নয়াদিল্লি, ৫ আগস্ট: ভারতের ৭৯তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে দিল্লির ঐতিহাসিক লালকেল্লায় যখন কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, ঠিক সেই সময়ে পাঁচজন বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করেছে দিল্লি পুলিশ। সোমবার (৪ আগস্ট) ঘটনাটি ঘটেছে লালকেল্লার প্রবেশদ্বারের কাছে, যখন ওই পাঁচ যুবক বিনা অনুমতিতে এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন বলে অভিযোগ।
উত্তর দিল্লির ডেপুটি কমিশনার অব পুলিশ (ডিসিপি) রাজা বন্থিয়া সাংবাদিকদের জানান, আটককৃত ব্যক্তিদের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। নিরাপত্তা বাহিনী সন্দেহজনকভাবে তাদের ঘোরাফেরা করতে দেখে থামায় এবং জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা কেউই লালকেল্লায় প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় বৈধ পাস দেখাতে পারেননি।
জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ জানতে পারে, ওই পাঁচজন যুবক কয়েক মাস আগে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছেন এবং দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন। তারা জানান, তারা কেবলমাত্র লালকেল্লা দেখতে গিয়েছিলেন এবং জানতেন না যে ১৫ জুলাই থেকে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে লালকেল্লা সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ডিসিপি রাজা বন্থিয়া বলেন, “তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশি পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে তাদের উদ্দেশ্য ও পেছনের কোনো ষড়যন্ত্র আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের পর আপাতত তাদের বিরুদ্ধে কোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।”
ঘটনার পরই বিষয়টি ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস-এ জানানো হয়েছে এবং বৈধ কাগজপত্র না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর (ডিপোর্টেশনের) প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে, একই দিনে নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে লালকেল্লায় দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল একটি নিরাপত্তা মহড়া (মক ড্রিল) চালায়। ওই মহড়ায় স্পেশাল সেলের সদস্যরা একটি ডামি বোমা নিয়ে প্রবেশ করতে সক্ষম হন, যা পরবর্তীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার বড় ফাঁকফোকর হিসেবে চিহ্নিত হয়। ঘটনাটির পরপরই সাতজন পুলিশ কর্মীকে গাফিলতির অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, স্বাধীনতা দিবসের আগে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নিরাপত্তা মহড়া চালানো হচ্ছে যাতে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকি মোকাবিলা করা যায়। এই মহড়া থেকে শিক্ষা নিয়ে আরও কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, প্রতি বছরের মতো এবছরও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ১৫ আগস্ট লালকেল্লা থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। এ উপলক্ষে গোটা এলাকা নিরাপত্তার চাদরে মোড়া হয়েছে। স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে চলছে কড়া নজরদারি ও নজরদারি ড্রোন তৎপরতা।
এমন পরিস্থিতিতে পাঁচ বিদেশি নাগরিকের লালকেল্লার প্রবেশের চেষ্টাকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনো ঘটনাটি ঘিরে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

