গবেষণা, উদ্ভাবন ও বিজ্ঞানে গতি আনতে বড় নীতিগত সংস্কার ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ডঃ জিতেন্দ্র সিং

নয়াদিল্লি, ১৫ জুন: নয়াদিল্লিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ডঃ জিতেন্দ্র সিং গবেষণা ও উদ্ভাবনের পরিবেশকে সহজতর করার লক্ষ্যে একগুচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত সংস্কারের ঘোষণা করেন। তিনি জানান, এই সিদ্ধান্তগুলি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ ও সমর্থন ছাড়া সম্ভব হতো না। তাঁর কথায়, এই পদক্ষেপ দেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিজ্ঞানী, উদ্ভাবক, গবেষক ও ছাত্রছাত্রীদের বহুদিনের সমস্যার সমাধান করবে। বিশেষ করে সরঞ্জাম কেনাকাটায় বিলম্ব, কঠিন বিধি এবং অপ্রয়োজনীয় আমলাতান্ত্রিক জটিলতার অবসান ঘটবে।

মূল সংস্কারের মধ্যে অন্যতম হলো গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক বা উপাচার্যদের বিশেষায়িত যন্ত্রপাতি ও গবেষণা উপকরণ কেনার ক্ষেত্রে সরকারি ই-প্রকিউরমেন্ট পোর্টাল-এর বাইরে সরাসরি কেনাকাটার অনুমতি দেওয়া। এতদিন জিইএম-এর মাধ্যমে কেনাকাটা বাধ্যতামূলক ছিল, এমনকি যখন প্রয়োজনীয় জিনিস সেই প্ল্যাটফর্মে পাওয়া যেত না, তখনও। এখন থেকে এই বাধ্যবাধকতা আর প্রযোজ্য হবে না। এর ফলে গবেষণার গতি বাড়বে এবং জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা সহজ হবে।

সরকার সাধারণ আর্থিক নিয়ম-এর আর্থিক সীমাও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন থেকে সরাসরি কেনাকাটার সীমা ₹১ লক্ষ থেকে বেড়ে ₹২ লক্ষ হয়েছে, বিভাগীয় কমিটির মাধ্যমে কেনার সীমা ₹১-১০ লক্ষ থেকে বাড়িয়ে ₹২-২৫ লক্ষ করা হয়েছে। সীমিত টেন্ডার ও উন্মুক্ত টেন্ডারের সীমা ₹৫০ লক্ষ থেকে বাড়িয়ে ₹১ কোটি করা হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা এখন ₹২০০ কোটি পর্যন্ত গ্লোবাল টেন্ডার অনুমোদন করতে পারবেন—যা আগে শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের এক্তিয়ারভুক্ত ছিল।

এই সংস্কারগুলি বাস্তবায়নের আগে প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টার দফতরের নেতৃত্বে ১৩টি আইআইটি ও একাধিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়েছে। ডঃ জিতেন্দ্র সিং বলেন, “আমরা লালফিতার দৌরাত্ম্য দূর করতে চাই। এটি দেশের বিজ্ঞান নেতৃত্বের ওপর সরকারের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতিফলন।” তিনি আরও বলেন, এই পরিবর্তন গবেষণা ব্যবস্থাকে উদ্ভাবন-বান্ধব করে তুলবে এবং ভারতের বিজ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির লক্ষ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

তিনি জানান, এই সংস্কার জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০২০-র সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আন্তঃবিষয়ক নমনীয়তা ও স্বাধীনতা বাড়ানোর কথা বলে। তাই শিক্ষার্থীদের স্বাধীনভাবে গবেষণার পথ বেছে নেওয়ার জন্য একটি সহায়ক পরিকাঠামো তৈরি করাও সরকারের লক্ষ্য।

এই ঘোষণার মাধ্যমে, মোদী সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে গুরুত্ব, উদ্ভাবন-কেন্দ্রিক উন্নয়ন এবং যুব-নেতৃত্বাধীন ভবিষ্যতের প্রতি অঙ্গীকার আবারও স্পষ্ট হলো। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডঃ রাজেশ গোকলে (সচিব, বায়োটেকনোলজি বিভাগ), অধ্যাপক এ. কে. সুদ (প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা) এবং সুনীল কুমার (অতিরিক্ত সচিব, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ) সহ একাধিক বিজ্ঞানী ও ঊর্ধ্বতন আধিকারিক।

এই সংস্কারগুলি গবেষকদের উৎসাহ দেবে, প্রকল্পে বিলম্ব কমাবে, এবং ভারতকে উদ্ভাবনী অর্থনীতির দিশায় আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে—এমনটাই মনে করছে বৈজ্ঞানিক মহল।