শিলং, ১০ জুলাই : মেঘালয় রাজ্যকে চলচ্চিত্র নির্মাণের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে, মেঘালয় ক্যাবিনেট ২০২৫ সালের ফিল্ম ট্যুরিজম নীতি অনুমোদন করেছে। এই নতুন নীতি রাজ্যকে শুধু উত্তরপূর্ব ভারতের একটি প্রধান চলচ্চিত্র গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে না, বরং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎপাদন ক্ষেত্রেও মেঘালয়কে আরও দৃঢ়ভাবে তুলে ধরবে।
মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড কে. সাঙ্গমা এই নীতির অনুমোদনের কথা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, এই পদক্ষেপ রাজ্যকে চলচ্চিত্র নির্মাণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে সহায়ক হবে এবং এর মাধ্যমে মেঘালয়ের বিশাল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করবে।
মুখ্যমন্ত্রী সাঙ্গমা জানান, নতুন ফিল্ম ট্যুরিজম নীতি তৈরি করতে একটি বিস্তৃত পরামর্শ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে, যেখানে রাজ্যের বিভিন্ন ফিল্ম নির্মাতা, শিল্পী, পর্যটন বিশেষজ্ঞ, এবং সরকারি প্রতিনিধির মতামত সংগ্রহ করা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা ২০০টিরও বেশি স্টেকহোল্ডারদের মতামত গ্রহণ করেছি এবং তাদের পরামর্শগুলি নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করেছি।”
এই নীতির মাধ্যমে মেঘালয় তার সিনেমাটিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চায়, যা কেবল রাজ্যব্যাপী নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের আকৃষ্ট করবে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “আমরা জানি যে মেঘালয়ের প্রকৃতি, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এই নীতির মাধ্যমে, আমরা রাজ্যকে শুধুমাত্র ভারতের নয়, বরং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।”
তিনি বলেন, “মেঘালয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণে সহায়তা দেওয়ার জন্য একটি ফিল্ম ফ্যাসিলিটেশন সেল গঠন করা হয়েছে। এই সেলে পর্যটন, শিল্প ও সংস্কৃতি, ডিআইপিআর (ডিরেক্টরেট অফ ইনফরমেশন অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস), এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের প্রতিনিধিরা একত্রিত হয়ে মেঘালয়কে একটি প্রধান চলচ্চিত্র গন্তব্য হিসেবে প্রচার করবেন।”
নতুন নীতি চলচ্চিত্র নির্মাণকে উৎসাহিত করতে একাধিক আর্থিক প্রণোদনা এবং সহায়তার ব্যবস্থা প্রদান করবে। যে চলচ্চিত্রগুলি মেঘালয়ে শুটিং করবে এবং রাজ্যের পর্যটনকে প্রচার করবে, তাদের জন্য ১ কোটি রুপি বা মোট উৎপাদন খরচের ২৫% পর্যন্ত প্রণোদনা প্রদান করা হবে। এই সুবিধাটি জাতীয় বা আন্তর্জাতিক ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্রগুলির জন্য প্রযোজ্য হবে, যেখানে কমপক্ষে ৭৫% শুটিং মেঘালয়ে হবে।
স্থানীয় ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্রের জন্য আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রণোদনা রয়েছে। খাসি, পনর এবং গারো ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্রগুলির জন্য ৫০ লাখ রুপি সহায়তা বরাদ্দ করা হবে, যা প্রতি দুই বছরে একবার গ্রহণযোগ্য। এটি স্থানীয় চলচ্চিত্র নির্মাতাদের উৎসাহিত করতে এবং স্থানীয় কাহিনী ও সংস্কৃতির প্রতি বিশ্বজনতার আগ্রহ সৃষ্টি করতে সাহায্য করবে।
এছাড়াও, মেঘালয়ে নির্মিত টিভি সিরিয়াল, ওয়েব সিরিজ এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য সহায়তা প্রদান করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন যে, মেঘালয়ের একমাত্র সরকারী ফান্ডেড ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, ‘হ্যালো মেঘালয় অ্যাপ’, এই শোগুলির প্রচারের জন্য একটি বড় ভূমিকা পালন করবে।
নতুন নীতিতে বিশেষভাবে মেঘালয়ের অনন্য কাহিনী এবং প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী তুলে ধরার জন্য ডকুমেন্টারি এবং শর্ট ফিল্ম নির্মাতাদের জন্যও আর্থিক সহায়তা এবং গ্র্যান্ট ঘোষণা করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সাঙ্গমা বলেছেন, “মেঘালয়ে শুট করা ডকুমেন্টারি এবং শর্ট ফিল্মগুলি রাজ্যের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করবে, এবং আমরা সেগুলির জন্য বিশেষভাবে সহায়তা প্রদান করব।”
একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে, মেঘালয় সরকার ঘোষণা করেছে যে রাজ্যে একটি চলচ্চিত্র স্টুডিও নির্মাণ করা হবে। এটি অনেক দিন ধরে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একটি দীর্ঘস্থায়ী দাবি ছিল এবং এটি তাদের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। মন্ত্রী লিঙডো জানান, “এই চলচ্চিত্র স্টুডিওটি মেঘালয়ে চলচ্চিত্র উৎপাদন এবং পরবর্তী প্রজন্মের নির্মাতাদের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।”
মেঘালয়ের ফিল্ম ট্যুরিজম নীতি ২০২৫ রাজ্যকে একটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র গন্তব্য হিসেবে গড়ে তোলার দিকে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই নীতি শুধুমাত্র চলচ্চিত্র নির্মাণের শিল্পের উন্নতি ঘটাবে না, বরং মেঘালয়ের সংস্কৃতি, ইতিহাস, এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে পৃথিবীজুড়ে তুলে ধরবে। মেঘালয়ের চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য এই নতুন উদ্যোগটি আগামী দিনে রাজ্যের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্যও একটি বড় ভূমিকা পালন করবে।

