ওয়াশিংটন, ২২ জুলাই : মার্কিন সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম সম্প্রতি ভারত, চীন এবং ব্রাজিলকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, জানিয়ে দিয়েছেন যে যদি তারা রাশিয়ার থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রাখে, তবে তারা আর্থিক শাস্তির সম্মুখীন হবে। গ্রাহাম দাবি করেছেন, এই তিনটি দেশ রাশিয়ার তেলের প্রধান গ্রাহক এবং তাদের অব্যাহত তেল আমদানি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আক্রমণ চালিয়ে যেতে সহায়তা করছে। সেই কারণেই, তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শিগগিরই এই দেশগুলোর ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন।
গ্রাহাম বলেন, “ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ান তেল কেনার জন্য ভারত, চীন ও ব্রাজিলের উপর শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছেন।” এই তিনটি দেশ বর্তমানে রাশিয়া থেকে তেলের প্রধান আমদানিকারক, এবং তাদের তেল আমদানি চলতে থাকলে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধের অর্থায়ন অব্যাহত থাকবে, যা আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য একটি গুরুতর হুমকি, এমনটাই মনে করেন তিনি।
ফক্স নিউজের এক সাক্ষাৎকারে গ্রাহাম আরো বলেন, “ট্রাম্প পরিকল্পনা করেছেন এই দেশগুলোর উপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন, যাতে তারা রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করে দেয়।” তিনি উল্লেখ করেন, এই ব্যবস্থা ইউক্রেনের সংগ্রামে সহায়তা করবে এবং রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্রের অর্থায়ন বন্ধ করবে। “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এসব দেশকে শাস্তি দেবেন, যারা পুতিনের জন্য অর্থ সাহায্য করে,” তিনি যোগ করেন।
গ্রাহাম, পুতিনকে সরাসরি সতর্ক করে বলেন, “আপনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ভুল বুঝেছেন, এটি আপনার জন্য বড় ভুল হতে চলেছে। আপনার অর্থনীতি আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এবং আমরা ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করতে থাকব, যাতে তারা রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষা করতে পারে।”
গ্রাহাম আরো বলেন, পুতিন যে ১৯৯০ এর দশকে ইউক্রেনের কাছ থেকে ১৭০০ পরমাণু অস্ত্র সংগ্রহ করে এবং তারপর তাদের সার্বভৌমত্বের সম্মান বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেই প্রতিশ্রুতি তিনি ভেঙে ফেলেছেন। “পুতিন চায় সোভিয়েত ইউনিয়ন পুনরায় সৃষ্টি করতে, এবং সে তার প্রতিবেশী দেশগুলোকে দখল করতে চাইছে। কিন্তু এ কাজ তার অধিকার নয়,” গ্রাহাম বলেন।
তিনি সতর্ক করে বলেন, “পুতিন কখনই থামবে না যতক্ষণ না কেউ তাকে থামাবে, এবং বিশ্বের একটি বড় অংশ পুতিনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছে।”
এছাড়া, গ্রাহাম ট্রাম্পের নেতৃত্বের শৈলীকে এক সেরা ক্রীড়াবিদের সঙ্গে তুলনা করেছেন। “ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার রাজনীতি এবং বৈদেশিক কূটনীতিতে স্কটটিই শেফলারের মতো। তিনি সবসময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে জানেন, এবং এখন তিনি একটি বড় কাজ করতে যাচ্ছেন,” গ্রাহাম মন্তব্য করেন।
গ্রাহাম বলেন, ট্রাম্পের এ ধরনের পদক্ষেপ শুধু রাশিয়ার বিরুদ্ধে নয়, বরং অন্য দেশগুলোর জন্য একটি সরাসরি সতর্কতা। “আমি চীন, ভারত এবং ব্রাজিলকে বলব: যদি আপনি রাশিয়ান তেল কিনে এই যুদ্ধকে চলতে দেন, আমরা আপনাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেবো। আপনি যা করছেন তা হলো রক্তের টাকা উপার্জন,” তিনি সতর্ক করেন।
গ্রাহাম মন্তব্য করেন, যে দেশগুলো রাশিয়ান তেল কিনে ইউক্রেন যুদ্ধের অর্থায়ন করে, তারা দীর্ঘমেয়াদীভাবে মার্কিন অর্থনীতির সাথে সম্পর্কিত দেশগুলোর দ্বারা একে একে চাপের মুখে পড়বে। “পুতিন হয়তো নিষেধাজ্ঞা সহ্য করতে পারবে, কিন্তু চীন, ভারত এবং ব্রাজিলের মতো দেশগুলো যারা আমেরিকার সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক রাখে, তাদের উপর এই শুল্কের প্রভাব পড়বে,” গ্রাহাম বলেন।
তিনি এক পর্যায়ে আরও বলেন, “এখন চীন, ভারত এবং ব্রাজিলের সামনে একটি কঠিন পছন্দ রয়েছে। তারা হয় আমেরিকার অর্থনীতি বেছে নেবে, না কি পুতিনকে সহায়তা করতে থাকবে। আমি বিশ্বাস করি তারা আমেরিকার অর্থনীতি বেছে নেবে।”
গ্রাহামের এই মন্তব্যের পর আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে নতুন দিক নির্দেশিত হতে পারে। পুতিনের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিরোধ চলছে, এবং এই শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা তেল এবং শক্তির বাজারে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় শক্তির বাজারগুলো, বিশেষ করে চীন, ভারত এবং ব্রাজিল, তাদের তেল আমদানির কৌশল পরিবর্তন করতে বাধ্য হতে পারে। তবে, এসব দেশের রাজনীতি এবং অর্থনীতি কি রকমভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবুও, মার্কিন কংগ্রেস এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে এ ধরনের উদ্যোগ বিশ্বরাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।

