ভুবনেশ্বর, ৯ জুলাই : মৎস্যখাতে অসামান্য অবদান রাখা দেশজুড়ে লাখো মৎস্যচাষিদের প্রতি সম্মান জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে আগামী ১০ জুলাই ২০২৫ উদ্যাপন করা হবে জাতীয় মৎস্যচাষি দিবস ২০২৫। এই উপলক্ষে এক বৃহৎ আয়োজনের আয়োজন করা হয়েছে আইসিএআর–সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অব ফ্রেশওয়াটার অ্যাকোয়াকালচার, ভুবনেশ্বর–এ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় মৎস্য, পশুপালন ও ডেইরি দফতরের মন্ত্রী ও পঞ্চায়েতি রাজ মন্ত্রকের মন্ত্রী শ্রী রাজীব রঞ্জন সিংহ, এছাড়াও থাকবেন প্রো. এস.পি. সিং বাঘেল, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী এবং শ্রী জর্জ কুরিয়েন, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী। উপস্থিত থাকবেন ওড়িশার মৎস্য মন্ত্রী শ্রী গোকুলানন্দ মালিক।
এই দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য হল ১৯৫৭ সালের ১০ জুলাই তারিখে ভারতীয় প্রধান কার্প প্রজাতির হাইপোফাইজেশন প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃত্রিম প্রজনন ঘটানোর কৃতিত্বপ্রাপ্ত প্রফেসর ডঃ হীরালাল চৌধুরী এবং ডঃ কে. এইচ. আলিকুনহি-র ঐতিহাসিক সাফল্যকে স্মরণ করা। সেই সময়কার সেই বৈজ্ঞানিক মাইলফলক আজকের ভারতের অন্তঃস্থ জলজ চাষ তথা ইনল্যান্ড অ্যাকোয়াকালচারে বিপ্লব এনেছে।
জাতীয় মৎস্যচাষি দিবস শুধুমাত্র বিজ্ঞানী ও গবেষকদের কৃতিত্বকেই নয়, বরং দেশের কোটি কোটি মাছচাষি, মৎস্যজীবী ও উদ্যোক্তাদের অশেষ পরিশ্রম এবং উৎসর্গকেও স্বীকৃতি দেওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ। মৎস্য খাত এখন শুধু খাদ্য নিরাপত্তা নয়, বরং গ্রামীণ কর্মসংস্থান ও রপ্তানিতে ভারতের এক বড় শক্তি।
২০১৫ সাল থেকে কেন্দ্রীয় সরকার ৩৮,৫৭২ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ করেছে মৎস্য খাতে, যার ফলস্বরূপ ভারতীয় মৎস্য উৎপাদন ২০১৩-১৪ সালের ৯৫.৭৯ লক্ষ টন থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ১৯৫ লক্ষ টনে পৌঁছেছে, যা ১০৪% বৃদ্ধি।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, ইনল্যান্ড ফিশারিজ ও অ্যাকোয়াকালচারে ১৪০% বৃদ্ধি ঘটেছে। এই উন্নয়ন প্রমাণ করে দেশের জলসম্পদের দক্ষ ব্যবহার ও সরকারের কৌশলগত পদক্ষেপ কতটা কার্যকর।
শুধু তাই নয়, ভারতের সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানি ₹৬০,৫০০ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে, এবং চিংড়ি উৎপাদনে ২৭০% বৃদ্ধি পেয়েছে গত দশকে, যার ফলে লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে এবং দেশের মৎস্যজীবীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ঘটেছে।
জাতীয় মৎস্যচাষি দিবস ২০২৫ উপলক্ষে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী রাজীব রঞ্জন সিং একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন, যা দেশের মৎস্য খাতকে আরও সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করে তুলবে। এই উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম হলো নতুন মৎস্য ক্লাস্টারের ঘোষণা, যা আঞ্চলিকভাবে মাছচাষ ও প্রক্রিয়াকরণের পরিকাঠামো গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি, আইসিএআর-এর পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হবে একটি বাৎসরিক প্রশিক্ষণ ক্যালেন্ডার, যা মাছচাষিদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগে সহায়ক হবে। এছাড়াও, বীজ সার্টিফিকেশন এবং হ্যাচারি পরিচালনার জন্য নতুন গাইডলাইন উন্মোচন করা হবে, যা গুণগতমান নিশ্চিত করার পাশাপাশি উৎপাদন ব্যবস্থাকে আরও মানসম্মত করে তুলবে।
এই বিশেষ দিনে প্রধানমন্ত্রী মাছসম্পদ যোজনা -র আওতায় নির্মিত একাধিক প্রকল্পের ভার্চুয়াল ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও কিছু প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও করা হবে। এই প্রকল্পগুলি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পরিকাঠামো উন্নয়ন, উদ্যোগপনার প্রসার এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে গৃহীত হয়েছে। মৎস্যচাষে বিশেষ অবদান রাখা উদ্যোক্তা, সমবায় সংস্থা, এফএফপিও সংস্থা, কেসিসি কার্ডধারী, এবং উদীয়মান স্টার্ট-আপদের সংবর্ধিত করা হবে, যা তাঁদের কাজের স্বীকৃতি এবং আগামী দিনে আরও বড় পরিসরে এগিয়ে চলার প্রেরণা জোগাবে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা তাঁদের ভাষণে ভারতের মৎস্য খাতের সামগ্রিক অগ্রগতি, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, এবং জলজ সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার উপর আলোকপাত করবেন। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরের সিনিয়র কর্মকর্তারা এই অনুষ্ঠান অংশ নেবেন এবং মৎস্য ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন।
জাতীয় মৎস্যচাষি দিবস কেবলমাত্র একটি অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি কোটি কোটি মাছচাষিদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের দিন। যাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও উদ্ভাবনী চেতনা আজ ভারতকে একটি ব্লু ইকোনমির নেতৃত্বস্থানীয় দেশ করে তুলেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘নীল বিপ্লব’-ভিত্তিক নীতিমালা আগামীদিনে মাছচাষকে আরও প্রযুক্তিনির্ভর, লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব করে তুলবে—এমনই আশা মৎস্যখাত সংশ্লিষ্ট সকলের।

