অপারেশন সিঁদুর ওপর তুমুল বিতর্ক, বিদেশ মন্ত্রী জয়শঙ্করের উদ্বোধনী বক্তব্য

নয়াদিল্লি, ৩০ জুলাই : ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক এবং কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে বিতর্কের মধ্যে, পার্লামেন্টের মনসুন সেশন-এ অপারেশন সিঁদুর নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চলছে। এ হামলাটি ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর পাল্টা আক্রমণ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, যা ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পাহালগামে ঘটে, যেখানে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিরীহ ভারতীয় নাগরিক নিহত হন। ভারতের বিদেশ মন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর এই বিতর্কের শুরুতেই বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেছেন, “পাহালগাম সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমে সন্ত্রাসীরা ভারতের জন্য একটি লালরেখা অতিক্রম করেছে। আমরা তাদের উপযুক্ত জবাব দিয়েছি।”

এ ছাড়া, রাজ্যসভার নেতৃস্থানীয় সদস্য জেপি নাড্ডা আজ এই বিতর্কে অংশ নিতে পারছেন এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ সংসদের শেষ পর্যায়ে বক্তৃতা দেবেন। সরকারের পক্ষ থেকে আশা করা যাচ্ছে, যে, আজকের বক্তৃতার মাধ্যমে এই আলোচনার সমাপ্তি হবে।

অপারেশন সিঁদুর, ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর একটি যৌথ অভিযান, যার উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানে অবস্থিত সন্ত্রাসী লঞ্চ প্যাডগুলি ধ্বংস করা। ২২ এপ্রিলের পাহালগাম সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতীয় সেনাবাহিনী ২২ মিনিটের মধ্যে পাকিস্তানের বিভিন্ন কোণায় সন্ত্রাসী শিবিরগুলি লক্ষ্য করে হামলা চালায়।

মঙ্গলবার, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার বক্তৃতায় বলেন, “ভারতীয় সেনাবাহিনী পেশাদারিত্বের সাথে ২২ মিনিটে পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে সন্ত্রাসী লঞ্চ প্যাডগুলো ধ্বংস করেছে এবং এতে প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছে। এটি ভারতের সামরিক শক্তির এক উজ্জ্বল উদাহরণ।” তিনি বলেন, পার্লামেন্ট অধিবেশনটি একটি “বিজয় উৎসব” হিসেবে চিহ্নিত হওয়া উচিত, যেখানে ভারতের শক্তি এবং জাতীয় ঐক্য উদযাপন করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী মোদী আরও বলেন, “এটা এমন এক মুহূর্ত যেখানে আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি এবং বিশ্বের কাছে আমাদের সামরিক শক্তি প্রমাণিত করেছি। কিন্তু কিছু রাজনৈতিক দল এখনও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে চায় এবং দেশপ্রেমের উপর রাজনীতি করছে।”

প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার পরে, পার্লামেন্টারি অ্যাফেয়ার্স মিনিস্টার কিরেন রিজিজু বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টভাবে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেছেন, কিন্তু কিছু রাজনৈতিক দল এখনও সস্তা রাজনীতি করছে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করা উচিত।”

রাজ্যসভার অধিবেশনেও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে বিভাজন ছিল। বিরোধী সদস্যরা বিহারের নির্বাচনী তালিকার বিশেষ সংস্করণের জন্য আলোচনা দাবি করে। তারা সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে কথা বলে, বিশেষ করে কাশ্মীরের পরিস্থিতি ও সন্ত্রাসী হামলার পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে।

অপারেশন সিঁদুর নিয়ে ভারতীয় সরকারের পদক্ষেপগুলি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একাধিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এসব দেশও ভারতীয় সেনাবাহিনীর পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়েছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য দায়ী করে আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি করছে।

ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের এই উত্তেজনাপূর্ণ সময়ে, অপারেশন সিঁদুর মাধ্যমে ভারত এক বার্তা পাঠিয়েছে যে তারা পাকিস্তানের মাটি থেকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য কোনও প্রকার সহনশীলতা দেখাবে না।

পাহালগাম সন্ত্রাসী হামলার পর, বিরোধী দলগুলো পাকিস্তানের প্রতি সরকারের সহানুভূতি এবং সেই সম্পর্কের প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কংগ্রেসের একটি অংশ দাবি করেছে যে, পাকিস্তান সম্পর্কে সরকারের অবস্থান খুবই আপোষকামী এবং দেশটির প্রতি সমঝোতা ততটা দৃঢ় নয়। তারা আরও অভিযোগ করেছে যে, সরকারের উত্সাহিত বক্তব্যের মাধ্যমে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে এবং অপারেশন সিঁদুর এমন এক মুহূর্তে পরিচালিত হয়েছে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োজন ছিল।

আজ রাজ্যসভায় আলোচনা অব্যাহত রয়েছে, যেখানে জেপি নাড্ডা এই বিতর্কের পরবর্তী অংশে বক্তৃতা দিতে প্রস্তুত। এদিকে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ সম্ভবত আজকের দিনের শেষে সমাপনী বক্তৃতা দেবেন, যা পার্লামেন্টে এই বিতর্কের অবসান ঘটাবে।

রাজ্যসভার আজকের সেশনে, অপারেশন সিঁদুর রাজনৈতিক এবং সামরিক দৃষ্টিকোণগুলির পাশাপাশি ভারতীয় সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও আলোচিত হতে পারে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভূমিকা এবং আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের কৌশল এবং প্রতিবাদী পদক্ষেপগুলি নিয়ে গভীর আলোচনা চলবে।

লোকসভা এবং রাজ্যসভায় অপারেশন সিন্ধু নিয়ে তীব্র আলোচনা অব্যাহত থাকবে, এবং এতে সরকারের রাজনৈতিক এবং সামরিক দৃষ্টিভঙ্গির উপর বিস্তারিতভাবে আলোকপাত করা হবে। তবে, বিশেষভাবে বিরোধী দলগুলি সরকারকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আরও বেশি প্রমাণ উপস্থাপনের জন্য চাপ দিচ্ছে।

অপারেশন সিঁদুর পরবর্তী সময়ে, ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্য আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে এবং এর ফলে কাশ্মীরের শান্তি এবং নিরাপত্তার পরিবেশে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসতে পারে।

পাহালগাম সন্ত্রাসী হামলার পর অপারেশন সিঁদুর ভারতের সামরিক শক্তি এবং জাতীয় ঐক্যের এক নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে। তবে, সরকারের উদ্যোগের প্রতি বিরোধীদের কঠোর সমালোচনা এবং আন্তর্জাতিক স্তরে পাকিস্তানকে নিয়ে উত্তেজনা এক নতুন দিক নির্দেশ করেছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ভবিষ্যৎ।