নতুন দিল্লি, ১৬ জুলাই : ভারতের ঐতিহ্যবাহী রন্ধনশৈলীকে আধুনিক প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার লক্ষ্য নিয়ে পিএইচডি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং ভারতের পর্যটন মন্ত্রকের যৌথ উদ্যোগে আনুষ্ঠানিকভাবে সূচনা হল ‘ন্যাশনাল ইয়ং শেফ কম্পিটিশন’। ১৬ জুলাই, নতুন দিল্লির পিএইচডি হাউসে এক জাঁকজমকপূর্ণ কার্টেন রেইজার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই প্রতিযোগিতার শুভারম্ভ হয়। প্রতিযোগিতার মূল উদ্দেশ্য হল দেশজুড়ে চূড়ান্ত বর্ষের হসপিটালিটি শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে প্রতিভাবান শেফদের খুঁজে বের করে তাঁদের প্রশিক্ষণ ও প্ল্যাটফর্ম প্রদান করা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রী সুমন বিল্লা (আইএএস), অতিরিক্ত সচিব ও মহাপরিচালক, পর্যটন মন্ত্রক। তিনি বলেন, ভারতের রন্ধন ঐতিহ্য শুধুমাত্র স্বাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি আমাদের সাংস্কৃতিক স্মৃতির একটি বহমান ধারা, যেখানে অঞ্চলভিত্তিক উপাদান, ঋতু অনুসারে প্রস্তুতির কৌশল ও পরিবারিক ঐতিহ্য মিলেমিশে এক অনন্য স্বরূপ ধারণ করেছে। তিনি তরুণ শেফদের প্রতি আহ্বান জানান, তাঁরা যেন ঐতিহ্যকে রক্ষা করে বিশ্ব দরবারে ভারতীয় রন্ধনশৈলীর প্রতিনিধিত্ব করেন এবং সৃজনশীলতার মাধ্যমে তাকে আধুনিক রূপ দেন।
“ভারতীয় রন্ধনসম্পর্কীয় ঐতিহ্য উদযাপন: উদ্ভাবনের সাথে ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ” শীর্ষক এই প্রতিযোগিতাটি চারটি অঞ্চলে ভাগ করে আয়োজিত হবে—উত্তর, পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ। প্রতিটি অঞ্চলের বাছাইপর্ব শেষে চূড়ান্ত পর্বটি জানুয়ারি ২০২৬-এ দিল্লির আইএইচএম পুসায় অনুষ্ঠিত হবে। অঞ্চলভিত্তিক প্রতিযোগিতার স্থান ও তারিখগুলি হল: উত্তরাঞ্চল (৬ আগস্ট ২০২৫, এআইএইচএম চণ্ডীগড়), পূর্বাঞ্চল (১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, আইএইচএম কলকাতা), পশ্চিমাঞ্চল (নভেম্বর ২০২৫, আইএইচএম মুম্বই), ও দক্ষিণাঞ্চল (১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, আইএইচএম কোভালাম)। প্রতিটি অঞ্চলের নির্বাচিত ছাত্রছাত্রীরা জাতীয় পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
এই উদ্যোগের একটি বিশেষ দিক হল অঞ্চলভিত্তিক প্রতিযোগিতার পাশাপাশি একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের জন্য ক্যারিয়ার সচেতনতামূলক কর্মশালা আয়োজন। এর মাধ্যমে হসপিটালিটি শিক্ষার প্রতি ছাত্রদের আগ্রহ জাগানো এবং রন্ধনশিল্পে পেশাগত ভবিষ্যৎ গঠনের পথ দেখানো হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পিএইচডিসিসিআই-এর ট্যুরিজম কমিটির কো-চেয়ার রাজন সেহগাল বলেন, “এই প্রতিযোগিতা শুধু একটি ইভেন্ট নয়, বরং এক সাংস্কৃতিক আন্দোলন যা রন্ধনশিল্প, শিক্ষা ও তরুণ সমাজকে একত্রিত করে।” আইএফসিএ-র সভাপতি ড. শেফ মঞ্জিত গিল বলেন, “এনওয়াইসিসি এক সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের ডাক। এটি আমাদের রন্ধন ঐতিহ্যকে নতুনভাবে চেনার ও চেনানোর সুযোগ।” উপস্থিত ছিলেন আরও বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি, যেমন শেফ সুধীর সিবল, শেফ অনিল গ্রোভার, টিএইচএসসি-এর সিইও রাজন বাহাদুর, আইএইচএম পুসার অধ্যক্ষ প্রফেসর কমল কান্ত পন্থ, লে মেরিডিয়েন হোটেলের আমরজিৎ সিং অহুজা এবং পিএইচডিসিসিআই-এর শালিনী এস শর্মা, যিনি প্রতিযোগিতার পূর্ণ রোডম্যাপ উপস্থাপন করেন।
ভারতজুড়ে ১৩০টিরও বেশি হসপিটালিটি ইনস্টিটিউট এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। অংশীদার হিসেবে রয়েছেন নেসলে প্রফেশনাল, ভেনাস ইন্ডাস্ট্রিজ, ওয়াঘ বাকরি টি গ্রুপ, ক্রেমিকা, ম্যাককেইন ফুডস সহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান। বিজয়ীদের জন্য থাকছে নগদ পুরস্কার, নামী হোটেল ও রন্ধন প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ, আন্তর্জাতিক এক্সপোজার, এবং একটি বিশেষ ‘বেস্ট সাসটেইনেবল ডিশ’ পুরস্কার।
‘ন্যাশনাল ইয়ং শেফ কম্পিটিশন’ নিঃসন্দেহে ভারতের রন্ধন ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের মধ্যে জনপ্রিয় করে তুলবে এবং শেফদের একটি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ করে দেবে। এটি ভবিষ্যতের ভারতের রন্ধনশিল্পকে আরও শক্তিশালী ও গ্লোবালি প্রশংসিত করে তুলতে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

