এনসিপি (এসপি)-এর প্রধান শারদ পাওয়ার ফের একবার কড়া ভাষায় জানিয়ে দিলেন যে তিনি কোনও অবস্থাতেই বিজেপির সঙ্গে জোট করা কাউকে সমর্থন করবেন না। সাম্প্রতিক সময়ে নিজের ভাগ্নে ও মহারাষ্ট্রের উপ-মুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার-এর সঙ্গে একাধিক বার একসঙ্গে দেখা যাওয়ার প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক মহলে যে পুনর্মিলনের জল্পনা তৈরি হয়েছিল, তা তিনি একেবারেই নস্যাৎ করেছেন।
শারদ পাওয়ারের এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এল, যখন মাত্র কিছুদিন আগেই, ৩ আগস্ট মুম্বইয়ে অনুষ্ঠিত হয় তাঁর প্রপৌত্র যুগেন্দ্র পাওয়ারের বাগদান অনুষ্ঠান। সেখানে উপস্থিত ছিলেন অজিত পাওয়ার-সহ দুই গোষ্ঠীর একাধিক সদস্য। রাজনৈতিক মহলে জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছিল— পারিবারিক ঘনিষ্ঠতা কি রাজনৈতিক মঞ্চে পুনর্মিলনের ইঙ্গিত দিচ্ছে?
কিন্তু মঙ্গলবার, সংবাদমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে শারদ পাওয়ার স্পষ্ট করে বলেন,“আমি এমন কোনও রাজনৈতিক সমঝোতায় যাব না যেখানে বিজেপির সঙ্গে জোটবদ্ধ কারও সঙ্গে আমাদের সমর্থন থাকতে পারে। যাঁরা ক্ষমতার জন্য আদর্শ বিসর্জন দিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে এনসিপি (এসপি)-র আদর্শিক কোনও মিল নেই।”
শারদ পাওয়ার ও অজিত পাওয়ারের মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নতুন নয়। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে, মহারাষ্ট্র রাজনীতিতে এক বড় ধাক্কা আসে, যখন অজিত পাওয়ার একাধিক বিধায়ক নিয়ে এনসিপি ভেঙে বেরিয়ে গিয়ে বিজেপি-শিবসেনা (শিন্ডে গোষ্ঠী)-র সঙ্গে জোট বেঁধে মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। ওই সময় এনসিপির একাংশ শারদ পাওয়ারের সঙ্গেই থেকে যান এবং পরে নির্বাচন কমিশনের স্বীকৃতি অনুযায়ী দলটি এনসিপি নামে পরিচিত হয়।
অন্যদিকে, অজিত পাওয়ারের নেতৃত্বাধীন অংশ নিজেকে ‘মূল এনসিপি’ বলে দাবি করে এবং বিজেপি নেতৃত্বাধীন মহাযুতি জোটের অংশ হিসেবে সরকারে ভূমিকা পালন করছে।
৩ আগস্টের পারিবারিক অনুষ্ঠানে শারদ ও অজিত পাওয়ারকে পাশাপাশি হাসিমুখে ছবি তুলতে দেখা গেছে। সঙ্গে ছিলেন তাঁদের পরিবারের একাধিক সদস্য। কিন্তু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ভারতের রাজনৈতিক পরিবারে পারিবারিক সম্পর্ক এবং রাজনৈতিক অবস্থান অনেক সময় ভিন্ন হয়।
শারদ পাওয়ারের এক ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলেন, “পারিবারিক সম্পর্ক বজায় রাখা সামাজিক দায় হতে পারে, কিন্তু আদর্শের প্রশ্নে শারদজির অবস্থান অটল। বিজেপির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা কাউকে সমর্থন করা তাঁর পক্ষে কখনওই সম্ভব নয়।”
এই প্রথম নয়। ২০২৫ সালের জুন মাসেও, শারদ পাওয়ার স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছিলেন যে তিনি এমন কাউকে সমর্থন করবেন না, যিনি বিজেপির সঙ্গে জোট গড়েছেন। সেসময়েও পারিবারিক কিছু অনুষ্ঠানে দুই গোষ্ঠীর সদস্যদের একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল এবং রাজনৈতিক সমঝোতার জল্পনা তৈরি হয়েছিল। তবে, শারদ পাওয়ার বারবার তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন— “আমরা আদর্শের রাজনীতি করি, সুবিধাবাদে বিশ্বাস করি না।”
শারদ পাওয়ারের এই বক্তব্যে ভারত জোট-এর (বিজেপি বিরোধী জোট) শরিকরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। কংগ্রেস নেতা অশোক চবন বলেন, “শারদজির এই মন্তব্য আমাদের মধ্যে বিশ্বাস আরও মজবুত করেছে। তিনি বরাবর আদর্শিক রাজনীতির পক্ষে থেকেছেন। বিজেপির মতো বিভাজন সৃষ্টিকারী শক্তির বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান প্রশংসনীয়।”
অন্যদিকে, শিবসেনা (উদ্ধব গোষ্ঠী)-র নেতা সঞ্জয় রাউত কটাক্ষ করে বলেন, “বিজেপি চেয়েছিল এনসিপি-র সবক’টি গোষ্ঠীকে নিজের দলে টানবে। কিন্তু শারদজির মতো ব্যক্তিত্ব কখনও বিক্রি হন না।”
যদিও শারদ ও অজিত পাওয়ারের এক ফ্রেমে আসা রাজনৈতিক আলোচনায় জায়গা করে নিয়েছে, তবে শারদ পাওয়ারের স্পষ্ট বার্তা— আদর্শ বিসর্জন নয়, বরং তা রক্ষা করাই তাঁর রাজনীতির মেরুদণ্ড।
এই মুহূর্তে পুনর্মিলনের কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত। বরং আগামী দিনে মহারাষ্ট্র বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচন ঘিরে এই দুই ‘পাওয়ার’ গোষ্ঠীর মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

