নয়াদিল্লি, ২৬ জুন: ২৬ জুন, আন্তর্জাতিক মাদকদ্রব্য ও অবৈধ পাচার বিরোধী দিবসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানালেন যে, মাদক হচ্ছে আমাদের যুবসমাজের সবচেয়ে বড় অভিশাপ এবং এই সমস্যার মোকাবিলায় মোদি সরকার ‘হোল-অফ-গভর্নমেন্ট’ পদ্ধতিতে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। তিনি এক পোস্টে বলেন, সরকার মাদক কার্টেলগুলির বিরুদ্ধে নির্মমভাবে আঘাত হানছে এবং আসক্ত যুবসমাজকে সহানুভূতির সঙ্গে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিচ্ছে। একইসঙ্গে তিনি এই যুদ্ধের ‘যোদ্ধা’ ও ‘সহযোগীদের’ শ্রদ্ধা জানান এবং আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এই দিন ভারতের মাদকমুক্ত ভবিষ্যতের সংকল্পকে আরও শক্তিশালী করবে।
চলতি বছরের থিম “ব্র্যাক দ্য সাইকেল. #স্টপঅর্গানাইজডক্রাইম” যা সংগঠিত অপরাধ ও মাদক পাচারের চক্র ভাঙার উপর জোর দিচ্ছে। এতে মূল কারণ চিহ্নিত করে প্রতিরোধে বিনিয়োগ, ও একইসঙ্গে স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সামাজিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ‘নেশামুক্ত ভারত অভিযান’-এর অধীনে জুন মাস জুড়ে দেশজুড়ে ব্যাপক সচেতনতা অভিযান চালানো হয়েছে। সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ১৫.৭৮ কোটিরও বেশি মানুষকে মাদকবিরোধী বিষয়ে সচেতন করা হয়েছে, যার মধ্যে ৫.২৬ কোটি যুবক ও ৩.৩১ কোটি মহিলা রয়েছেন।
এদিকে জাতিসংঘের প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ড্রাগ রিপোর্ট ২০২৫’ অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী ৩১৬ মিলিয়ন মানুষ (অ্যালকোহল ও তামাক বাদে) কোনও না কোনও মাদক ব্যবহার করেছেন, যা ২০১৩ সালের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। গাঁজা (২৪৪ মিলিয়ন) সর্বাধিক ব্যবহৃত মাদক, এরপর অপিওয়েড (৬১ মিলিয়ন), অ্যাম্ফেটামিন (৩০.৭ মিলিয়ন), কোকেন (২৫ মিলিয়ন) এবং একস্টেসি (২১ মিলিয়ন) ব্যবহার হয়েছে। রিপোর্টে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে, বিশ্বজুড়ে সংকট, যুদ্ধ এবং দারিদ্র্যের কারণে আরও নতুন মানুষ মাদকের ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।
ভারত সরকার মাদকবিরোধী লড়াইয়ে একাধিক আইনি ও সামাজিক পদক্ষেপ নিয়েছে। ১৯৮৫ সালের ‘নারকোটিক ড্রাগস অ্যান্ড সাইকোট্রপিক সাবস্ট্যান্সেস অ্যাক্ট’ অনুযায়ী, চিকিৎসা ব্যতীত মাদক ব্যবহার নিষিদ্ধ এবং চিকিৎসা নিতে আগ্রহীদের জন্য আইনি সুরক্ষা রয়েছে। পাশাপাশি, ১৯৮৮ সালের ‘ইলিসিট ট্র্যাফিক অ্যাক্ট’ পুনরায় মাদক পাচারে যুক্ত ব্যক্তিদের আটক রাখার বিধান রেখেছে। ‘ড্রাগস অ্যান্ড কসমেটিকস অ্যাক্ট, ১৯৪০’-এর মাধ্যমে ওষুধের উৎপাদন ও বণ্টন নিয়ন্ত্রিত হয়।
অমিত শাহ এদিনের বার্তায় বলেন, “আমরা কেবল মাদক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালাচ্ছি না, বরং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে আসক্ত যুবসমাজকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতেও কাজ করছি।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস ভারতের মাদকমুক্ত ভবিষ্যতের লক্ষ্যকে আরও দৃঢ় করবে।

