৩,০০০ ঘণ্টায় ১,০০০ জনকে জেরা : পহেলগাম হামলার তদন্তে এনআইএ-র বিস্তারিত বিবরণ সংসদে দিলেন অমিত শাহ

নয়াদিল্লি, ২৯ জুলাই : জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামে গত ২২ এপ্রিল ঘটে যাওয়া জঙ্গি হামলার তদন্তে ১,০৫৫ জনকে প্রায় ৩,০০০ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মঙ্গলবার লোকসভায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ বিতর্কে অংশ নিয়ে তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেন।

তিনি জানান, অপারেশন মহাদেব-এ নিহত তিন জঙ্গির কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া গুলির সঙ্গে পহেলগাম হামলায় ব্যবহৃত গুলি সম্পূর্ণরূপে মিলে গেছে। এর মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ওই তিন পাকিস্তানি জঙ্গি-ই ২২ এপ্রিল বৈসারান উপত্যকায় ২৬ জন নিরীহ মানুষের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল।

অমিত শাহ বলেন, এই তিন জঙ্গিকে অপারেশন মহাদেব-এ খতম করা হয়েছে। এদের কাছ থেকে দু’টি একে-৪৭ এবং একটি আমেরিকান এম৯ রাইফেল উদ্ধার হয়েছে। এছাড়া, যারা এই জঙ্গিদের আশ্রয় দিয়েছিল, এমন দু’জন স্থানীয় বাসিন্দাকে আটক করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, এনআইএ সেই দুই ব্যক্তিকে জেরা করেছে যারা জঙ্গিদের আশ্রয় দিয়েছিল। পরে যখন জঙ্গিদের দেহ শ্রীনগরে আনা হয়, তখন চারজন ব্যক্তি তাদের চেহারা দেখে শনাক্ত করেন। তবে আমরা তখনও তাড়াহুড়ো করিনি। আমরা পুরো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ চেয়েছিলাম। তাই, চণ্ডীগড় ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে (এফএসএল) পাঠানো হয় গুলির খোল।

শাহ বলেন, আমরা তিনটি রাইফেল বাজেয়াপ্ত করেছি। একটি এম৯ রাইফেল এবং দুটি একে-৪৭। ওই গুলির খোল থেকে রাতে পুরো প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা চালিয়ে দু’টি গুলি ম্যাচ করানো হয়। রাইফেলের গ্রুভও মিলে গেছে। এতে নিশ্চিত হওয়া গেছে, এগুলি ওই একই অস্ত্র যা দিয়ে আমাদের নাগরিকদের হত্যা করা হয়েছে। ৬ জন বিজ্ঞানীর যাচাইয়ের পর নিশ্চিত রিপোর্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আসে। তিনি বলেন, আজ ভোর ৪টা ৪৬ মিনিটে ভিডিও কলে বিজ্ঞানীরা আমাকে জানান যে এগুলি ১০০ শতাংশ সেই গুলি যেগুলি হামলায় ব্যবহার করা হয়েছিল।

অমিত শাহ জানান, পাকিস্তান-সমর্থিত লস্কর-ই-তইবার সহযোগী সংগঠন দ্য রেসিসটেন্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) হামলার দায় স্বীকার করার পরেই তদন্ত এনআইএ’র হাতে তুলে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, সারা দেশের পর্যটক, পনিওয়ালা, দোকানদার, কর্মচারী সকলকে নিয়ে আমরা ১,০৫৫ জনের বয়ান নিয়েছি। প্রত্যেকটি ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছে। সেখান থেকে স্কেচ তৈরি করে, বিশ্লেষণ করে আমরা জঙ্গিদের আশ্রয়দাতাদের চিহ্নিত করি এবং তাদের আটক করি।

অমিত শাহ আরও বলেন, পহেলগাম হামলার পরে যারা অন্য এক সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত ছিল, তাদেরও নিকেশ করা হয়েছে। পরে গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিদের সহযোগীদের মা ও আত্মীয়রা জঙ্গিদের মরদেহ শনাক্ত করেন। একইসঙ্গে ফরেনসিক রিপোর্টও এটি নিশ্চিত করেছে।

অমিত শাহ এদিন কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরমের মন্তব্যের জবাব দেন, যেখানে চিদাম্বরম বলেছিলেন, এই হামলায় ‘হোমগ্রোন’ সন্ত্রাসীদের হাত থাকতে পারে। এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে শাহ বলেন, আপনি কী পাকিস্তানকে বাঁচাতে চাইছেন? পাকিস্তানকে আড়াল করে আপনি কী পাবেন?

তিনি বলেন, জঙ্গিদের পাকিস্তানি ভোটার আইডি নম্বর রয়েছে। তারা পাকিস্তানি বন্দুক ব্যবহার করেছে। এমনকি পাকিস্তান থেকে আনা চকলেটও তাদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে। এর পরেও চিদাম্বরম বলছেন, তারা ভারতীয় হতে পারে? বিরোধীদের সমালোচনা করে শাহ বলেন, আমি ভাবছিলাম, পহেলগাম হামলায় জড়িত জঙ্গিদের নিহত হওয়ার খবর শুনে সংসদজুড়ে সবার মুখে হাসি ফুটবে। কিন্তু আমি ভুল ভেবেছিলাম। বিরোধীরা খুশি নয়। এটা দুঃখজনক। দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে আমরা একজোট হব, এমনটাই আশা করি।

তিনি শেষমেশ বলেন, যে দেশের ২৬ জন নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে, সেই জঙ্গিদের খতম করে আমরা সুবিচার করেছি। এনআইএ ও সব তদন্তকারী সংস্থা নিরন্তর কাজ করেছে। কংগ্রেস ও তাদের নেতারা যেন পাকিস্তানের হয়ে না দাঁড়ায়। এই বক্তব্যের পর রাজনৈতিক মহলে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি।