বিচারপতি বর্মার বাড়িতে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকার হদিশ, স্বপ্রণোদিত অভিযোগ না জানানোয় সন্দেহজনক আচরণ: সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত তদন্ত কমিটি

নয়াদিল্লি, ১৯ জুন : বিচারপতি যশবন্ত বর্মার দিল্লির সরকারি বাসভবনে বিপুল অঙ্কের নগদ টাকা— যার মধ্যে কিছু ছিল অর্ধপোড়া — উদ্ধারের ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে বিচারপতির আচরণ নিয়ে। কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, ঘটনাটি প্রকাশ পাওয়ার পরেও বিচারপতি বর্মা বা তাঁর পরিবারের কোনও সদস্য পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেননি, কিংবা বিষয়টি কোন বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হয়নি। এই আচরণকে কমিটি ‘অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছে এবং তাঁর অপসারণের সুপারিশ করেছে।

তদন্তে দেখা গেছে, ঘটনার দিন স্টোররুমে উপস্থিত ছিলেন দিল্লি দমকল বিভাগ ও পুলিশ বিভাগের ১০ জন সিনিয়র কর্মী। তাঁরা প্রত্যেকে সাক্ষ্য দিয়েছেন যে স্টোররুমের মেঝেতে প্রায় ১.৫ ফুট উঁচু হয়ে ছড়িয়ে ছিল ৫০০ মূল্যের নোট। তাঁদের মধ্যে ছিলেন অঙ্কিত সেহওয়াগ, প্রদীপ কুমার, মনোজ মেহলাওয়াত, ভানওয়ার সিং, প্রবীন্দ্র মালিক, সুমন কুমার (দমকল বিভাগ), এবং রাজেশ কুমার, সুনীল কুমার, রূপ চাঁদ, উমেশ মালিক (দিল্লি পুলিশ)। তাঁদের প্রত্যক্ষদর্শী বিবরণ এবং ভিডিও-ফটোর মতো দৃশ্যমান প্রমাণকে কমিটি নির্ভরযোগ্য বলেছে।

কমিটি আরও জানিয়েছে, স্টোররুমে প্রবেশাধিকার ছিল শুধুমাত্র বিচারপতি বর্মা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের। আগুন লাগার পর সেই ঘর থেকে সমস্ত টাকা সরিয়ে ফেলা হয়, এবং প্রাইভেট সেক্রেটারি রাজিন্দর সিং কার্কি দমকল কর্মীদের নির্দেশ দেন যেন তাঁদের রিপোর্টে টাকার বিষয়ে কিছু না লেখেন। এমনকি একটি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ফায়ার সার্ভিসকে বলেন, বিষয়টি না টানাই ভালো, কারণ “উচ্চ মহলের লোকেরা জড়িত”।

যদিও বাড়ির গৃহকর্মীরা টাকা দেখার কথা অস্বীকার করেছেন, কমিটি বলেছে তাদের বয়ানে সন্দেহ রয়েছে এবং নিরপেক্ষ সরকারি কর্মীদের সাক্ষ্যই বেশি গ্রহণযোগ্য। বিচারপতি বর্মার দাবি যে এটি তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, তাও খারিজ করে কমিটি জানিয়েছে— একাধিক নিরপেক্ষ ব্যক্তি একই ধরনের বর্ণনা দিয়েছেন এবং ঘটনাস্থলের ভিডিও-প্রমাণ মেলে। তাই এটি সাজানো ঘটনা হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।

কমিটি এটাও সন্দেহ করছে যে বিচারপতির মেয়ে দিয়া বর্মা এবং প্রাইভেট সেক্রেটারি রাজিন্দর সিং কার্কি ঘটনাস্থল পরিষ্কার ও প্রমাণ লোপাটে ভূমিকা নিতে পারেন। বিচারপতি বর্মা এই ঘটনায় নিজের সম্পূর্ণ নির্দোষতা দাবি করলেও, মার্চ মাসের অগ্নিকাণ্ড ও নগদ টাকা উদ্ধারের পরে তাঁকে আল্লাহাবাদ হাইকোর্টে ফেরত পাঠানো হয়েছে এবং এখনো তাঁর কোনও বিচারিক কাজ বরাদ্দ করা হয়নি। তিনি এখনও পদত্যাগ করেননি কিংবা স্বেচ্ছায় অবসর নেননি।

তদন্ত কমিটির মন্তব্য অনুযায়ী, বিচারপতি বর্মার আচরণ “বিশ্বাসযোগ্যতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে” এবং তাঁর অপসারণের জন্য যথেষ্ট কারণ রয়েছে।