আগরতলা, ২৯ জুলাই: অল ইন্ডিয়া সেভ এডুকেশন কমিটি ত্রিপুরার সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আজ চার দফা দাবিতে কমিটির সদস্যরা শিক্ষা বিভাগের অধিকর্তার নিকট ডেপুটেশনে মিলিত হয়েছেন।
কমিটির বক্তব্য অনুযায়ী, রাজ্যের বহু স্কুলে শিক্ষক সংকট চরমে পৌঁছেছে। কোথাও কোথাও একজন শিক্ষকই পুরো বিদ্যালয় চালাচ্ছেন। পরিকাঠামোরও মারাত্মক অভাব দেখা দিয়েছে। উপরন্তু, শিক্ষকদের পঠনপাঠনের বাইরে প্রশাসনিক দায়িত্বও চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা শিক্ষার মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
কমিটির অভিযোগ, এতদিন রাজ্যের অধিকাংশ বিদ্যালয়ে বাংলা মাধ্যমে পাঠদান ও ত্রিপুরা বোর্ড অব সেকেন্ডারি এডুকেশন-এর অধীনেই শিক্ষা কার্যক্রম চলছিল। কিন্তু ২০২০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি চালু হওয়ার পর সরকার হঠাৎ করে ১২৫টি ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়কে ‘বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্প’-এর আওতায় এনে পাঠ্যক্রম ইংরেজি মাধ্যমে রূপান্তর করে ও সিবিএসই বোর্ডের অধীনস্থ করে দেয়। কিন্তু এসব স্কুলে নেই পর্যাপ্ত ইংরেজি শিক্ষাদানযোগ্য শিক্ষক, ফলে ছাত্রছাত্রীরা ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, উন্নয়ন ফি ও অন্যান্য ফি বাবদ প্রতি বছর মোটা অংকের টাকা আদায় করায় গরিব পরিবারের শিক্ষার্থীরা আর্থিক চাপ সামলাতে না পেরে স্কুল ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। অন্যদিকে, ইংরেজি মাধ্যমে হঠাৎ পরীক্ষা দিতে গিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে পাশের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছে, ফলে বহু শিক্ষার্থীর পড়াশোনা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
কমিটির আরও অভিযোগ, একদিকে সরকার একের পর এক স্কুল ‘বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্প’-এ অন্তর্ভুক্ত করছে, অন্যদিকে সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, ইতিমধ্যে ৫২২টি সরকারি স্কুল বন্ধ করা হয়েছে এবং আরও ৯৬৫টি স্কুল বন্ধ করার পরিকল্পনা রয়েছে। যা রাজ্যের গরিব ও প্রান্তিক পরিবারের সন্তানদের শিক্ষার অধিকার হরণ করছে বলে মনে করছে এ আই এস ই সি।
দাবিগুলো হল, অবিলম্বে বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্প বাতিল করতে হবে, প্রতিটি বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে, কোনো অজুহাতে সরকারি বিদ্যালয় বন্ধ করা চলবে না এবং রাজ্যের সমস্ত বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।
কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যদি রাজ্য সরকার শিক্ষা ব্যবস্থার এই সংকটে দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে তারা বৃহত্তর গণআন্দোলনের পথে হাঁটবে।

