নয়াদিল্লি/হংকং/লন্ডন, ১৬ জুন : আহমেদাবাদে সাম্প্রতিক ড্রিমলাইনার ভয়াবহ দুর্ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই, ফের মাঝ আকাশে বিপত্তি—এবার ঘন্টা কয়েকের ব্যবধানে হংকং ও লন্ডন থেকে ফিরে এল দুটি ভারতগামী বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার।
প্রথম ঘটনাটি ঘটে সোমবার সকালে। এয়ার ইন্ডিয়ার এআই ৩১৫ ফ্লাইটটি হংকং থেকে দিল্লিগামী ছিল। স্থানীয় সময় সকাল ৯:৩০ নাগাদ টেক-অফ করার প্রায় ৯০ মিনিট পর, পাইলটরা কারিগরি ত্রুটির সন্দেহে হংকং এয়ারপোর্টে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। বিমানে থাকা সকল যাত্রী ও কর্মী নিরাপদে নামেন। বর্তমানে বিমানটিতে প্রযুক্তিগত পরীক্ষা চলছে।
এয়ার ইন্ডিয়ার মুখপাত্র জানিয়েছেন, “এআই ৩১৫ ফ্লাইটটি কারিগরি সমস্যার কারণে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে হংকং ফিরে এসেছে। বিকল্প ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং যাত্রীদের সকল প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।”
অপরদিকে, রবিবার বিকেলে লন্ডন থেকে চেন্নাইয়ের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের বিএ ৩৫ ফ্লাইটটিও মাঝপথে ফিরে আসে। ১:১৬ মিনিটে হিথ্রো থেকে ছেড়ে প্রায় দু’ঘণ্টা পর এটি আবার লন্ডনে ফিরে আসে। বিমান সংস্থাটি জানিয়েছে, “একটি প্রযুক্তিগত সমস্যার সম্ভাবনা থাকায় রুটিন সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে ফ্লাইটটি ফিরিয়ে আনা হয়েছে।”
এদিকে, এই ধারাবাহিক ঘটনার প্রেক্ষিতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে যাত্রীদের মধ্যে। কারণ, কিছুদিন আগেই আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার এআই ১৭১ ফ্লাইট বিধ্বস্ত হয়ে ২৭৯ জনের মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে বিমানের ২৪১ জন আরোহী ছাড়াও ২৯ জন ছিলেন ভূমিতে, যাঁদের মধ্যে পাঁচজন মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ছিলেন।
দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটিও ছিল বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার, যা নিয়ে গোটা বিশ্বে প্রশ্ন উঠেছে বিমানটির নিরাপত্তা নিয়ে। বিমানের জিই জেনএক্স ইঞ্জিন সংক্রান্ত ত্রুটিকেই প্রাথমিক কারণ বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এই অবস্থায়, ডিজিসিএ বোয়িং ৭৮৭ বিমানগুলির ওপর কড়া নজরদারির নির্দেশ দিয়েছে। বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার মডেলের বিমানগুলির ক্ষেত্রে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফুয়েল প্যারামিটার ও সিস্টেম ডায়াগনস্টিক পর্যবেক্ষণ, কেবিন এয়ার কম্প্রেসার ও সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশের পরীক্ষা, ইলেকট্রনিক ইঞ্জিন কন্ট্রোল সিস্টেমের কার্যকারিতা মূল্যায়ন, ফুয়েল-চালিত অ্যাকচুয়েটর ও অয়েল সিস্টেম পরীক্ষা, হাইড্রলিক সিস্টেমের কার্যকারিতা নিরীক্ষা এবং টেক-অফ থ্রাস্ট ও পারফরম্যান্স পর্যালোচনা। এ ধরনের ত্রুটির পুনরাবৃত্তি আটকাতে এবং যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে।
বর্তমানে এয়ার ইন্ডিয়ার বহরে ৩৩টি বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার রয়েছে, যা এই মডেলের সবচেয়ে বড় ভারতীয় অপারেটর হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি, ইন্ডিগোও সীমিত সংখ্যক ড্রিমলাইনার পরিচালনা করছে। একাধিক কারিগরি ত্রুটি এবং সাম্প্রতিক আহমেদাবাদ দুর্ঘটনার পর যাত্রীদের মধ্যে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠার জন্য এবং বিমান প্রযুক্তির ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে আসন্ন দিনগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মত বিমান নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের।

