উত্তর ভারতে প্রবল বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস, দিল্লিতে প্রথমবার কৃত্রিম বৃষ্টির উদ্যোগ

নয়াদিল্লি, ২৯ জুন: ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, উত্তর ভারতের বহু অঞ্চলে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে প্রবল বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে উত্তরাখণ্ড ও উত্তরপ্রদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আগামীকাল ব্যাপক বৃষ্টিপাত হতে পারে। এছাড়া আজ বিহার, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ, হরিয়ানা, চণ্ডীগড়, দিল্লি, হিমাচল প্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, কোকন, গোয়া, মধ্য মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, পাঞ্জাব, সৌরাষ্ট্র ও কচ্ছ সহ উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের কিছু স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর।
দপ্তরের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, কোকন, গোয়া, মধ্য মহারাষ্ট্র এবং গুজরাট উপকূলবর্তী অঞ্চলে আগামী ছয় দিন একই রকম আবহাওয়া বজায় থাকবে। পাশাপাশি দেশের পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাসও দেওয়া হয়েছে।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই বায়ু দূষণে জর্জরিত রাজধানী দিল্লিতে এক অভিনব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। শহরের পরিবেশ দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ৪ জুলাই থেকে ১১ জুলাইয়ের মধ্যে কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের ব্যবস্থা করা হবে। এই প্রথমবারের মতো দিল্লিতে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে চলেছে।
দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী মনজিন্দর সিংহ সিরসা জানিয়েছেন, “আইআইটি কানপুরের একটি টিম এই প্রকল্পের পরিকল্পনা তৈরি করেছে এবং সেটি বাস্তবায়নের জন্য পুণে আবহাওয়া দপ্তরের সঙ্গে প্রযুক্তিগত সমন্বয় করা হয়েছে।” মন্ত্রী আরও জানান, তিন জুলাই পর্যন্ত বায়ুমণ্ডল কৃত্রিম বৃষ্টির জন্য অনুকূল না হলেও ৪ থেকে ১১ জুলাইয়ের মধ্যে পরিস্থিতি অনুকূল হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রকল্পটি “ক্লাউড সিডিং”-এর মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে এবং তার আনুষ্ঠানিক নাম রাখা হয়েছে: “দিল্লি-এনসিআরে দূষণ হ্রাসে ক্লাউড সিডিংকে বিকল্প হিসেবে ব্যবহার এবং এর প্রযুক্তিগত মূল্যায়ন”।
এই প্রকল্পের আওতায় উত্তর-পশ্চিম এবং বাইরের দিল্লি অঞ্চলে কম নিরাপত্তা সম্পন্ন আকাশপথে মোট পাঁচটি বিমান ওড়ানো হবে। প্রতিটি বিমানের ফ্লাইট ৯০ মিনিট স্থায়ী হবে এবং এক একটি বিমান প্রায় ১০০ বর্গকিমি এলাকা জুড়ে কৃত্রিম মেঘ থেকে বৃষ্টিপাত ঘটাবে। এর মাধ্যমে বায়ুতে ভাসমান দূষক কণাগুলো মাটিতে নামিয়ে আনার প্রচেষ্টা করা হবে।
পরিবেশমন্ত্রী মনজিন্দর সিংহ সিরসা বলেছেন, “এই উদ্যোগটি দূষণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হতে চলেছে। প্রতিটি নাগরিকের বিশুদ্ধ বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়ার অধিকার রয়েছে এবং সরকার সেই অধিকার রক্ষার জন্য সমস্তরকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।” মন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, যদি কোনও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে মূল তারিখে এই প্রকল্প চালানো সম্ভব না হয়, তাহলে বিকল্প সময়ের জন্য DGCA-র কাছে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এখন রাজস্থান, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা এবং দিল্লিতে পৌঁছে গিয়েছে। এবার মৌসুমী বায়ু নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৯ দিন আগেই সারা দেশে বিস্তার লাভ করেছে। বর্তমানে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পশ্চিমাংশে এবং এর লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূলে একটি নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে, যা আগামী দুই দিনের মধ্যে উত্তর ওড়িশা, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের উপর দিয়ে ধীরে ধীরে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে।
মধ্যপ্রদেশে দুইটি সক্রিয় বৃষ্টিপাতের রেখার প্রভাবে প্রবল বর্ষণ চলছে। আবহাওয়া দপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী, আজ টিকমগড়, ছত্রপুর, দমোহ, কাটনি, শিবপুরী, পন্না এবং নিবারি জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ভারী বর্ষণের সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেবেন্দ্রনগরে সর্বাধিক ১৩ সেন্টিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে। এছাড়া পন্না, গুন্নোর, পলেরা, নৌগাঁও এবং মটিয়ারি এলাকাতেও ১০ সেন্টিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।
হিমাচল প্রদেশে গত কয়েকদিনের লাগাতার প্রবল বর্ষণের ফলে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং বহু কোটি টাকার সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যা ও ধসের কারণে বহু এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উত্তরাখণ্ড রাজ্যে প্রবল বৃষ্টির সতর্কতা জারি হওয়ায় চার ধাম যাত্রা সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে হরিদ্বার, ঋষিকেশ, শ্রীনগর, রুদ্রপ্রয়াগ, সোনপ্রয়াগ এবং বিকাশনগরে তীর্থযাত্রীদের আটকে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উত্তরকাশী জেলার বড়কোট তহসিলের সিলাই বন্দ এলাকায় মেঘভাঙা বৃষ্টির ফলে একটি নির্মাণাধীন স্থানে কাজ করা নয় জন শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন। রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী (SDRF), পুলিশ এবং রাজস্ব বিভাগের দলগুলি উদ্ধারকাজে নিয়োজিত রয়েছে।
উত্তর ও মধ্য ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বর্ষার জেরে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বাহিনী ও প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। অন্যদিকে, দিল্লিতে কৃত্রিম বৃষ্টির মাধ্যমে দূষণ নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ আগামী দিনে দেশের অন্যান্য শহরের জন্যও পথপ্রদর্শক হতে পারে। তবে প্রকৃতপক্ষে এই প্রযুক্তির প্রভাব কতটা কার্যকর হয়, তা সময়ই বলবে। তবে আবহাওয়া এবং পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় এই ধরনের পরীক্ষামূলক উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটি সাহসী পদক্ষেপ।