আহমেদাবাদ: শুক্রবার আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে রাস্তায় গড়িয়ে পড়ল আহমেদাবাদের ১৪৮তম জগন্নাথ রথযাত্রা। গম্ভীর ধর্মীয় রীতি ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর নিরাপত্তার মেলবন্ধনে এবারকার রথযাত্রা হয়ে উঠেছে এক স্মরণীয় লোকোৎসব।
প্রতিবছর আষাঢ় শুক্ল দ্বিতীয়া তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় এই রথযাত্রা, যা পুরীর পরে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম রথযাত্রা হিসেবে পরিচিত। গুজরাট সহ আশেপাশের অঞ্চল থেকে লক্ষাধিক ভক্ত অংশ নেন এই পবিত্র যাত্রায়।
আহমেদাবাদের ১৪৮তম জগন্নাথ রথযাত্রা এক ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক আবহে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং এক বিশাল লোকোৎসবের রূপ নিয়েছে। রথযাত্রার দিন ভোর ৪টা নাগাদ শুরু হয় মঙ্গল আরতির মাধ্যমে, যা সম্পাদন করেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, যাঁর জন্য এটি বহু বছর ধরে পালন করা এক ব্যক্তিগত ধর্মীয় ঐতিহ্য। এরপর গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল ‘পাহিণ্ড বিধি’ নামে পরিচিত সোনার ঝাড়ু দিয়ে পথ পরিস্কারের প্রতীকী আচার পালন করে রথ টেনে যাত্রার আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন, যাত্রাটি শুরু হয় জামালপুরের ৪০০ বছরের প্রাচীন জগন্নাথ মন্দির থেকে।
রথযাত্রাটি ১৬ কিমি দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে শহরের পুরনো এলাকাগুলির মধ্য দিয়ে যায়—জামালপুর চকলা, খাড়িয়া, কালুপুর সার্কেল এবং সরাসপুরের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানের মধ্যে দিয়ে। সরাসপুরে দেবতাদের জন্য এক বিশাল ভোগের আয়োজন হয়, যেখানে স্থানীয় বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে অতিথি ও ভক্তদের সেবা করে আসছেন। এবারের রথযাত্রা ধর্মীয় অনুষঙ্গ ছাড়িয়ে এক মহা-লোকোৎসবে পরিণত হয়েছে। অংশগ্রহণ করেছে ১৮টি সুসজ্জিত হাতি, ১০০টি থিম-ভিত্তিক ট্যাবলো, ৩০টি আখড়া যাদের মধ্যে অনেকেই মার্শাল আর্ট প্রদর্শন করেছে, এবং অসংখ্য ভজন মণ্ডলী, রাস-গরবা দল ও ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রের দল। রথ টানার পবিত্র দায়িত্ব পালন করেছেন খলাশি সম্প্রদায়, যারা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই ঐতিহ্য রক্ষা করে চলেছেন।
রথযাত্রাকে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল নজিরবিহীন। আহমেদাবাদ পুলিশ মোতায়েন করেছে ২৩,৮০০-এরও বেশি নিরাপত্তা কর্মী, যার মধ্যে রয়েছে এসআরপি ব্যাটেলিয়ন, র্যা পিড অ্যাকশন ফোর্স এবং চেতক কমান্ডো বাহিনী। অতিরিক্ত ৪,৫০০ পুলিশ যাত্রার সরাসরি নিরাপত্তায় যুক্ত ছিল, এবং ১,০০০ ট্রাফিক পুলিশ গোটা শহরের যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে ছিল। প্রথমবারের মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে ভিড় নিয়ন্ত্রণ ও অগ্নি-সতর্কতা ব্যবস্থায়। নজরদারির জন্য ব্যবহৃত হয়েছে ২২৭টি সিসিটিভি ক্যামেরা, ৪১টি ড্রোন, ২,৮৭২টি বডি-ওয়র্ন ক্যামেরা এবং ২৫টি ওয়াচ টাওয়ার। এছাড়া ৪৮৪টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের চারপাশে ব্যারিকেড বসানো হয়েছে এবং জনসাধারণের সহায়তার জন্য হেল্প ডেস্ক চালু করা হয়েছে।
পুলিশ বিভাগ রথযাত্রার আগে শহরে সামাজিক সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিতে ৪৫০টিরও বেশি কমিউনিটি মিটিং আয়োজন করেছে, যার মধ্যে ছিল পিস কমিটি, মহল্লা কমিটি এবং মহিলা কমিটি। একইসঙ্গে আয়োজিত হয়েছে বিভিন্ন ক্রীড়া ও সামাজিক কার্যক্রম—যেমন ক্রিকেট ম্যাচ, রক্তদান শিবির, ভলিবল প্রতিযোগিতা ইত্যাদি। সব মিলিয়ে, আহমেদাবাদের ১৪৮তম রথযাত্রা ছিল এক অপূর্ব সম্মিলন—ধর্মীয় ঐতিহ্য, আধুনিক প্রযুক্তি, এবং সামাজিক সচেতনতার।

