নয়াদিল্লি, ৬ আগস্ট : বিজেপি আজ, বুধবার, কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রার বিরুদ্ধে আদালতের অবমাননা মামলা দায়ের করার ঘোষণা করেছে। বিজেপির মতে, প্রিয়াঙ্কা তার ভাই রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের কঠোর মন্তব্যের পর যেভাবে মিডিয়ায় তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, তা আদালতের প্রতি অবমাননা এবং অপ্রত্যাশিত।
বিজেপির সাংসদ মানান কুমার মিশ্র জানিয়েছেন, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী মিডিয়ায় এমন মন্তব্য করেছেন যা আদালতের উদ্দেশ্যকে অপব্যাখ্যা করেছে এবং জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, “প্রিয়াঙ্কা গান্ধী অনেক কথাই বলেছেন, যা আদালতের উদ্দেশ্যের বিরুদ্ধে। আদালতের মন্তব্যের সঠিক ব্যাখ্যা না জানিয়ে তিনি জনসমক্ষে যে ধরনের বিবৃতি দিয়েছেন, তা অবমাননার শামিল। এর বিরুদ্ধে আমরা আদালতে অবমাননা মামলা দায়ের করব।”
এটি এমন একটি সময়ে ঘটছে যখন সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে তার মন্তব্যের জন্য সমালোচনা করেছেন। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে রাহুল গান্ধী তার ভারত জোড়ো যাত্রা চলাকালীন কিছু মন্তব্য করেছিলেন যা সেনাবাহিনী এবং জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে ছিল। এই মন্তব্যগুলোর পর সুপ্রিম কোর্ট রাহুলের বিরুদ্ধে লখনউ কোর্টে চলমান প্রক্রিয়া স্থগিত করেছিল, তবে সেসব মন্তব্যের বিষয়ে তার তীব্র সমালোচনা করে আদালত।
কোর্টের বেঞ্চ, বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এবং অগাস্টিন জর্জ মাসিহ রাহুলকে সতর্ক করে বলেন, “যদি আপনি প্রকৃত ভারতীয় হন, তাহলে এমন মন্তব্য করবেন না। আপনার বক্তব্য জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি ক্ষতিকর হতে পারে।”
এদিকে, রাহুল গান্ধী ও তার সমর্থকরা আদালতের এ ধরনের মন্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। প্রিয়াঙ্কা গান্ধী সেই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, “সম্মানিত বিচারকদের প্রতি আমাদের পূর্ণ শ্রদ্ধা রয়েছে, কিন্তু আদালত জানাবে না কে প্রকৃত ভারতীয় এবং কে নয়। এটি বিরোধী দলের কাজ, তাদের কর্তব্য হল সরকারকে প্রশ্ন করা এবং সেই প্রশ্নের যথার্থ উত্তর দাবি করা।”
প্রিয়াঙ্কা আরও বলেন, “আমার ভাই কখনও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কিছু বলেননি, বরং তিনি সেনাবাহিনীর প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাশীল। তার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
তিনি আরও স্পষ্ট করেন, “আমরা সম্মানিত বিচারকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলছি, তারা এভাবে আমাদের জাতীয় বিষয়ক প্রশ্নের উপর সিদ্ধান্ত নেবেন না, এটি তাদের কাজ নয়।”
এদিকে, কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা, যেমন মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং কেসি ভেনুগোপাল, রাহুল গান্ধীর সমর্থনে দাঁড়িয়ে তার মন্তব্যকে ভুল হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। তারা সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্যকে “অযৌক্তিক” বলে অভিহিত করেছেন এবং দাবি করেছেন যে, একজন বিরোধী নেতা হিসেবে রাহুলের অধিকার রয়েছে সরকারের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার।
সুপ্রিম কোর্টের এই মন্তব্য এবং পরবর্তী রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যে, কংগ্রেস দল এবং বিজেপির মধ্যে রাজনৈতিক চাপানউতোর আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণের প্রতি বিরোধিতা চলতে থাকলেও, বিজেপি তাদের অবস্থান দৃঢ় রেখেছে, বিশেষ করে যখন এটি আদালতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তার সিদ্ধান্তের প্রতি অনুরাগের কথা বলা হচ্ছে।
এই ঘটনাটি দেশের রাজনৈতিক মহলে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে, যেখানে একদিকে আদালতের স্বাধীনতা এবং সম্মান প্রশ্নের মুখে, অন্যদিকে বিরোধী দলগুলোর অধিকারের ক্ষেত্রে আরও চাপ সৃষ্টি হতে পারে। আগামী দিনগুলোতে আদালতের সঙ্গে সম্পর্কিত এই বিতর্ক আরও গভীর হতে পারে, যা ভারতের রাজনৈতিক চিত্রে নতুন মোড় আনবে।

