‘বিকশিত ভারত’ অর্জনে ‘বিকশিত গ্রাম’ গড়ে তোলার আহ্বান গ্রামীণ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী পেম্মাসানি চন্দ্রশেখরের

নয়াদিল্লি, ১৪ জুলাই — “২০৪৭ সালের মধ্যে একটি বিকশিত ভারত গড়ে তুলতে চাইলে, আমাদের আগে গড়ে তুলতে হবে ‘বিকশিত গ্রাম’।” — এই আহ্বান জানালেন কেন্দ্রীয় গ্রামীণ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী পেম্মাসানি চন্দ্রশেখর। আজ নতুন দিল্লিতে গ্রামীণ উন্নয়ন মন্ত্রকের পারফরম্যান্স রিভিউ কমিটির প্রথম বৈঠকে ভাষণ প্রদান করতে গিয়ে তিনি এই কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, “একটি বিকশিত গ্রাম কেবল একটি ধারণা নয়, এটি একটি বাস্তবতায় রূপ দিতে পারে, যদি আমরা শক্তি, উদ্ভাবনী চিন্তা এবং প্রতিশ্রুতি নিয়ে একযোগে কাজ করি। এমন একটি গ্রামে প্রত্যেক পরিবারে পাকা ঘর থাকবে, মৌলিক নাগরিক সুবিধা থাকবে, প্রত্যেক গ্রাম থাকবে উন্নত সড়ক যোগাযোগে সংযুক্ত, যুবকদের জন্য থাকবে কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং মহিলারা হবেন ক্ষমতাশালী ও আর্থিকভাবে স্বনির্ভর।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা কেবল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি না, আমরা দেশের উন্নয়নের পরবর্তী অধ্যায় লিখছি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং মন্ত্রিসভার সদস্য শ্রী শিবরাজ সিং চৌহানের নেতৃত্বে গ্রামীণ উন্নয়নে দেশে নজরকাড়া অগ্রগতি হয়েছে।”
চন্দ্রশেখর মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি স্কিম -এর সফলতা তুলে ধরেন, যা গ্রামীণ বেকারত্ব এবং মরসুমি অভ্যন্তরীণ অভিবাসন ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
তিনি জানান, প্রতি বছর ৯০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ কোটি টাকার কেন্দ্রীয় বিনিয়োগের মাধ্যমে এই প্রকল্পের আওতায় গড়ে ২৫০ কোটি ব্যক্তি-দিন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৩৬ কোটি জব কার্ড ইস্যু হয়েছে এবং ১৫ কোটিরও বেশি শ্রমিক সক্রিয়ভাবে এই প্রকল্পের সুবিধা নিচ্ছেন।
মন্ত্রী বলেন, “আমাদের শুধু মজুরি প্রদানের দিকেই মনোযোগ দিলে চলবে না, বরং এমজিএনআরইজিএসের মাধ্যমে উৎপাদনশীল ও টেকসই সম্পদ তৈরিতে মনোনিবেশ করতে হবে। বৈচিত্র্যপূর্ণ কাজ, অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গে একীকরণ এবং স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে প্রকল্প নির্বাচন এই কর্মসূচির প্রভাব আরও বাড়াতে পারে।”
মন্ত্রী পেম্মাসানি চন্দ্রশেখর জানান, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা–গ্রামীণ এর মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৩.২২ কোটি পরিবারকে কাঁচা ঘর থেকে পাকা ঘরে পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে। আগামী ২০২৯ সালের মধ্যে আরও ২ কোটি পাকা ঘর নির্মাণের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে, কারণ পরিবার বৃদ্ধির সঙ্গে গ্রামীণ আবাসনের চাহিদাও দ্রুত বাড়ছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, “পরিবেশবান্ধব এবং স্থানীয় পরিস্থিতির উপযোগী নির্মাণ প্রযুক্তির ব্যবহার, এবং সাশ্রয়ী নকশা প্রয়োগ করে আরও কার্যকর ও টেকসই হাউজিং মডেল গড়ে তোলা উচিত।”
মন্ত্রী জানান, “প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে রাস্তা পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এখনও পর্যন্ত ৭.৫৬ লক্ষ কিমি সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।” তিনি রাজ্য-স্তরের রোড মেইনটেন্যান্স ফান্ড গঠন, সম্প্রদায়ভিত্তিক পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা এবং উদ্ভাবনী অর্থায়ন মডেল তৈরির পরামর্শ দেন, যাতে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা যায়।
মন্ত্রী জানান, দীনদয়াল অন্ত্যোদয় যোজনা – ন্যাশনাল রুরাল লাইভলিহুড মিশন গ্রামীণ মহিলাদের সামাজিক ও আর্থিক ক্ষমতায়নের শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
এ পর্যন্ত ১০.০৫ কোটি মহিলাকে ৯১ লাখ স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে সংগঠিত করা হয়েছে এবং তাদের ব্যাংক লিঙ্কেজ ছাড়িয়েছে ১১ লক্ষ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, “লক্ষপতি দিদি উদ্যোগের আওতায় ইতিমধ্যেই ১.৫ কোটি মহিলা বছরে ১ লক্ষ টাকা বা তার বেশি আয় করছেন। এই উদ্যোগের লক্ষ্যমাত্রা ৩ কোটি মহিলা। আমাদের আরও লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে—তাদের জন্য টার্গেটেড ক্রেডিট, উচ্চমানের দক্ষতা এবং বাজার-উপযোগী সাপোর্ট দিতে হবে।”
দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রামীণ কৌশল্য যোজনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, “এখন পর্যন্ত ১৭ লক্ষেরও বেশি গ্রামীণ যুবককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং তাদের মধ্যে ১১ লক্ষের বেশি তরুণকে সুনিশ্চিত কর্মসংস্থানে যুক্ত করা হয়েছে।”
এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন গ্রামীণ উন্নয়ন মন্ত্রকের অপর প্রতিমন্ত্রী কামলেশ পাসওয়ান, সচিব শৈলেশ কুমার সিং, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের অন্যান্য জ্যেষ্ঠ আধিকারিকরা।
পেম্মাসানি চন্দ্রশেখর তাঁর বক্তব্যের শেষে বলেন, “গ্রামীণ উন্নয়ন হচ্ছে দেশের মেরুদণ্ডকে শক্তিশালী করা। যদি প্রতিটি গ্রাম বিশ্বিত হয়, তবে ভারত বিশ্বগুরু হওয়ার পথে অনেকটাই এগিয়ে যাবে।”