নয়াদিল্লি, ৪ আগস্ট : প্রতিষ্ঠানটির এক বিবৃতির মাধ্যমে জানা গেছে, এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ রবিবার একটি দিল্লি-বাউন্ড ফ্লাইট বাতিল করেছে, যার কারণ হিসেবে তারা “কেবিনে উচ্চ তাপমাত্রা” উল্লেখ করেছে। ভুবনেশ্বর থেকে দিল্লি যাওয়ার জন্য নির্ধারিত ফ্লাইট এআই৫০০, যে সময়টিতে যাত্রীদের সফর শুরু হওয়ার কথা ছিল, ঠিক তার আগেই এই প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে বাতিল করা হয়। তবে, এই ফ্লাইটের যাত্রী সংখ্যা, বিমানের ধরন বা ফ্লাইটের নির্ধারিত উড়ান সময় সম্পর্কে কোনো বিস্তারিত তথ্য প্রদান করা হয়নি।
ফ্লাইটটি বাতিল হওয়ার পর, এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে যে, তাদের ভুবনেশ্বর বিমানবন্দর টিম উক্ত যাত্রীদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করছে যাতে তারা তাদের গন্তব্য দিল্লিতে পৌঁছাতে পারেন। “আমরা এই অস্বস্তির জন্য দুঃখিত এবং যাত্রীদের সুবিধার্থে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি,” বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষের জানানো তথ্য অনুযায়ী, ফ্লাইট এআই৫০০-এর জন্য যে বিমানটি ব্যবহার করার কথা ছিল, তা ছিল একটি এয়ারবাস এ৩২১। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী, এই ফ্লাইটটি ১২:৩৫ PM-এ ভুবনেশ্বর থেকে উড়ার কথা ছিল এবং দিল্লি পৌঁছানোর সময় ছিল ২:৫৫ PM। তবে, বিমানের কেবিনে তাপমাত্রার সমস্যা হওয়ায় তা বাতিল করা হয়।
এটি ছিল এয়ার ইন্ডিয়ার জন্য একই দিনে দ্বিতীয় ত্রুটির ঘটনা। এর আগে, এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ জানায় যে, সিঙ্গাপুর থেকে চেন্নাই যাওয়ার জন্য নির্ধারিত ফ্লাইট এ৩৪৯-ও বাতিল করা হয়েছে। এই ফ্লাইটটি বাতিল হওয়ার কারণ ছিল একটি রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন হওয়া। ফলে, ফ্লাইটের যাত্রীরা সঠিক সময়ে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি।
এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষের এই ধরনের একাধিক ঘটনা সম্প্রতি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষত, গত সপ্তাহে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন কর্তৃক এয়ার ইন্ডিয়া সংক্রান্ত একটি নিরীক্ষায় প্রায় ১০০টি লঙ্ঘন এবং বিশেষ পর্যবেক্ষণ শনাক্ত করা হয়, যার মধ্যে কিছু ছিল অত্যন্ত গুরুতর নিরাপত্তা ঝুঁকি। জানা গেছে, এসব লঙ্ঘনের মধ্যে ৭টি লেভেল-১ লঙ্ঘন ছিল, যা তৎকালীন নিরাপত্তা ঝুঁকির আওতায় পড়েছিল এবং তাৎক্ষণিকভাবে সংশোধনের জন্য এয়ারলাইনের কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছিল।
এর আগে, গত জুন মাসে, এয়ার ইন্ডিয়া-এর একটি বোয়িং ৭৮৭-৮ বিমান লন্ডন গ্যাটউইক থেকে উড়ানের কিছু মিনিটের মধ্যেই একটি মেডিকেল কলেজের উপর বিধ্বস্ত হয়ে ২৪১ জন যাত্রী এবং ১৯ জন ভূ-স্থানীয় ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে। এই দুর্ঘটনার পর, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উড়োজাহাজের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর ব্যাপকভাবে আলোচনা হয়, বিশেষত এয়ার ইন্ডিয়ার অবস্থা নিয়ে।
এদিকে, সম্প্রতি ভারতের একটি অনলাইন প্যান-ইন্ডিয়া জরিপে দেখা গেছে যে, ৭৬ শতাংশ মানুষ মনে করেন, দেশের বেশিরভাগ এয়ারলাইন নিরাপত্তার চেয়ে অনেক বেশি মনোযোগ দেয় প্রচার বা বিজ্ঞাপনে। লোকালসার্কেলস নামক একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের করা এই জরিপে ৬৪ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তারা গত তিন বছরে অন্তত একবার এমন দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন যা ছিল দৃঢ় অবতরণ, ওঠানামা বা বিমানে চলমান কোন ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি।
এয়ার ইন্ডিয়ার প্রতি এই ধরনের অভিযোগ এবং ঘটনাগুলির পরিপ্রেক্ষিতে, ভারতীয় উড়োজাহাজ নিরাপত্তা প্রক্রিয়াগুলি নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে চরম উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষত, একটি প্রাথমিক ধারণা উঠে এসেছে যে, অনেক ভারতীয় এয়ারলাইন্স নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরিবর্তে তাদের প্রচার ও বিজ্ঞাপনে বেশি ব্যয় করছে, যার কারণে সময়মতো রক্ষণাবেক্ষণ এবং যাত্রী নিরাপত্তা সমস্যাগুলির উপর যথাযথ নজর দেওয়া হচ্ছে না।
এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ যদি তাদের বিমানের কেবিনে তাপমাত্রার মতো প্রযুক্তিগত সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে না পারে, তাহলে এ ধরনের ঘটনা যাত্রীদের মধ্যে আরও ক্ষোভ ও উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে। পাশাপাশি, নিরাপত্তা নজরদারির মধ্যে আরো মনোযোগ দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যাপক পরিবর্তন এবং আধুনিকীকরণের প্রয়োজনীয়তা খুবই স্পষ্ট এবং এয়ার ইন্ডিয়ার কর্তৃপক্ষের পক্ষে এটিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধান করা জরুরি।

