হরিদ্বার, ২৬ জুলাই : উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বারে অবস্থিত পবিত্র মনসা দেবী মন্দিরে আজ সকালে এক হৃদয়বিদারক পদপিষ্টের ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে অন্তত ৬ জন পুণ্যার্থীর মৃত্যু এবং ৩০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। গুরুতর আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, যেখানে ৭ জন এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, মন্দিরগামী সিঁড়িতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়ার কারণে এই পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে।
আজ রবিবার, শ্রাবণ মাসের শুভ তিথিতে মনসা দেবী মন্দিরে লক্ষ লক্ষ ভক্তের ভিড় ছিল। সকাল আনুমানিক ৯টা ৩০ মিনিট নাগাদ, মন্দিরগামী সংকীর্ণ সিঁড়ি পথে হঠাৎ করে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভিড়ের মধ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার একটি গুজব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এই গুজব শোনার পরই পুণ্যার্থীরা দিশেহারা হয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন, যার ফলে বহু মানুষ একে অপরের ওপর পড়ে যান। কিছু সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে ওঠে যে, বহু মানুষ শ্বাসরুদ্ধ হয়ে বা পদপিষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হন।
হরিদ্বারের সিনিয়র সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ (এসএসপি) প্রমেন্দ্র সিং ডোবাল জানিয়েছেন, “প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। মানুষ সরে যাওয়ার চেষ্টা করলে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয় এবং তারা একে অপরের ওপর পড়ে যায়।” তবে উত্তরাখণ্ড পাওয়ার কর্পোরেশন লিমিটেড (ইউপিএল) জানিয়েছে, তাদের কোনো বিদ্যুৎ পরিবাহী তারে ত্রুটি ছিল না বা কোনো তার ছিঁড়েও পড়েনি। তবে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, একজন ব্যক্তি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দগ্ধ হয়েছেন, বাকিরা পদপিষ্ট হয়ে মারা গেছেন।
ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই উত্তরাখণ্ড পুলিশের স্টেট ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (এসডিআরএফ) এবং স্থানীয় পুলিশ দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। উদ্ধারকারী দল তাৎক্ষণিকভাবে আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে স্থানান্তরিত করে। আহত পুণ্যার্থীদের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য ছিল হৃদয়বিদারক। মোট ৩৫ জন আহতকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল, তাদের মধ্যে ৬ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। বাকিদের চিকিৎসা চলছে এবং ৭ জন এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পুলিশ ফরেনসিক প্রমাণ সংগ্রহ করছে এবং দুর্ঘটনার সঠিক কারণ নির্ণয়ে বিস্তারিত তদন্ত চলছে।
এই মর্মান্তিক ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এক এক্স (পূর্বে টুইটার) পোস্টে বলা হয়েছে, “হরিদ্বারের মনসা দেবী মন্দিরে পদপিষ্ট হয়ে প্রাণহানির ঘটনায় আমি গভীরভাবে শোকাহত। যারা তাদের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন, তাদের প্রতি আমার সমবেদনা। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি। স্থানীয় প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করছে।”
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এই ঘটনাকে “গভীর বেদনাদায়ক” বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি শোকাহত পরিবারবর্গকে সমবেদনা জানিয়েছেন এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য লাভের জন্য প্রার্থনা করেছেন।
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি এই ঘটনাকে “অত্যন্ত বেদনাদায়ক” আখ্যা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, তিনি স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন এবং পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। মুখ্যমন্ত্রী ধামি তার এক্স পোস্টে লিখেছেন, “হরিদ্বারের মনসা দেবী মন্দিরগামী পথে পদপিষ্টের অত্যন্ত দুঃখজনক খবর পাওয়া গেছে। উত্তরাখণ্ড এসডিআরএফ, স্থানীয় পুলিশ এবং অন্যান্য উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে এবং ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রমে নিযুক্ত রয়েছে। আমি এই বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি এবং পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আমি মা দেবীর কাছে সকল ভক্তের নিরাপত্তা ও সুস্থতা কামনা করি।”
উত্তরাখণ্ড সরকার এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারবর্গের জন্য ২ লক্ষ টাকা করে এবং আহতদের জন্য ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করেছে।
হরিদ্বার পুলিশ কর্তৃপক্ষ জনসাধারণের প্রতি যেকোনো ধরনের গুজবে কান না দেওয়ার এবং ভিড় এড়িয়ে চলার আবেদন জানিয়েছে। তারা জানিয়েছে, কোনো জরুরি অবস্থার জন্য উত্তরাখণ্ড পুলিশের হেল্পলাইন নম্বর: (+৯১) ৯৪১১১ ১১২৯৭৩, ৯৫২০৬২৫৯৩৪ – এ যোগাযোগ করা যেতে পারে।
হরিদ্বার দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান। বিশেষ করে শ্রাবণ মাসে এখানে লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম ঘটে, যা অনেক সময় ভিড় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। এই ঘটনা আবারও ধর্মীয় সমাবেশগুলিতে ভিড় ব্যবস্থাপনার গুরুত্বকে তুলে ধরেছে।

