দিল্লিতে পুরনো গাড়ির উপর নিষেধাজ্ঞা স্থগিত রাখার পরামর্শ: মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখলেন লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভি কে সাক্সেনা

নয়া দিল্লি, ৬ জুলাই: দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভি কে সাক্সেনা রাজধানীতে ১০ বছরের বেশি পুরনো ডিজেল এবং ১৫ বছরের বেশি পুরনো পেট্রোলচালিত গাড়ির উপর জারি থাকা নিষেধাজ্ঞা সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার জন্য দিল্লি সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তাকে এক বিস্তারিত চিঠি পাঠিয়ে জনগণের বাস্তব পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক চাপ এবং আইনগত অসামঞ্জস্যের প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন।

চিঠিতে সাক্সেনা বলেছেন, দিল্লির সাধারণ জনগণ বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ, এই নিষেধাজ্ঞার জন্য প্রস্তুত নয়। তিনি বলেন, “ভারতের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জন্য একটি গাড়ি কেনা শুধুমাত্র যানবাহন কেনা নয়, বরং এটি তাদের দীর্ঘদিনের সঞ্চিত অর্থ এবং আবেগের প্রতিফলন। দিল্লিতে বসবাসের কারণে শুধুমাত্র এখানকার বাসিন্দাদের উপর পুরনো গাড়ি স্ক্র্যাপ করার জোরজবরদস্তি চাপিয়ে দেওয়া একধরনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য।”

চিঠিতে তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, দিল্লি সরকার যেন এই সংক্রান্ত পূর্ববর্তী আদেশের পুনর্বিবেচনার জন্য সুপ্রিম কোর্টে একটি রিভিউ পিটিশন দাখিল করে। এতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে বাস্তবায়িত নীতিমালা আদালতের সামনে তুলে ধরারও পরামর্শ দেন সাক্সেনা।

তিনি বলেন, “এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় যে, আদালতকে জানানো হোক দিল্লি সরকার দূষণ নিয়ন্ত্রণে কী কী উদ্যোগ নিয়েছে এবং এ ধরনের নিষেধাজ্ঞার ফলে জনগণের উপর কী ধরনের প্রভাব পড়ছে। আইন কেবল তখনই কার্যকর, যখন তা বাস্তব জীবনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।”

সম্প্রতি রাজধানীতে পুরনো গাড়ি বিক্রির পরিমাণ হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। এই প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, “অনেকেই উচ্চমূল্যে কেনা প্রিমিয়াম বা উচ্চমানের গাড়ি অত্যন্ত কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এই গাড়িগুলি অনেক ক্ষেত্রেই সামান্য ব্যবহার হয়েছে এবং এখনো নিরাপত্তা ও নির্গমন মানদণ্ডে পূর্ণ।”

তিনি আরো বলেন, “যে গাড়িগুলি মাত্র কয়েক হাজার কিলোমিটার চলেছে এবং যেগুলি এখনও পুরোপুরি সচল ও ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষিত, সেগুলি কেবল আইনগত মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে স্ক্র্যাপ করা অনৈতিক ও অমানবিক।”

দিল্লি দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট করিডরের অংশ, যেখানে পূর্ব, পশ্চিম, ও উত্তর ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে ব্যাপক যান চলাচল হয়। সাক্সেনা বলেন, “অনেক মানুষ দিল্লির মধ্য দিয়ে নিজেদের গাড়িতে যাতায়াত করেন। তাদের গাড়ি তাদের নিজ রাজ্যে আইনসম্মত হলেও দিল্লিতে নিষিদ্ধ হিসেবে গণ্য হচ্ছে। এতে অসংখ্য যাত্রী এবং ব্যবসায়ীদের সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে।”

চিঠির শেষে লেফটেন্যান্ট গভর্নর দিল্লি সরকারকে একটি সমন্বিত দূষণ নিয়ন্ত্রণ কৌশল তৈরি করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “পরিবহন, শিল্প, আবাসন এবং নির্মাণ খাতসহ সমস্ত সেক্টরের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা এবং বিনিয়োগ পরিকল্পনার ভিত্তিতে দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি বাস্তবধর্মী এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।”

তিনি এও পরামর্শ দেন, এই পরিকল্পনা যেন আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রস্তুত করা হয় এবং জনগণের কাছে স্বচ্ছভাবে উপস্থাপন করা হয়।

উল্লেখ্য, দিল্লিতে ২০১৫ সাল থেকে পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে একটি কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা হয়েছে। ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনাল এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, রাজধানীতে ১০ বছরের বেশি পুরনো ডিজেল এবং ১৫ বছরের বেশি পুরনো পেট্রোল গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ। যদিও এই নীতির লক্ষ্য হলো বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ, কিন্তু এর বাস্তবায়নে বহু নাগরিক ও পরিবহন শিল্পের প্রতিনিধিরা অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছেন।

লে. গভর্নর সাক্সেনার এই চিঠি দিল্লির বর্তমান পরিবেশনীতি এবং তার সামাজিক প্রভাব নিয়ে নতুন করে বিতর্কের সূচনা করেছে। এখন দেখার বিষয়, মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা ও দিল্লি সরকার এই প্রস্তাবনা কীভাবে গ্রহণ করে এবং আগামী দিনে শহরের পরিবেশনীতি কোন পথে এগোয়।