নয়াদিল্লি, ২৯ জুন: উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যতম রাজ্য মিজোরাম এবার রেল মানচিত্রে যুক্ত হতে চলেছে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপের মাধ্যমে। রাজধানী আইজল প্রথমবারের মতো দেশের মূল রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত হতে চলেছে বাইরাবি-সাইরাং ব্রডগেজ রেললাইন চালুর মাধ্যমে। দীর্ঘ ৫১.৩৮ কিমি পথ পেরিয়ে এই রেলপথ শীঘ্রই যাত্রীসেবার জন্য খুলে দেওয়া হবে। সম্ভাবনা রয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরেই এই প্রকল্পের শুভ সূচনা হবে।
রেল মন্ত্রকের এক পদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, রেলওয়ে সেফটি কমিশনার (CRS)-এর ছাড়পত্র পেলেই প্রধানমন্ত্রীর দফতরে উদ্বোধনের দিন নির্ধারণের প্রস্তাব পাঠানো হবে। ইতিমধ্যেই প্রায় সমস্ত নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। স্টেশন সংলগ্ন কিছু পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ এখনো চলমান থাকলেও, রেল চলাচলের প্রাথমিক প্রস্তুতি শেষ।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী মোদী এই প্রকল্পের শিলান্যাস করেন ভার্চুয়াল মাধ্যমে। এক দশক পরে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে। এনএফ রেলওয়ে (NFR) সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে।
প্রকৃতিগতভাবে প্রতিকূল ভূ-প্রকৃতি ও জটিল নির্মাণ চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে তৈরি হয়েছে এই রেলপথ। এতে রয়েছে ৪৮টি সুড়ঙ্গ (মোট দৈর্ঘ্য ১২.৮৫৩ কিমি), ৫৫টি বড় সেতু ও ৮৭টি ছোট সেতু, সঙ্গে ৫টি রোড ওভারব্রিজ ও ৯টি রোড আন্ডারব্রিজ। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্রিজ নম্বর ১৯৬, যার উচ্চতা ১০৪ মিটার — যা কুতুব মিনারের চেয়েও ৪২ মিটার উঁচু।
এই রেলপথ চালু হলে শিলচর হয়ে আইজলগামী যাত্রীরা উপভোগ করতে পারবেন অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য। পাহাড়, বনভূমি ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্যে ঘেরা এই রুটটি দেশের অন্যতম সুন্দরতম রেলপথ হিসেবে পরিচিতি পাবে বলে আশাবাদী রেল কর্তৃপক্ষ। অনেকের মতে, এটি ‘কাটরা-শ্রীনগর রেললাইন’-এর মতোই জনপ্রিয় হতে চলেছে।
রেল মন্ত্রকের কর্মকর্তাদের মতে, এই সংযোগ কেবল যাত্রী পরিষেবাই নয়, বরং মিজোরামের পর্যটন, বাণিজ্য ও পণ্য পরিবহণ ব্যবস্থায় নতুন গতি আনবে। একইসঙ্গে রাজ্যের বিভিন্ন স্টেশন কেন্দ্রিক কর্মসংস্থানেরও সুযোগ তৈরি হবে।
এই প্রকল্প উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রেল অবকাঠামো উন্নয়নের পথে এক মাইলফলক। এটি প্রমাণ করে, প্রতিশ্রুতি পূরণে কেন্দ্র সরকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। মিজোরামের মানুষের দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটাতে চলেছে এই রেলপথ, যা সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করবে।

