‘সংবিধান হত্যা দিবস’-এ কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ জেপি নাড্ডা ও রাজনাথ সিং-এর; জরুরি অবস্থাকে গণতন্ত্র হত্যার ‘কালো অধ্যায়’ বললেন নেতারা

নয়াদিল্লি, ২৫ জুন — জরুরি অবস্থার ৫০ বছর পূর্তিতে কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষিত ‘সংবিধান হত্যা দিবস’-এ কংগ্রেসের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারী মানসিকতার অভিযোগ তুলে তীব্র আক্রমণ শানালেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা। একইসঙ্গে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং জরুরি অবস্থাকে ভারতের গণতান্ত্রিক ইতিহাসের ‘অন্ধকারতম অধ্যায়’ বলে অভিহিত করেন।
জেপি নাড্ডা বলেন, “১৯৭৫ সালের ২৫ জুন মধ্যরাতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন ‘অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা’র অজুহাতে। আসলে তা ছিল সংবিধান হত্যার এক নির্লজ্জ ঘটনা।” তিনি কংগ্রেসের বর্তমান নেতৃত্বকেও একই ‘স্বৈরাচারী মানসিকতা’ বহন করার অভিযোগ করেন।
নাড্ডা অভিযোগ করেন, ওই সময় ইন্দিরা গান্ধীকে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগে হাইকোর্ট দোষী সাব্যস্ত করেছিল এবং তাঁকে ছয় বছরের জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অযোগ্য ঘোষণা করেছিল। সেই রায়কে অগ্রাহ্য করে ক্ষমতা রক্ষায় তাঁকে অবৈধভাবে জরুরি অবস্থা জারি করতে হয়।
তিনি বলেন, “প্রেসের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়, সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করা হয়, বিরোধীদের জেলে পাঠানো হয়, বিচারব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়। আর সংবিধানের ৩৫২ অনুচ্ছেদের অপব্যবহার করে গণতন্ত্রকে পদদলিত করা হয়।”
নাড্ডা স্মরণ করিয়ে দেন, “জয়প্রকাশ নারায়ণ, চৌধুরী চরণ সিং, অটলবিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আডবাণী, বিজয়ারাজে সিন্ধিয়া, মুরলী মনোহর জোশীর মতো বহু দেশপ্রেমিক এবং হাজার হাজার কর্মীকে ইন্দিরা গান্ধীর সরকার জেলে পুরেছিল।”
তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভূমিকাও তুলে ধরেন, বলেন, “তখন মোদীজি একজন তরুণ আরএসএস কর্মী হিসেবে চোখে ধুলো দিয়ে সরকারের নজর এড়িয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গণতন্ত্র রক্ষার বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলেন। তাঁর অভিজ্ঞতা ও সংগ্রামের গল্প উঠে এসেছে বই ‘দ্য ইমার্জেন্সি ডায়েরি : ইয়ার্স দ্যাট ফোর্জদ এ লিডার’-এ।”
নাড্ডা বলেন, “কংগ্রেস আজও ‘ইন্দিরা ইজ ইন্ডিয়া’ ভাবনার উত্তরাধিকার বহন করে চলেছে। এক পরিবারের শাসনকেই তারা দেশের ভবিষ্যৎ মনে করে। আজও কংগ্রেসের শাসিত রাজ্যগুলিতে বিরোধীদের দমন, সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ, এবং ক্ষমতার অহংকার স্পষ্ট।”
তিনি কংগ্রেসের সাম্প্রতিক সময়ে সাংবাদিকদের ‘বয়কট তালিকা’ প্রকাশের ঘটনাও স্মরণ করিয়ে বলেন, “যখন তারা ক্ষমতায়, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করে; আর যখন বিরোধী আসনে, তখন তাদেরই বয়কট করে।”
অন্যদিকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এক্স-এ লেখেন, “জরুরি অবস্থার মাধ্যমে ভারতের গণতন্ত্রকে শ্বাসরোধের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরও দেশের গণতান্ত্রিক চেতনাকে ধ্বংস করা যায়নি। সেই সময় যাঁরা কারাবরণ করেছেন, যাঁরা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন, তাঁদের ত্যাগ দেশ কখনও ভুলবে না।”
তিনি জানান, জরুরি অবস্থার স্মৃতিকে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তুলে ধরার জন্যই প্রধানমন্ত্রী মোদী ২৫ জুনকে ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ হিসেবে ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, দেশের বিভিন্ন বুথ এবং জেলা স্তরে এই উপলক্ষে বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, যার লক্ষ্য নতুন প্রজন্মকে স্বৈরাচারের ভয়াবহতা এবং গণতন্ত্র রক্ষার গুরুত্ব বোঝানো।