ভারতের একাধিক রাজ্যে প্রবল বর্ষার পূর্বাভাস

নয়াদিল্লি, ৩০ জুলাই : ভারতের একাধিক রাজ্যে ফের সক্রিয় হয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু। এর প্রভাবে পূর্ব রাজস্থান, পশ্চিম মধ্যপ্রদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের বহু জেলায় আগামী এক সপ্তাহ জুড়ে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর।

বিশেষ করে ৩০ জুলাই , পূর্ব রাজস্থান ও পশ্চিম মধ্যপ্রদেশে বিচ্ছিন্নভাবে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া দপ্তর। এই পরিস্থিতি চলবে ১ আগস্ট পর্যন্ত। সেইসঙ্গে, এই অঞ্চলের জন্য জারি হয়েছে লাল সতর্কতা । প্রবল বৃষ্টির কারণে জলের স্তর হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় বন্যা, জলাবদ্ধতা ও ট্রাফিক জটের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আগামী সাত দিন ধরে টানা ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর। বিশেষ করে পাহাড়ি রাজ্যগুলিতে বৃষ্টিপাতের তীব্রতা অত্যন্ত বেশি হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে। অরুণাচল প্রদেশে ১ থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত এবং অসম ও মেঘালয়ে ৩১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত অত্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এসব অঞ্চলের ভৌগোলিক অবস্থান পাহাড়ঘেরা হওয়ায় প্রবল বৃষ্টির ফলে ভূমিধস ও হঠাৎ বন্যার মতো বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। প্রশাসনকে আগেভাগে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদেরও সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে আবহাওয়া দপ্তর নিয়মিত আপডেট দিচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গের সাব-হিমালয়ান অঞ্চল এবং সিকিমে ২ থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বিহার রাজ্যের পশ্চিম চম্পারণ, মুজফ্ফরপুর, সিভান, সারণ, বেগুসরাই, মধেপুরা, পাটনা সহ একাধিক জেলায় ৩ ও ৪ আগস্ট বজ্রপাতসহ ভারী বৃষ্টি হতে পারে।

হিমাচল প্রদেশে কাংড়া, মান্ডি, কুল্লু ও শিমলা জেলায় অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এই জেলাগুলিতে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, পাহাড়ি এলাকায় এই বৃষ্টিপাত ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যার কারণ হতে পারে।

উত্তরাখণ্ডের কুমায়ুন অঞ্চল (নৈনিতাল, চম্পাওয়াত, পিথোরাগড়, বাগেশ্বর) এর জন্য অরেঞ্জ অ্যালার্ট, এবং গড়ওয়াল অঞ্চল (টেহরি, পৌরি, দেরাদুন)-এর জন্য ইয়েলো অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।

মধ্যপ্রদেশে ৩১ জুলাই পর্যন্ত অত্যন্ত ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। রাজস্থানে ২৭ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত পুরোপুরি সক্রিয় মনসুন দেখা গেছে। পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রাজস্থানে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনায় জয়পুর, কোটা, উদয়পুর-এ জলাবদ্ধতা ও যানজটের সম্ভাবনা রয়েছে।

উত্তরপ্রদেশে ২৯ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত একাধিক জেলায় ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা করা হয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের মীরাট, গাজিয়াবাদ, নয়ডা, আগ্রা, ঝাঁসি, জালাউন, হামিরপুর, মহোবা, ললিতপুর সহ মোট ৪৬টি জেলার জন্য অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এই এলাকায় বজ্রবিদ্যুৎ সহ প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

দক্ষিণ উপদ্বীপীয় ভারত তথা তামিলনাড়ু, কেরল, কর্ণাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশ-এ আগামী ছয়-সাত দিন বর্ষার তীব্রতা কম থাকবে। মধ্য ভারতের কিছু অঞ্চলেও ১ আগস্টের পর বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

দিল্লি ও এনসিআর অঞ্চলে আগামী কয়েকদিন ধরে আবহাওয়া বেশ অনুকূল থাকবে বর্ষার জন্য। ৪ আগস্ট পর্যন্ত এই অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর। ৩০ ও ৩১ জুলাই-তে আকাশ থাকবে মেঘলা এবং সেই সঙ্গে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি, বজ্রপাত ও বজ্রঝড় হতে পারে। এই সময়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকবে ৩০ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের তুলনায় ২ থেকে ৪ ডিগ্রি কম।

এরপর ১ ও ২ আগস্ট-এ আবহাওয়া কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে। আকাশ থাকবে আংশিক মেঘলা, এবং গর্জনের সঙ্গে হালকা বৃষ্টিপাত হতে পারে। তাপমাত্রা বেড়ে হতে পারে ৩৩ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তবে তা এখনো সহনীয় মাত্রায় থাকবে। বাতাসের গতি থাকবে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১৫ কিমির মধ্যে। এই বৃষ্টিপাত শহরের গরম থেকে সাময়িক স্বস্তি দিলেও, জলজট ও যানজটের সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে নাগরিকদের সতর্ক ও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় পূর্ব রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশের কিছু অঞ্চলে ২১ সেমি বা তার বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ, অসম, মেঘালয়-এর বিচ্ছিন্ন এলাকায় ৭–২০ সেমি বৃষ্টি হয়েছে।

পূর্ব উত্তরপ্রদেশ, ছত্তিসগড়, বিহার, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ, অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মধ্য মহারাষ্ট্র ও দক্ষিণ কর্ণাটক-এর কিছু জায়গায় ৭–১১ সেমি বৃষ্টিপাত হয়েছে।

মৌসুমবিদদের মতে, বঙ্গোপসাগরের ওপর একটি নতুন নিম্নচাপ তৈরি হওয়ায় ভারী বৃষ্টির তীব্রতা বাড়ছে। এই পরিস্থিতি ৩১ জুলাই পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এরপর কিছু অঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ কমবে। স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশিকা ও আইএমডি-এর নিয়মিত আপডেট অনুসরণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এই মুহূর্তে, দেশের বহু অংশে মনসুনের প্রভাবে জনজীবন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রশাসনকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

————-