নয়াদিল্লি, ২৩ জুলাই : পারমাণবিক এবং তেজস্ক্রিয় বিপর্যয় মোকাবিলায় দেশের প্রস্তুতি অত্যন্ত শক্তিশালী ও সুসংগঠিত বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী শ্রী নিত্যানন্দ রাই। রাজ্যসভায় এক লিখিত প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ২০১৯ সালের ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান অনুযায়ী, দেশের প্রতিটি জেলার সমন্বিত জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা-র অন্তর্ভুক্ত রয়েছে পারমাণবিক জরুরি অবস্থায় করণীয় পদক্ষেপের পরিকল্পনা।
যেকোনও পারমাণবিক বা তেজস্ক্রিয় সংক্রান্ত বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে অ্যাটমিক এনার্জি দপ্তর-কে নোডাল এজেন্সি হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। ডিএই তার নিজস্ব সঙ্কট ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রস্তুত করেছে।
এ ধরনের বিপর্যয়ে মূলত তিন ধরনের জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে—প্ল্যান্ট এমার্জেন্সি, সাইট এমার্জেন্সি এবং অফ-সাইট এমার্জেন্সি। এর মধ্যে অফ-সাইট এমার্জেন্সি হলো একমাত্র পরিস্থিতি যেখানে পারমাণবিক স্থাপনা থেকে অতিরিক্ত তেজস্ক্রিয় পদার্থ বা রাসায়নিক বাইরে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে এবং জনসাধারণকে সুরক্ষিত রাখতে হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হয়।
প্রতিটি নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট-এর জন্য প্ল্যান্ট ও সাইট এমার্জেন্সির ক্ষেত্রে ইমার্জেন্সি প্রিপারেডনেস এন্ড রেসপন্স পরিকল্পনা তৈরি করা বাধ্যতামূলক। এটি ছাড়া কোনও প্ল্যান্ট চালানোর লাইসেন্স দেওয়া হয় না।
অফ-সাইট ইপিআর পরিকল্পনা স্থানীয় জেলা প্রশাসন এবং জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ-র মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়, যা এনপিপি ও এনডিএমএ-র নির্দেশনায় হয়। বর্তমানে অ্যাটমিক এনার্জি রেগুলেটরি বোর্ড নতুন এক্সারসাইজ পদ্ধতি উন্নয়ন করছে, যাতে জরুরি অবস্থায় আরও কার্যকর অনুশীলন সম্ভব হয়।
এনডিএমএ ইতিমধ্যেই দেশের ৫৬টি শহরের বিভিন্ন থানায় পারমাণবিক/তেজস্ক্রিয় উপাদান শনাক্ত করার জন্য তিন ধরনের যন্ত্র — গো-নো-গো ইনস্ট্রুমেন্ট, ডোসিমিটার এবং সার্ভে মিটার বিতরণ করেছে। এছাড়া সাতটি নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টের আশেপাশে রাসায়নিক, জৈবিক, রেডিওলজিক্যাল এবং নিউক্লিয়ার (সিবিআরএন) বিষয়ে একদিনের সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু রয়েছে।
এয়ারপোর্ট ও সমুদ্রবন্দরে ৩৮টি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে ১৫০০-রও বেশি কর্মীকে সিবিআরএন এমার্জেন্সি মোকাবিলায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক-এর অধীন ‘হেলথ সেক্টর ডিসাস্টার প্রিপারেডনেস এন্ড রেসপন্স’ প্রকল্প (২০২১-২০২৬) অনুযায়ী পারমাণবিক ও তেজস্ক্রিয় জরুরি পরিস্থিতির চিকিৎসার উপর চিকিৎসকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে জোর দেওয়া হয়েছে। নিউক্লিয়ার পাওয়ার কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (এনপিসিআইএল)-এর অধীনে ৭টি নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টে ওয়ার্কশপের মাধ্যমে এখনও পর্যন্ত দেশের ৩০টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৯৯১ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
দিল্লি, মুম্বাই, হায়দরাবাদ ও চেন্নাই-সহ বেশ কিছু বড় শহরের হাসপাতালকে রেডিয়েশন ইমার্জেন্সি মেডিকেল নেটওয়ার্ক-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পারমাণবিক অঞ্চলের আশেপাশে চিকিৎসা পরিকাঠামো থাকলেও, বড় শহরগুলিতেও সেগুলি জোরদার করার চেষ্টা চলছে।
মন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই জানান, বর্তমানে এনডিএমএ, এনপিসিআইএল, ডিএই, ডিডিএমএ-এর সমন্বয়ে যেভাবে ইপিআর ও সিএমপি পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে, তা যথেষ্ট আধুনিক, বৈজ্ঞানিক ও শক্তিশালী। তাই দক্ষিণ কোরিয়ার রেডিয়েশন ডিজাস্টার অ্যাক্ট-এর মতো কোনও নতুন আইন বা পরিকল্পনার প্রয়োজনে ভারতীয় পরিস্থিতিতে এখনই পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই।
ভারত সরকার পারমাণবিক ও তেজস্ক্রিয় দুর্যোগ মোকাবিলায় সুসংগঠিত পরিকল্পনা এবং প্রশিক্ষণমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। এনডিএমএ-এর নেতৃত্বে পুলিশ, স্বাস্থ্যকর্মী, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে একত্র করে একটি ব্যাপক ও কার্যকরী বিপর্যয় মোকাবিলা কাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে।

