হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জেলেই যাবেন, সামাজিক মাধ্যমে অসমের মুখ্যমন্ত্রীর দাবি জনসমাবেশে ঘোষণা দিলেন রাহুল গান্ধী

গুয়াহাটি, ১৬ জুলাই: অসম সফরে এসে এক অভূতপূর্ব কৌশলে সরাসরি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে নিশানা করলেন লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। অসমের মুখ্যমন্ত্রীকে আখ্যা দিলেন “ভারতের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত মুখ্যমন্ত্রী” হিসেবে এবং জানালেন, “কংগ্রেসের সিংহ-রা তাঁকে জেলে পাঠাবেই”। সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হল, এই মন্তব্য রাহুল নিজে জনসমাবেশে বলার আগেই তা সামাজিক মাধ্যমে ফাঁস করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা নিজেই। বুধবার সকালে এক্স -এ একটি পোস্টে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, লিখে নিন, হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে অবশ্যই জেলে পাঠানো হবে। এই ছিল রাহুল গান্ধীর মন্তব্য, যা তিনি অসম কংগ্রেসের রাজনৈতিক কমিটির বৈঠকে বলেছেন।

মুখ্যমন্ত্রী তাঁর পোস্টে রাহুলকে কটাক্ষ করে লিখেছিলেন, “তিনি এতদূর অসমে এসেছেন শুধু এই কথা বলতে? শুভেচ্ছা রইল, রাহুলজি। অসমের আতিথেয়তা উপভোগ করুন। আর হ্যাঁ, আপনি নিজেও তো একাধিক ফৌজদারি মামলায় জামিনে রয়েছেন। এ কথা যেন না ভুলে যান!

এর কিছু সময় পরেই গুয়াহাটির ছয়গাঁওয়ে দুপুরে এক বিশাল জনসমাবেশে রাহুল গান্ধী জোর গলায় বলেন, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ভারতের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর চোখে-মুখে আতঙ্ক স্পষ্ট। আর কেউ তাঁকে রক্ষা করতে পারবে না। এমনকি নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহও পারবেন না। তিনি আরও বলেন, সমগ্র অসম জানে তাঁর এবং তাঁর পরিবারের দুর্নীতির কথা। সাংবাদিকরা অচিরেই তাঁর জেলে যাওয়ার ছবি তুলবেন। এটা এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা।

রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বুধবার একদিনের অসম সফরে আসেন। সফরের মূল লক্ষ্য ছিল, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক রোডম্যাপ তৈরি করা, সংগঠনকে শক্তিশালী করা এবং বর্তমান সরকারকে দুর্নীতির অভিযোগে কড়া আক্রমণ চালিয়ে যাওয়া।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, প্রথম বৈঠক হয় গুয়াহাটি বিমানবন্দরের নিকট একটি হোটেলে এবং দ্বিতীয় বৈঠক হয় ছয়গাঁওয়ে। অসম প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা সাংসদ গৌরব গগৈ জানান, এই বৈঠকগুলো ঘরোয়া হলেও গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রাহুল গান্ধীর মন্তব্য ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বিজেপির পক্ষ থেকে পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতি শুরু হলেও কংগ্রেসের দাবি, এবারের লড়াই দুর্নীতির বিরুদ্ধে। জনগণ জেগে উঠেছে। হিমন্ত বিশ্ব শর্মা আর রক্ষা পাবেন না।

রাহুল গান্ধীর এই সফর এবং বক্তব্যে স্পষ্ট, কংগ্রেস এবার অসমে দুর্নীতিকে মূল ইস্যু করে জনমত গড়ে তুলতে চাইছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই যে রাহুলের মন্তব্য তুলে ধরে পাল্টা কটাক্ষ করেছেন, তা রাহুলের বক্তব্যকে আরও বেশি আলোচনার কেন্দ্রে এনেছে। ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এই সংঘর্ষ যে আরও তীব্র হবে, সে-বিষয়ে নিশ্চিত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।