কলকাতা, ৩০ জুন: কলকাতার কসবা এলাকায় এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগের প্রেক্ষিতে চার সদস্যের একটি তথ্য অনুসন্ধানী দল গঠন করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। দলীয় সর্বভারতীয় সভাপতি জে.পি. নাড্ডার নির্দেশে এই দল গঠিত হয়েছে। সোমবার দুপুরের মধ্যেই দলটি কলকাতায় পৌঁছে গেছে। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রশাসন ঘটনাস্থলে যেতে এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করার অনুমতি দিচ্ছে না। এটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিপন্থী, তোপ দাগলেন বিপ্লব।
প্রসঙ্গত, বিজেপির তথ্য অনুসন্ধানী দলে রয়েছেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যসভার সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সত্যপাল সিং, মীনাক্ষী লেখী এবং রাজ্যসভার সাংসদ মননকুমার মিশ্র। কলকাতা বিমানবন্দরে তাঁদের স্বাগত জানান রাজ্য বিজেপি নেত্রী তথা বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল।
কলকাতায় পা রেখেই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন বিপ্লব দেব। তিনি বলেন, আমরা মুখ্যসচিবের কাছে সময় চেয়েছি, এখনও পর্যন্ত সম্মতি মেলেনি। কলেজে যাওয়ার অনুমতিও দেওয়া হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাথরস বা পহেলগাঁওয়ে টিম পাঠাতে পারেন, অথচ বিরোধী দলের প্রতিনিধি দল এলে তাঁদের বাধা দেওয়া হয়। এটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিপন্থী, তোপ দাগেন তিনি।
সাথে তিনি যোগ করেন, বাংলায় মহিলারা সুরক্ষিত নন। যিনি আইন পড়ছেন, ভবিষ্যতে অন্যদের হয়ে লড়বেন, তাঁর সঙ্গেই এমন ঘটনা ঘটেছে। এটাই প্রমাণ করে রাজ্যে নারীদের নিরাপত্তা নেই। একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর শাসনে এ ঘটনা অত্যন্ত লজ্জাজনক, উষ্মা প্রকাশ করেন বিপ্লব।
মীনাক্ষী লেখী বলেন, মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যে বার বার এমন ঘটনা ঘটছে। প্রশাসনের যদি আমাদের সঙ্গে দেখা করার সময় না থাকে, তাহলে তাঁরা আদৌ কী করছেন তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। আমরা শুধু সত্যটা জানতে এসেছি।
সত্যপাল সিং আশাবাদী, তিনি বলেন, নাড্ডার নির্দেশে আমরা এসেছি। আশা করছি মমতা দিদির সরকার আমাদের ঘটনাস্থলে যেতে দেবে, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ দেবে, পুলিশ কমিশনারের সঙ্গেও কথা বলতে পারব।
এদিকে, এদিন বিজেপির তথ্য অনুসন্ধানী দলটি কসবায় দক্ষিণ কলকাতা ল কলেজে যায়, যেখানে এই নৃশংস ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। সেখান থেকে তাঁরা সাংবাদিক বৈঠকেও মিলিত হয়েছেন। কিন্তু কলেজে প্রবেশ করার সময় চরম বাধার সম্মুখীন হয় বিজেপির তথ্য অনুসন্ধানকারী দল। শেষ পর্যন্ত পুলিশ তাদের কলেজে প্রবেশ করতে অনুমতি দেয়। সেখানে গিয়ে দলের সদস্যরা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এদিকে তখন কসবা কলেজের বাইরে ধুন্ধুমার কান্ডের সৃষ্টি হয়। বাইরে বিজেপি কর্মী সমর্থক এবং রাতজাগা অধিকার মঞ্চের সদস্যদের মধ্যে তীব্র ঝামেলার সৃষ্টি হয়। হাত্রাসের ঘটনায় কোথায় ছিল বিজেপির এই টিম, প্রশ্ন তুলেছেন অধিকার মঞ্চের সদস্যরা। তাতেই বিজেপি কর্মী ও রাতজাগা অধিকার মঞ্চের সদস্যদের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়।
এদিকে সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপির তথ্য অনুসন্ধানকারী দলের সদস্যরা তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দেন। গণধর্ষণের ঘটনার জন্য তৃণমূল নেতাদের দায়ী করেন সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব। সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যে মহিলারাই সুরক্ষিত নন। এই ঘটনার মূল অভিযুক্ত, যার বিরুদ্ধে ২০১৩ সাল থেকে বিভিন্ন মামলা রয়েছে, সে কিভাবে একটি কলেজে চাকরি করতে পারে। মনজিতের বিভিন্ন ক্রিমিনাল রেকর্ড থাকা সত্যেও তৃণমূলের বিধায়ক অশোক দেব তাকে কলেজে চাকরি দিয়েছে। ঘটনার সময় যারা গার্ড ছিল তাদেরকেও অশোক দেবের নেতৃত্বে নিয়োজিত করা হয়েছে। তাই এই ঘটনার জন্য সরাসরি তৃণমূলকে দায়ী করেছেন বিজেপি সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব।

