কোকরাঝার, ৭ আগস্ট : বদোল্যান্ড টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল নির্বাচনের দিনগুলো ঘনিয়ে আসছে এবং সেই প্রেক্ষাপটে বিজেপি এই অঞ্চলে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন এবং রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করতে তৎপর হয়েছে। বৃহস্পতিবার, আসাম মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা কোকরাঝারের দুটি বিশাল জনসভায় অংশগ্রহণ করেন, যেখানে তিনি বিজেপির ‘বিজয় সংকল্প যাত্রা’র অধীনে এই এলাকার জনগণের সঙ্গে সংলাপ করেন। নির্বাচনী প্রচারে এক উচ্চ-শক্তির প্রচারণা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়, যা সিএম শর্মার দৃঢ় নেতৃত্ব ও দলের পরিকল্পনার প্রতিফলন ছিল।
ডটমা আসনের রামফালবিল এলাকায় অনুষ্ঠিত একটি জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী শর্মা তার দলের নীতির বিষয়ে গভীর প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, “বিটিআর-এ শান্তি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে, আমাদের সরকার সমস্ত সম্প্রদায়ের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।” মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যটি জনতার মধ্যে প্রশংসার সঞ্চার করেছিল এবং উপস্থিত জনসাধারণের কাছ থেকে সমর্থন লাভ করেছিল। শর্মা আরও বলেন যে, বিজেপি শুধুমাত্র উন্নয়নমূলক কাজ এবং জনগণের কল্যাণে বিশ্বাসী এবং তাই দলটি এই অঞ্চলে তার রাজনৈতিক অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক সকল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত।
বিটিআর-এ বিজেপির রাজনৈতিক কৌশল এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কেও মুখ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যে পরিষ্কার ছিলেন। তিনি জানিয়ে দেন যে বিজেপি আঞ্চলিক দলগুলোর বিরুদ্ধে নয়, বরং কংগ্রেসকে তাদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে মনে করছে। “বিজেপি বিটিআর-এ কোনো দলের বিরুদ্ধে নয়। আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস। এখানে আমাদের কোনো শত্রু নেই। আমরা জনগণের প্রতি ভালোবাসা এবং সম্মানের সঙ্গে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব,” শর্মা বলেন।
মুখ্যমন্ত্রী এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন যে বিজেপি’র লক্ষ্য শুধু সরকারে আসা নয়, বরং মানুষের মধ্যে শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা। তিনি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেন যে বিজেপি কোনও ধরনের ভেদাভেদ বা বিরোধিতার চর্চা করতে চায় না, বরং সকলের জন্য উন্নতি ও সমতা চাইছে।
একই সাথে, শর্মা উল্লেখ করেন যে বিজেপি তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নেওয়া বিটিসিআসনগুলোর সংখ্যা ২১ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবে। এই ঘোষণাটি নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং দলের জোট কৌশলগুলির ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, এটি অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে জোট গঠন এবং নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় কে কিভাবে অবস্থান নেবে তা নির্ধারণ করবে।
সম্প্রতি বিজেপি সাংসদ দিলীপ সাইকিয়ার কিছু মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, যা অনেকেই আদিবাসী সম্প্রদায়ের অধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে মুখ্যমন্ত্রী শর্মা স্পষ্টভাবে দলটির অবস্থান তুলে ধরেন এবং জনগণকে আশ্বস্ত করেন। তিনি বলেন, “আদিবাসী বেল্ট এবং ব্লকগুলি সবসময়ই বিজেপির অধীনে সুরক্ষিত থাকবে। আমরা আসামের আদিবাসী এবং স্থানীয় জনগণের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে আছি।”শর্মা এই বক্তব্যে দলের আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতি একান্ত সমর্থন এবং তাদের অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
বিপুল জনসমর্থন নিয়ে পরবর্তী পর্যায়ে শর্মা ফকিরাগ্রামের পুরানি বাজার ময়দানে আরেকটি জনসভায় উপস্থিত হন, যেখানে জনতা তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। এখানে শর্মা আরও বলেন, বিজেপি শুধু রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা নয়, একটি সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলন হিসেবেও কাজ করছে, যেখানে সকল সম্প্রদায়ের জন্য সমান সুযোগ এবং অধিকার নিশ্চিত করা হবে।
এদিনের প্রচারণা থেকে স্পষ্ট যে, বিজেপি এই নির্বাচনে একটি শক্তিশালী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে আসছে, যা তাদের কৌশল, সমর্থন এবং রাজনৈতিক গেমপ্ল্যানের প্রতি জনগণের আস্থা তৈরি করতে সক্ষম হবে। দলের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, যেখানে তাদের প্রতিশ্রুতি এবং কর্মসূচি জনগণের কাছে পৌঁছানোর জন্য বড় মঞ্চ তৈরি হচ্ছে।
এদিকে, আগামী দিনের প্রচারণায় শর্মা ও বিজেপির অন্যান্য নেতারা আরও জনগণের কাছে পৌঁছানোর পরিকল্পনা করছেন। এই প্রচারণা শুধু রাজনৈতিক জয় লাভের জন্য নয়, বরং একটি দীর্ঘমেয়াদী সমন্বিত উন্নয়নমূলক মডেল তৈরি করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, যা বিটিআর এলাকার বিভিন্ন সম্প্রদায়কে একত্রিত করে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবে।

