হিমাচল প্রদেশে টানা ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত জনজীবন, ক্ষয়ক্ষতি ছাড়ালো ১৭৫৩ কোটি

শিমলা, ৫ আগস্ট: হিমাচল প্রদেশে টানা ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে রাজ্যজুড়ে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে মান্ডি জেলায়। মঙ্গলবার সকাল থেকেই প্রবল বর্ষণ শুরু হয়, যার ফলে একাধিক ভূমিধস ও রাস্তা ধসের ঘটনা ঘটে। ভারতীয় আবহাওয়া দফতর পূর্বেই মান্ডি জেলায় ‘অরেঞ্জ অ্যালার্ট’ জারি করেছিল, এবং সেই পূর্বাভাস সত্য প্রমাণিত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, এই বৃষ্টির কারণে মোট ৩৩১টি রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে, যার মধ্যে দুটি জাতীয় সড়ক – এনএইচ-২১ (মান্ডি-কুল্লু) এবং এনএইচ-০০৩ (মান্ডি-ধরমপুর) প্রধান। এই ধসের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা একপ্রকার সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জেলা প্রশাসক অপর্ব দেবগন জানান, যেসব রাস্তা সোমবার পুনরায় খুলে দেওয়া হয়েছিল, মঙ্গলবারের প্রবল বৃষ্টিতে তার অনেকগুলো আবার ধসে পড়েছে। সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সেরাজ ডিভিশন, যেখানে একাই ১২২টি রাস্তা অবরুদ্ধ রয়েছে। অন্যান্য ডিভিশন যেমন থালৌট, কারসোগ, ধর্মপুর, মান্ডি II, পাধর, গোহার, নেরচৌক, সুন্দরনগর ও জোগিন্দরনগরেও বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। শুধু রাস্তা নয়, বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের পরিষেবাতেও মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। একদিনেই বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সংখ্যা ২২ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫৭-এ এবং ৮৬টি জল সরবরাহ প্রকল্প সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়েছে।

এদিকে নিরাপত্তা ও সতর্কতার স্বার্থে সুন্দরনগর উপ-বিভাগের সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি স্কুল মঙ্গলবারের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রবল বৃষ্টিপাতে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর জলাধারে জলস্তর বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যাওয়ায়, কোলড্যাম জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্পিলওয়ে গেট মঙ্গলবার সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে খুলে দিতে হয়েছে। এর ফলে নদীর জলস্তর ৪-৫ মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাণ্ডোহ ড্যাম থেকেও জল ছাড়া শুরু হয়েছে। প্রশাসন হুডার ও মাইকে প্রচার করে স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের নদীর ধার থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা দলগুলো সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী তিন দিন হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড এবং উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন অংশে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। বিশেষ করে উত্তরাখণ্ড ও উত্তর-পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে মঙ্গলবার ও বুধবার বিচ্ছিন্নভাবে ২১ সেন্টিমিটার বা তার বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে। হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা, পাঞ্জাব এবং পূর্ব ও পশ্চিম উত্তরপ্রদেশেও ৫ থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত চলবে বলে জানিয়েছে আইএমডি। একইসঙ্গে দক্ষিণ ভারতের কেরল ও তামিলনাড়ুর ঘাট অঞ্চলেও আগামী পাঁচ দিন ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে মেঘভাঙা বৃষ্টি, ভূমিধস এবং আকস্মিক বন্যার ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দ্রুত বেড়ে চলেছে। হিমাচল প্রদেশের রাজস্ব দফতরের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বর্ষা মৌসুমে রাজ্যে ১০৬ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং রাজ্যের মোট আর্থিক ক্ষতি দাঁড়িয়েছে ১,৭৫৩.৬৩ কোটি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের এই ক্রমাগত আঘাতে রাজ্যের পরিকাঠামো ভেঙে পড়ছে, প্রশাসন ও দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী দিনরাত কাজ করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলা, সতর্কতা অবলম্বন করা এবং বিপজ্জনক এলাকায় না যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। বৃষ্টির পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী কয়েক দিন পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে, ফলে পাহাড়ি এলাকাগুলিতে ঝুঁকি আরও বাড়বে। প্রশাসনের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সহযোগিতা ও সতর্কতা এই দুর্যোগ মোকাবেলায় অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে।