প্রধানমন্ত্রী মোদী গঙ্গাইকোন্ডা চোলপুরমে রাজেন্দ্র চোল প্রথম-এর সম্মানে স্মারক মুদ্রা প্রকাশ করলেন

গঙ্গাইকোন্ডা চোলপুরম, ২৭ জুলাই: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ তামিলনাড়ুর ঐতিহাসিক গঙ্গাইকোন্ডা চোলপুরম পরিদর্শন করেন এবং দক্ষিণ ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্রাট রাজেন্দ্র চোল প্রথম-এর সম্মানে একটি স্মারক মুদ্রা প্রকাশ করেন। আদি থিরুভাথিরাই উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত এই বিশেষ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে তিনি চোল সাম্রাজ্যের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্বের উপর আলোকপাত করেন এবং ভারতের ঐতিহ্য সংরক্ষণে সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

চোল সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসেবে এক সময় পরিচিত গঙ্গাইকোন্ডা চোলপুরম আজ উৎসবের আমেজে সেজে উঠেছিল। রাজেন্দ্র চোল প্রথম-এর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আদি থিরুভাথিরাই উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি ঘিরে গোটা এলাকা ছিল চূড়ান্ত নিরাপত্তা ও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের মধ্যে। ঐতিহাসিক বৃহদীশ্বর মন্দিরটি পতাকা, ফুলের মালা এবং চোল যুগের স্থাপত্য মোটিফ দিয়ে সাজানো হয়েছিল, যা গোটা এলাকাকে এক উৎসবমুখর পরিবেশে পরিণত করে।

এই সফরের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত ছিল রাজা রাজেন্দ্র চোল প্রথম-এর স্মরণে প্রধানমন্ত্রী মোদীর স্মারক মুদ্রা প্রকাশ। এই উদ্যোগটি গঙ্গাইকোন্ডা চোলপুরম ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল ট্রাস্টের চেয়ারম্যান আর. কোমাগানের অনুরোধে নেওয়া হয়। মুদ্রাটির মাধ্যমে রাজেন্দ্র চোলের শাসন, সামরিক কৌশল, স্থাপত্য ও সাংস্কৃতিক অবদানকে স্মরণ করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রাজেন্দ্র চোল ছিলেন এক মহান প্রশাসক, দক্ষ যোদ্ধা ও দূরদর্শী রাজা। তাঁর নির্মিত গঙ্গাইকোন্ডা চোলপুরম কেবল একটি রাজধানী নয়, বরং এটি এক জ্ঞানের, সংস্কৃতির ও সামরিক কৃতিত্বের প্রতীক।” তিনি আরও বলেন, “এই স্মারক মুদ্রা আমাদের অতীতের গৌরবের প্রতি শ্রদ্ধার প্রকাশ এবং আগামী প্রজন্মের কাছে সেই ইতিহাস পৌঁছে দেওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”

প্রধানমন্ত্রী মোদী ত্রিচি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে একটি হেলিকপ্টারে গঙ্গাইকোন্ডা চোলপুরমের উদ্দেশে রওনা দেন। তিনি অবতরণ করেন ঐতিহাসিক ‘চোলগঙ্গম’ হ্রদের শুকনো তটে নির্মিত একটি অস্থায়ী হেলিপ্যাডে। উল্লেখ্য, এই হ্রদটি এক হাজার বছরেরও বেশি আগে রাজেন্দ্র চোল প্রথম নির্মাণ করেছিলেন তার রাজধানীতে পানীয় জলের চাহিদা মেটানোর জন্য।

সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী একটি বর্ণাঢ্য রোডশো-এ অংশ নেন, যা তাঁকে বৃহদীশ্বর মন্দির পর্যন্ত নিয়ে যায়। রাস্তার দু’পাশে জড়ো হয় হাজার হাজার মানুষ, যারা পতাকা নেড়ে, স্লোগান দিয়ে এবং চোল যুগের ঐতিহ্যবাহী সাজে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানায়। স্থানীয় শিল্পীরা ঐতিহ্যবাহী তামিল বাদ্যযন্ত্র ও নৃত্যের মাধ্যমে তাঁকে স্বাগত জানান।

রাজেন্দ্র চোল প্রথম ছিলেন রাজা রাজ চোলের পুত্র এবং চোল সাম্রাজ্যের অন্যতম সফল শাসক। তিনি তাঁর সামরিক শক্তি এবং সমুদ্রগামী অভিযানের মাধ্যমে শুধুমাত্র ভারত নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে চোল প্রভাব বিস্তার করেন। তাঁর শাসনামলে চোল সাম্রাজ্য দক্ষিণ ভারত থেকে গঙ্গা অববাহিকা পর্যন্ত বিস্তৃত হয় এবং শ্রীলঙ্কা, মালয়, জাভা, সুমাত্রা পর্যন্ত পৌঁছায়।

রাজেন্দ্র চোলের নির্মিত গঙ্গাইকোন্ডা চোলপুরম ছিল একটি সুপরিকল্পিত নগরী, যার অন্যতম আকর্ষণ বৃহদীশ্বর মন্দির, যা শৈলশিল্প ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের এক অসাধারণ নিদর্শন। পাশাপাশি, তিনি নির্মাণ করেন বিশাল জলাধার ‘চোলগঙ্গম’, যা ছিল তৎকালীন ভারতের অন্যতম বৃহৎ কৃত্রিম জলাধার।

প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই সফর কেবল একটি আনুষ্ঠানিক ভ্রমণ নয়, বরং ভারতের প্রাচীন ঐতিহ্য, শিল্প, স্থাপত্য ও সাংস্কৃতিক ঐক্যকে উদযাপনের একটি নিদর্শন। গঙ্গাইকোন্ডা চোলপুরমের মতো এক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থানকে কেন্দ্র করে আয়োজিত এই উৎসব সরকারের ‘ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ’ অভিযানের অংশ।

তিনি বলেন, “তামিলনাড়ুর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আমাদের জাতীয় পরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমরা চাই ভারতের প্রতিটি কোণ থেকে উঠে আসা এই গৌরবময় ইতিহাসকে নতুন প্রজন্ম জানুক, শিখুক এবং গর্ব অনুভব করুক।”

সরকার গঙ্গাইকোন্ডা চোলপুরম এবং তামিলনাড়ুর অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থানগুলিকে আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে তুলে ধরার পরিকল্পনা করছে। ঐতিহাসিক সচেতনতা ও সাংস্কৃতিক গর্ব বৃদ্ধি করতে বিশেষ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে, শিক্ষাক্ষেত্রে চোল ইতিহাস অন্তর্ভুক্তির বিষয়েও ভাবনা চলছে।