রাজ্যে বিদ্যুৎ খাতে নতুন দিগন্ত: ২০১৮ সাল থেকে অভূতপূর্ব উন্নয়ন – মন্ত্রী রতন লাল নাথ

আগরতলা, ৩০ জুন: ত্রিপুরায় বিদ্যুৎ খাতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতন লাল নাথ আজ ঘোষণা করেছেন যে ২০১৮ সাল থেকে রাজ্যের বিদ্যুৎ খাতে এক অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটেছে এবং আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে এই খাতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পরিষেবা নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর।

চিকিৎসা সেবায় কোনো ধরনের বিঘ্ন যাতে না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে মন্ত্রী জানান, রাজ্যের সমস্ত হাসপাতালে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে পৃথক বিদ্যুৎ সংযোগের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এটি রোগীদের স্বার্থে সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
মন্ত্রী বলেন, রাজ্যের বিদ্যুৎ পরিষেবার সম্প্রসারণ ও নিরবচ্ছিন্ন যোগান নিশ্চিত করতে রাজ্য সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে এবং বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
আজ মজলিশপুর বিধানসভা কেন্দ্রের রাণীরবাজারে ৩৩ কেভি সাব-স্টেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন। উত্তর-পূর্বাঞ্চল বিদ্যুৎ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১০.৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সাব-স্টেশনটি নির্মিত হয়েছে।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান উৎস কয়লা ও গ্যাসের পরিমাণ ক্রমশ হ্রাস পাওয়ায়, মন্ত্রী জানান যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দিকনির্দেশ অনুসারে ত্রিপুরা সরকার ও বিদ্যুৎ দপ্তর সৌরবিদ্যুৎ সংযোগ বাড়ানোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। এটি রাজ্যের দীর্ঘমেয়াদী বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে।

মন্ত্রী রতন লাল নাথ বিদ্যুৎ খাতে গত সাত বছরের অগ্রগতি তুলে ধরে বলেন, ২০১৮ সালের আগে রাজ্যে প্রায় ৭ লক্ষ বিদ্যুৎ গ্রাহক ছিলেন, যা বর্তমানে ১০.৩১ লক্ষে পৌঁছেছে। অর্থাৎ, সাত বছরে ৩.৩১ লক্ষ নতুন গ্রাহক যুক্ত হয়েছেন। গত ৩৫ বছরে যেখানে মাত্র ১২টি ৩৩ কেভি সাব-স্টেশন স্থাপন করা হয়েছিল, সেখানে এই সাত বছরে ২০টি সম্পূর্ণ করা হয়েছে। ১৩২ কেভি লাইনের দৈর্ঘ্য ৪৮৫ কিলোমিটার থেকে বেড়ে ৯৮৬ কিলোমিটার হয়েছে। ৩৩ কেভি সাব-স্টেশনের সংখ্যা ৪২ থেকে বেড়ে ৭৪ হয়েছে। ১১ কেভি সাব-স্টেশন ১৬,৮২১ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১,৫৯৮। আন্ডারগ্রাউন্ড কেবল আগে ছিল মাত্র ৯৫ কিমি, এখন তা ৫৭১ কিমি। আগে কোনো প্রিপেইড মিটার ছিল না—এখন ১,৬১,৭০০টি প্রিপেইড মিটার এবং ৭১,৯৪৬টি স্মার্ট মিটার বসানো হয়েছে।

মন্ত্রী ‘হুক লাইন’-এর অপব্যবহার বন্ধ করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি জানান, ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ‘হুক লাইন’ সনাক্ত করা হবে এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করেই ‘লাইভ লাইন’-এ কাজ করার নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।
তিনি আরও জানান, রানির বাজার প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্য পৃথক বিদ্যুৎ সংযোগের পরিকল্পনা চলছে এবং একইভাবে রাজ্যের অন্যান্য হাসপাতালেও এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
রাজ্যের অভ্যন্তরীণ গ্রিডকে আরও শক্তিশালী করতে সূর্যমণিনগরে একটি ৪০০ কেভি সাব-স্টেশন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও, ১৮০০ কোটি টাকার বিদ্যুৎ পরিবহন অবকাঠামো আধুনিকীকরণ প্রকল্প বর্তমানে চলমান। এই প্রকল্পের অধীনে ৯টি নতুন ১৩২ কেভি সাব-স্টেশনের মধ্যে ৮টি সম্পন্ন হয়েছে এবং ৭টি পুরনো ১৩২ কেভি সাব-স্টেশনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। আগরতলা ৭৯ টিলা থেকে রুখিয়া পর্যন্ত পুরনো লাইনে নতুন প্রযুক্তির কেবল সংযুক্ত করা হচ্ছে।

এই সকল পদক্ষেপ ত্রিপুরাকে একটি উন্নত এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পরিষেবাযুক্ত রাজ্য হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।