ভুবনেশ্বর, ৪ আগস্ট: ওড়িশা সরকার সম্প্রতি এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার মাধ্যমে রাজ্যের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারী কর্মীদের রাতের শিফটে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নারীদের কর্মসংস্থান ও ক্ষমতায়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে, এই অনুমতির সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে একগুচ্ছ কঠোর সুরক্ষা প্রোটোকল ও নিয়মাবলি, যাতে নারীরা কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ, সম্মানজনক এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কাজ করতে পারেন।
শ্রম দফতরের জারি করা নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, নারীদের রাতের শিফটে কাজ করতে হলে অবশ্যই তাদের লিখিত সম্মতি গ্রহণ করতে হবে। কর্মস্থলে কমপক্ষে তিনজন নারী কর্মী একসাথে উপস্থিত থাকতে হবে এবং একজন নারী সুপারভাইজার থাকাও বাধ্যতামূলক। এছাড়া কর্মীদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে জিপিএস ট্র্যাকিং সুবিধাসহ পরিবহন ব্যবস্থা রাখতে হবে, এবং পরিবহনের গাড়ির চালকদের পুলিশ যাচাই বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কাজের পরিবেশে পর্যাপ্ত আলো, সিসিটিভি নজরদারি, নিরাপদ পানীয় জল, পরিষ্কার শৌচাগার এবং ১৮১ (নারী সহায়তা হেল্পলাইন) ও ১৮০০-৩৪৫-৬৭০৩ (শ্রম দফতরের হেল্পলাইন) নম্বর দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, কোনো নারী কর্মীকে টানা দিন ও রাতের শিফটে কাজ করানো যাবে না এবং শিফট পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অন্তত ৮ ঘণ্টার বিশ্রাম সময় নিশ্চিত করতে হবে। কর্মস্থলে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ২০১৩ সালের প্রাসঙ্গিক আইনের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে। অপ্রাপ্তবয়স্কদের রাতের শিফটে নিয়োগ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি, রাতের শিফটে নারী কর্মী নিয়োগকারী প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে নির্ধারিত ফর্মে স্ব-প্রমাণীকরণপত্র শ্রম দফতরের অনলাইন পোর্টালে জমা দিতে হবে। এসব শর্ত লঙ্ঘন করলে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং ওড়িশা দোকান ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান আইন, ১৯৫৬-এর ৩৫ নম্বর ধারায় জরিমানা ধার্য করা হবে।
ওড়িশা সরকারের এই পদক্ষেপ শুধু নারী কর্মীদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগই তৈরি করছে না, বরং রাজ্যের অর্থনীতিকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমবায়মূলক করে তুলছে। এটি রাজ্যকে ‘ইজ অফ ডুয়িং ব্যবসা’-এর দিক থেকেও এগিয়ে দেবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সমাজ ও শিল্পমহলে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়েছে। যদিও বাস্তবায়নে সফলতা অর্জনের জন্য নিয়মগুলোর যথাযথ বাস্তব প্রয়োগ ও নজরদারি নিশ্চিত করা জরুরি। নারী কর্মীদের নিরাপত্তা ও অধিকার সুরক্ষিত রেখে কাজের সুযোগ সম্প্রসারণের এই প্রয়াস ভবিষ্যতে অন্যান্য রাজ্যগুলোর জন্যও একটি মডেল হয়ে উঠতে পারে।

