অনীল আম্বানির বিরুদ্ধে ১৭,০০০ কোটির ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে তদন্তে নেমেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট

নয়াদিল্লি, ৫ আগস্ট : মঙ্গলবার সকালে নয়াদিল্লিতে রিলায়েন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান অনীল আম্বানিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অভিযোগ, ইয়েস ব্যাংকসহ একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংক থেকে নেওয়া বিপুল অঙ্কের ঋণ ভুলভাবে ব্যবহার করেছেন তিনি ও তার সংস্থাগুলি। শুধুমাত্র ইয়েস ব্যাংক থেকেই ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে নেওয়া ৩,০০০ কোটির ঋণ বেআইনিভাবে অন্যান্য সংস্থায় স্থানান্তর করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।

ইডি সূত্র জানিয়েছে, রিলায়েন্স হাউজিং ফিনান্স ও রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস-সহ অনীল আম্বানির মালিকানাধীন একাধিক কোম্পানির বিরুদ্ধে একটি সুপরিকল্পিত প্রতারণার চক্রান্তের অভিযোগ উঠেছে। সংস্থাগুলি দুর্বল আর্থিক প্রোফাইল থাকা সত্ত্বেও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে, একই পরিচালকের নামে একাধিক কোম্পানি খোলা হয়েছে, শেল কোম্পানির মাধ্যমে টাকা ঘুরপথে সরানো হয়েছে এবং জাল গ্যারান্টির সাহায্যে নতুন ঋণ নেওয়া হয়েছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রেই ঋণ অনুমোদনের আগেই টাকা ছাড় হয়ে গেছে বলে ইডি-এর দাবি।

ইতিমধ্যেই তদন্তে বেশ কিছু আপত্তিকর নথি ও ডিজিটাল প্রমাণ হাতে এসেছে বলে জানিয়েছে সংস্থা। ৫০টিরও বেশি কোম্পানির নথি, ৩৫টি স্থানে তল্লাশি এবং অন্তত ২৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর এই তথ্য উঠে এসেছে। ইডি আরও জানিয়েছে, একাধিক ব্যাংকের কাছে অনীল আম্বানির সংস্থাগুলিকে দেওয়া ঋণের অনুমোদন প্রক্রিয়া, গ্যারান্টি, ডিফল্ট ও ঋণ পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছে।

এই মামলায় পার্থ সারথি বিশ্বাস নামে একজনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বিসওয়াল ট্রেডলিঙ্ক প্রাইভেট লিমিটেড-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং ₹৬৮ কোটির জাল ব্যাংক গ্যারান্টির মামলায় ধরা পড়েছেন। এছাড়াও, রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস-এর বিরুদ্ধে আরও একটি বড় প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে, যার পরিমাণ ১৪,০০০ কোটি। স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া এই ঋণ অ্যাকাউন্টকে ‘ফ্রড’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং সিবিআইকে রিপোর্ট পাঠানোর কথা ভাবছে।

এসবিআই জানিয়েছে, রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস একাধিক গ্রুপ কোম্পানির মাধ্যমে টাকা ঘুরিয়ে ব্যবহারের মাধ্যমে হিসেব গোপন করেছে এবং বইপত্রে অনিয়ম করেছে। তারা বলছে, ঋণের অর্থ নির্ধারিত খাতে ব্যবহার না করে একটি জটিল ফান্ড মুভমেন্ট চক্র তৈরি করা হয়েছে। অনীল আম্বানির আইনজীবীরা এই অভিযোগকে ‘একতরফা সিদ্ধান্ত’ বলে অভিহিত করেছেন এবং জানিয়েছেন, তিনি এই অভিযোগে ‘বিস্মিত’ হয়েছেন।

অনীল আম্বানির বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা তদন্তাধীন, যেখানে কানারা ব্যাংকের সঙ্গে ১,০৫০ কোটির প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে, বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবী জানিয়েছে, অনীল আম্বানি ও রিলায়েন্স হোম ফিনান্স-এর শীর্ষ কর্মকর্তারা মিলে ৫,০০০ কোটিরও বেশি টাকা আত্মসাৎ করেছেন, যা ‘ঋণ’ দেখিয়ে ঘনিষ্ঠ সংস্থায় স্থানান্তর করা হয়েছে। সেবী এই মামলায় অনীল আম্বানিকে ২৫ কোটির জরিমানা এবং সংস্থাকে ₹৬ লাখ জরিমানা করেছে।

এক সময় বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তিদের তালিকায় থাকা অনীল আম্বানির সাম্রাজ্য এখন বিভিন্ন প্রতারণা, ঋণ খেলাপি এবং আর্থিক অনিয়মের কারণে ভেঙে পড়েছে। বর্তমানে ইডি, সিবিআই ও সেবী —তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় সংস্থা একযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। এই মামলার পরবর্তী অগ্রগতি দেশের আর্থিক ও শিল্পক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।