ইম্ফল, ৩০ জুলাই : মণিপুরে সন্ত্রাসবাদ ও সংঘটিত অপরাধ চক্রের বিরুদ্ধে জোরদার অভিযান চালাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। ২৮ ও ২৯ জুলাই ইম্ফল পূর্ব ও পশ্চিম জেলায় ধারাবাহিক অভিযানে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন কাংলেইপাক কমিউনিস্ট পার্টি-এর বিভিন্ন শাখার সক্রিয় সদস্যরাও রয়েছেন। অভিযানের সময় গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, চাঁদাবাজির প্রমাণ এবং মোবাইল ফোন।
প্রথম অভিযানে, মোহাম্মদ সামির খান ওরফে ইনাও (বয়স ৪৫) নামক এক ব্যক্তিকে ইম্ফল পূর্ব জেলার কাইরাং উমাং মায়াই লেইকাই এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। জানা গেছে, সে ‘নিংলমাচা’ নামে একটি কুখ্যাত অপরাধচক্রের সক্রিয় সদস্য। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে: একটি .৩২ ক্যালিবার পিস্তল (ম্যাগাজিন ছাড়া), একটি ৯ এমএম পিস্তলের ম্যাগাজিন, একটি .৩২ ক্যালিবার গুলি, দুটি ৯ এমএম গুলি, একটি মোবাইল ফোন।
নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, এই অস্ত্রগুলি দিয়ে সে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল, যার মধ্যে চাঁদাবাজি অন্যতম।
একই দিনে, অপর একটি পৃথক অভিযানে থিয়াম বয়নাও সিংহ (৪৭) নামক এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। সে কেপিসি (পিপলস ওয়ার গ্রুপ)-এর সক্রিয় ক্যাডার বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাকে ইম্ফল পূর্বের হাওকিপ ভেং, মহাবলী নদীর তীরবর্তী এলাকা থেকে ধরা হয়। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি আধার কার্ড। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
পরদিন, ২৯ জুলাই, নিরাপত্তা বাহিনী যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে কেপিসি (মিলিটারি অ্যান্ড ফরেন লাইজন)-এর দুই সক্রিয় ক্যাডারকে গ্রেফতার করে।
প্রথম অভিযানে খৈদেম নংপোকনগবা সিংহ, ইম্ফল পূর্বের লামলাই মায়াই লেইকাই-এর বাসিন্দাকে নংগাদা আওয়াং লেইকাই এলাকা থেকে আটক করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, সে ১০ জুলাই রাতে নাপেট পাল্লি গ্রামে ঘটে যাওয়া গুলির ঘটনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিল। এছাড়া, সে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের জন্য অস্ত্র পরিবহণ ও গোপন স্থানে লুকিয়ে রাখার কাজে লিপ্ত ছিল।
তার জবানবন্দির ভিত্তিতে দ্বিতীয় অভিযানে থোনাওজাম অশোককুমার সিংহ, থোউবল জেলার লাইফ্রাকপাম মামাং লেইকাই-এর বাসিন্দাকে ইম্ফল পশ্চিম জেলার সিংজামেই থানার অধীনে লাংথাবাল কুঞ্জা এলাকা থেকে থোনাওজাম অশোককুমার সিংহকে গ্রেফতার করে নিরাপত্তা বাহিনী। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে একটি ৯ এমএম পিস্তল (ম্যাগাজিনসহ), দুটি মোবাইল ফোন, ₹৫১০ নগদ অর্থসহ একটি মানিব্যাগ এবং একটি আধার কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ উগ্রপন্থী সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া, একই দিনে চূড়াচাঁদপুর ও ইম্ফল পশ্চিম জেলায় নিরাপত্তা বাহিনী দুটি পৃথক অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে, যা সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে সংরক্ষণ করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। চূড়াচাঁদপুর জেলার সংপি গ্রাম থেকে উদ্ধার হয়েছে চারটি ৯ এমএম পিস্তল (তিনটি ম্যাগাজিনসহ), ছয়টি সিঙ্গল ব্যারেল রাইফেল, একটি এম৭৯ গ্রেনেড লঞ্চার এবং একটি .২২ ক্যালিবার রাইফেল (ম্যাগাজিনসহ)।
অন্যদিকে, ইম্ফল পশ্চিমের সেকমাই থানার অন্তর্গত চানবিরোক হিল এলাকার নোবাপ মাখং অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে একটি এয়ার গান, একটি দেশি তৈরি লেথড টাইপ গান, একটি দেশি মর্টার, চারটি বাইপডযুক্ত দেশি ‘পম্পি’ গান, দুটি শেল টাইপ আইইডি, তিনটি পিভিসি পাইপ ফিটেড আইইডি, দুটি .৩০৩ এলএমজি ম্যাগাজিন (ফাঁকা), দুটি ৭.৬২ এলএমজি ম্যাগাজিন (ফাঁকা), চারটি বুলেটপ্রুফ প্লেট, দুটি ক্যামোফ্লাজ হেলমেট, দুটি বুলেটপ্রুফ ভেস্ট এবং একটি বাওফেং রেডিও হ্যান্ডসেট।
নিরাপত্তা বাহিনীর মুখপাত্র জানিয়েছেন, উদ্ধারকৃত এই বিপুল অস্ত্র ও বিস্ফোরকের উৎস, সংগঠনের নাম এবং তাদের ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়ে ইতোমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রশাসন দৃঢ়ভাবে জানিয়েছে, সন্ত্রাসবাদ এবং চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করে শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনা হবে।
নিরাপত্তা বাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে, এই ধরনের গোয়েন্দা-ভিত্তিক অভিযান ভবিষ্যতেও চলবে। সরকার এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলি রাজ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসবাদ এবং সংঘটিত অপরাধের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
এই অভিযানে প্রাপ্ত তথ্য এবং গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ভবিষ্যতে আরও গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন চালানো হতে পারে বলে সূত্রের খবর।

