নিমিষা প্রিয়া কাণ্ড: “ক্ষমা নেই, মৃত্যুদণ্ডই হতে হবে”, জানালেন নিহত তলাল মেহেদির ভাই

নয়াদিল্লি, ১৬ জুলাই : ২০১৭ সালে ইয়েমেনে কেরলের নার্স নিমিষা প্রিয়ার হাতে নিহত হওয়া তলাল আবদো মেহেদির ভাই আবদেলফাত্তাহ মেহেদি জানিয়েছেন, “এই অপরাধের কোনও ক্ষমা হতে পারে না। মৃত্যুদণ্ডই হওয়া উচিত নিমিষা প্রিয়ার।”

তিনি আরও অভিযোগ করেছেন, ভারতীয় মিডিয়া ঘটনাকে বিকৃত করে দোষীকে ‘ভিকটিম’ হিসেবে উপস্থাপন করছে, যা তাঁদের পরিবারের জন্য অপমানজনক।

এদিকে, বুধবার নিমিষা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও, বহুস্তরীয় আলোচনার পর আপাতত তা স্থগিত রাখা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার, সৌদি আরব ও ইয়েমেনের সংস্থাগুলির পাশাপাশি ধর্মীয় স্তরে হস্তক্ষেপের ফলে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, গ্র্যান্ড মুফতি কান্দাপুরম এ পি আবুবকর মুসলিয়ার ইয়েমেনের শুরা কাউন্সিলের এক বন্ধুর মাধ্যমে আলোচনার পথ খোলেন। বুধবার সকালে কেরালার সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক এম ভি গোবিন্দন মুসলিয়ারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

তিনি বলেন, “মুসলিয়ার আমাকে জানিয়েছেন যে মৃত্যুদণ্ড আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে এবং আরও কিছু দিক নিয়ে আলোচনা চলছে। ইয়েমেনের প্রশাসনের সঙ্গে এবং নিহতের পরিবারের সঙ্গে এখনও কথা চলছে।”

ইয়েমেনের শারিয়া আইনে, ‘ব্লাড মানি’ বা রক্তমূল্য দিয়ে মৃত্যুদণ্ড মকুব করানো যেতে পারে, তবে তার জন্য নিহতের পরিবারের লিখিত ক্ষমা প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে পরিবারটির মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে, যা আলোচনার অন্যতম প্রধান বাধা।

এই পরিস্থিতিতে ধর্মীয় নেতারা, মধ্যস্থতাকারীরা ও ভারতীয় সরকার যৌথভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পরিবারটিকে বোঝানোর এবং একটি সমাধানের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য।

বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, আলোচনার পরবর্তী ধাপেই ‘ব্লাড মানি’ প্রদান নিয়ে মূল আলোচনা হবে। কেরালার অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী এম এ ইউসুফ আলি ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, যেকোনও আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন হলে তিনি পাশে থাকবেন।

প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে পরিবারের আর্থিক সঙ্কট মেটাতে নিমিষা প্রিয়া নার্স হিসেবে ইয়েমেনে পাড়ি দেন। পরে তিনি নিজস্ব একটি ক্লিনিক খুলেছিলেন। কিন্তু ২০১৭ সালে তাঁর ব্যবসায়িক সঙ্গী তলাল মেহেদির সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন।

অভিযোগ, তলাল তাঁর পাসপোর্ট কেড়ে নেন। সেই পাসপোর্ট ফেরত পেতে প্রিয়া তাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেন, যা মরণঘাতী প্রমাণিত হয়। এরপর পালাতে গিয়ে ধরা পড়েন প্রিয়া এবং ২০১৮ সালে তাঁকে খুনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

২০২০ সালে আদালত তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেন এবং ২০২৩ সালের নভেম্বরে ইয়েমেনের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল সেই রায় বহাল রাখে। তবে আদালত তখনই জানিয়ে দেয়, রক্তমূল্য পরিশোধের মাধ্যমে প্রাণভিক্ষার সুযোগ রয়েছে।

নিমিষা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড রদ করার দাবিতে কেরালার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল একত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়ে আবেদন জানিয়েছে। এই ইস্যুতে দলমত নির্বিশেষে রাজ্যজুড়ে সহানুভূতির সুর উঠে এসেছে।

বর্তমানে নিমিষা প্রিয়া ইয়েমেনের একটি জেলে মৃত্যুদণ্ডের অপেক্ষায় রয়েছেন। কিন্তু মৃত্যুদণ্ড আপাতত স্থগিত হওয়ায় তাঁর জন্য সাময়িক স্বস্তি মিলেছে। এখন সবকিছু নির্ভর করছে নিহতের পরিবারের সিদ্ধান্ত ও আলোচনার ফলাফলের ওপর। ধর্মীয় ও কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা সফল হলে রক্তমূল্যের মাধ্যমে নিমিষার প্রাণ বাঁচার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আবদেলফাত্তাহ মেহেদির কঠোর অবস্থান এই আলোচনাকে আরও জটিল করে তুলছে।