নতুন দিল্লি, ২২ জুলাই : ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখর সোমবার রাতে আকস্মিকভাবে তার পদত্যাগ ঘোষণা করেছেন। পদত্যাগের পিছনে চিকিৎসাগত কারণ দেখানো হলেও, রাজনীতির অঙ্গনে এই পদত্যাগকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের গুঞ্জন শুরু হয়েছে। ৭৪ বছর বয়সী ধনখর, যিনি ২০২২ সালের আগস্ট মাসে উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন, তার এই পদত্যাগ রাজনৈতিক মহলে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। তিনি তার পদত্যাগপত্রে জানিয়েছেন যে, তিনি তার স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে চিকিৎসার জন্য সময় দেওয়ার প্রয়োজনে পদত্যাগ করছেন।
জগদীপ ধনখর নিজের পদত্যাগপত্রে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে জানিয়েছেন, “চিকিৎসার জন্য অগ্রাধিকার দেওয়ার এবং চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে উপ-রাষ্ট্রপতি পদ থেকে আমি পদত্যাগ করছি। এটি সংবিধানের ৬৭(এ) ধারা অনুযায়ী কার্যকর হবে।”
ধনখরের স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে তার পদত্যাগের সম্ভাবনা কিছুটা আগে থেকেই আলোচনায় ছিল। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে দিল্লির AIIMS-এ তার অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করা হয়েছিল এবং এরপর থেকেই তিনি কিছুটা অসুস্থতার শিকার ছিলেন। যদিও তিনি শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বল মনে হলেও, সংসদীয় কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন। এর আগে, রাজ্যসভা চেয়ারম্যান হিসেবে তার বিরুদ্ধে একটি অভিশংসন প্রস্তাব উঠেছিল, যা রাজ্যসভা উপ-সভাপতি হরিবংশ দ্বারা বাতিল করা হয়েছিল।
ধনখরের পদত্যাগের পর, ভারতের সাংবিধানিক কাঠামোর আওতায় উপ-রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য থাকার পর সেই দায়িত্ব কিভাবে পালন করা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভারতীয় সংবিধানে, উপ-রাষ্ট্রপতি পদ শূন্য হলে তার কার্যভার পরিচালনার জন্য রাজ্যসভা উপ-সভাপতি বা রাষ্ট্রপতির অনুমোদনে অন্য কোনো সদস্যকে দায়িত্ব প্রদান করা হতে পারে।
এছাড়া, পরবর্তী উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হবে। সংবিধান অনুযায়ী, উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয় সংসদের উভয় কক্ষের (রাজ্যসভা ও লোকসভা) নির্বাচিত সদস্যদের ভোটে, যেখানে সিঙ্গল ট্রান্সফারেবল ভোট পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত প্রার্থী হতে হবে, যিনি ভারতের নাগরিক, কমপক্ষে ৩৫ বছর বয়সী এবং রাজ্যসভায় নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য।
যেহেতু কেন্দ্র সরকার এবং তার সহযোগী রাজনৈতিক দল এনডিএ (জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট) সংসদে বহুলাংশে সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাই তারা পরবর্তী উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু করবে। বর্তমানে, রাজ্যসভা উপ-সভাপতি হরিবংশের নাম সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে। তিনি ২০২০ সাল থেকে রাজ্যসভা উপ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং তার কাজকর্মের জন্য তিনি সরকারের আস্থা অর্জন করেছেন।
জানতে পারা গেছে যে, বিজেপির এক নেতা বলেছেন, “আমরা এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছি, কিন্তু আমার মনে হয় দল এমন একজন প্রার্থী নির্বাচন করবে, যিনি রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য এবং কোনও ধরনের বিতর্কের মধ্যে নেই।”
এদিকে, কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রামেশ ধনখরের পদত্যাগের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, “উপ-রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ একেবারে অপ্রত্যাশিত এবং এটি অনেক প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। অবশ্যই, ধনখরকে তার স্বাস্থ্য নিয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত, তবে তার এমন আকস্মিক পদত্যাগের পিছনে আরও কিছু আছে, যা পরিষ্কার নয়।”
ধনখরের পদত্যাগের ঘটনা একমাত্র তার নয়। এর আগে, ভারতের ইতিহাসে কেবল দুটি ঘটনা ছিল যখন উপ-রাষ্ট্রপতিরা তাদের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। ১৯৬৯ সালে, উপ-রাষ্ট্রপতি ভি. ভি. গিরি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য পদত্যাগ করেছিলেন এবং ২০০৭ সালে, ভৈরন সিং শেখাওয়াত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর পদত্যাগ করেছিলেন।
ধনখরের পদত্যাগের পর, রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। একদিকে, বিজেপি এখনও তাদের পরবর্তী প্রার্থী নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকেও নানা প্রশ্ন এবং কটাক্ষ উঠছে।
এখন, প্রধান প্রশ্ন হলো, পরবর্তী উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কী ধরনের প্রার্থীকে মনোনীত করা হবে। ভারতীয় রাজনীতির বর্তমান পরিস্থিতিতে, সরকার একটি সংবেদনশীল, গ্রহণযোগ্য এবং রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ প্রার্থী নির্বাচন করতে চায়, এমনটাই মনে হচ্ছে। নির্বাচন প্রক্রিয়া যত এগোবে, ততই এই বিষয়ে আরও বেশি স্পষ্টতা আসবে।
ধনখরের পদত্যাগের পর, যে ধরনের রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে তা নিশ্চিতভাবে আগামীদিনে ভারতের রাজনীতির গতি ও গতিপথ নিয়ে নানা ধরনের নতুন আলোচনা সৃষ্টি করবে।

