বিজেপি বাংলায় নতুন সভাপতি ও কৌশল ঘোষণা, ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু

কলকাতা, ১০ জুলাই : পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি নতুন সভাপতি ও নতুন কৌশল ঘোষণা করেছে। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলটি রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং তার কৌশলগত লক্ষ্য পরিবর্তন করেছে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে সামিক ভট্টাচার্যকে রাজ্য শাখার সভাপতি হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে, যিনি আগামী নির্বাচনে বিজেপির লড়াইয়ের নতুন নেতৃত্ব দেবেন।

পূর্ববর্তী সময়ে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে তার হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি ও ধর্মীয় সংস্কৃতির প্রচারের জন্য পরিচিত ছিল। তবে, এবার তারা রাজ্যের জনগণের কাছে “বাংলার সাংস্কৃতিক অধঃপতন” নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব বিশেষত অমিত মালভিয়া, যিনি পশ্চিমবঙ্গে দলের মিডিয়া সেলের প্রধান, রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যর্থতা এবং সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ের জন্য দায়ী করেছেন।

মালভিয়া একাধিক ভিডিও প্রকাশ করেছেন, যেগুলিতে তৃণমূল ছাত্রনেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তারা কলেজ ক্যাম্পাস ও ছাত্র ইউনিয়ন অফিসগুলোকে যৌন শোষণ ও সিস্টেমেটিক অপব্যবহারের জন্য ব্যবহার করেছে। এসব ভিডিও রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে এবং বিজেপি এই বিষয়টিকে আগামী নির্বাচনের প্রচারের একটি মুখ্য ইস্যু হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে।

বিজেপি অভিযোগ করেছে, মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার পর, রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার যে বিপর্যয় ঘটেছে তা বর্তমান ছাত্রদের জন্য বড় একটি সমস্যার সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে, রাজ্যের অনেক ছাত্রছাত্রী মুম্বই, বেঙ্গালুরু, এবং ওড়িশার মতো অন্যান্য রাজ্যে উচ্চশিক্ষার জন্য চলে যাচ্ছে। বিজেপির মতে, তারা নিরাপদ এবং মানসম্মত শিক্ষা পরিবেশ খুঁজছেন, যা বাংলায় সেভাবে উপলব্ধ নয়।

অমিত মালভিয়া এবং অন্য বিজেপি নেতারা অভিযোগ করেছেন যে মমতা ব্যানার্জির সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে এবং রাজ্য সরকারের অব্যবস্থাপনার কারণে শিক্ষার্থীরা অন্যান্য রাজ্যে ভালো শিক্ষা গ্রহণের জন্য বাধ্য হচ্ছে।

রাজ্যের মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়েও বিজেপি একাধিক বার অভিযোগ তুলেছে। সম্প্রতি সাঁদেশখালি, আরজি কর হাসপাতাল, এবং কলকাতার একটি আইন কলেজে ধর্ষণের ঘটনার পরে বিজেপি মহিলাদের নিরাপত্তার বিষয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছে। বিজেপির পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছে যে, রাজ্যে মহিলাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং যৌন নিপীড়ন বাড়ছে এবং এই বিষয়টি দ্রুত সমাধান করতে হবে।

বিজেপির ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম, যেটি প্রাক্তন মুম্বই পুলিশ কমিশনার সত্য পাল সিংহের নেতৃত্বে গঠিত, সেগুলির তদন্তের জন্য একটি বিচারিক কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে। রাজ্য বিজেপি নেতারা দাবি করেছেন যে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক এবং তা পুনরুদ্ধার করতে মমতা সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

বিজেপির বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, যিনি মমতা ব্যানার্জির প্রাক্তন সহকর্মী ছিলেন, এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন যে তৃণমূল ছাত্রনেতারা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন কলেজ ক্যাম্পাসে তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। অধিকারী দাবি করেছেন, এর প্রমাণস্বরূপ ৫০টি আলাদা ছবি প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে তৃণমূল ছাত্রনেতাদের ক্ষমতা অপব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে।

এছাড়া, শুভেন্দু অধিকারী ঘোষণা করেছেন যে ২১ জুলাই, যখন মমতা ব্যানার্জি তার বার্ষিক ‘শহীদ দিবস’ সমাবেশ করবেন, ঠিক সেই দিনই বিজেপি একটি বিশেষ র‍্যালি করবে, যা মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা তৈরি করবে। এই র‍্যালিকে ‘কন্যা সুরক্ষা যাত্রা’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। এই যাত্রাটি রাজ্যের সমস্ত জেলার মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে এবং এতে মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য নতুন আইন ও পদক্ষেপের দাবী উঠবে।

বিজেপি যখন এই কন্যা সুরক্ষা যাত্রার পরিকল্পনা করছে, তখন শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনার সি সুধাকর বিজেপিকে তাদের র‍্যালি বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও বিজেপি এই নির্দেশের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে এবং জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে এটি চ্যালেঞ্জ করার ঘোষণা করেছে। বিজেপি নেতারা বলেছেন, তাদের এই যাত্রা কোনোভাবেই রাজ্যের গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘন করছে না এবং তারা এই পরিস্থিতিতে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

বিজেপির নতুন কৌশল অনুযায়ী, তারা মমতা ব্যানার্জির সরকারকে শিক্ষা, সাংস্কৃতিক, এবং মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে চ্যালেঞ্জ জানাবে। রাজ্যে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি তাদের নতুন কৌশল এবং নেতৃত্বের সঙ্গে তৃণমূলকে প্রতিযোগিতায় ফেলবে। নতুন সভাপতি সামিক ভট্টাচার্য রাজ্য নেতৃত্বে আসার পর, বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের জনগণের মধ্যে এক নতুন আশার আলো দেখানোর চেষ্টা করছে।

এখন দেখার বিষয় হবে, বিজেপির এই নতুন কৌশল কতটা কার্যকরী হয় এবং রাজ্যের ভোটারদের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হয়।