পশ্চিম এশিয়ায় উত্তেজনার জেরে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম প্রতি ব্যারেলে ৪ ডলারের বেশি বৃদ্ধি

তেহরান , ১৩ জুন : ইরানের ওপর ইসরায়েলের লক্ষ্যভিত্তিক সামরিক অভিযানের পর পশ্চিম এশিয়ায় নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক তেল বাজারে, যেখানে অপরিশোধিত তেলের দাম প্রতি ব্যারেলে ৪ ডলারেরও বেশি বেড়ে গেছে। এটি গত পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি বলে মনে করা হচ্ছে।

ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ৫.৩% বেড়ে ৭৩.০৫ ডলার প্রতি ব্যারেলে পৌঁছায়, যা দিনের এক পর্যায়ে ৭৮.৫০ ডলার পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল। অপরদিকে, ডব্লিউটিআই ক্রুড তেলের দাম ৫.৪% বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ৭১.৭১ ডলার প্রতি ব্যারেলে পৌঁছায়। পরবর্তীতে লন্ডন সময় দুপুর ১২:২৫-এ আগস্ট ডেলিভারির ব্রেন্ট ফিউচারস ৭.৭% বাড়ে, যা দাঁড়ায় ৭৪.৬৫ ডলারে। জুলাই মেয়াদের ডব্লিউটিআই কন্ট্রাক্ট ছিল ৮% বৃদ্ধি নিয়ে ৭৩.৫২ ডলারে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানান, ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক মিসাইল কর্মসূচিকে লক্ষ্য করে “টার্গেটেড মিলিটারি অপারেশন” চালানো হয়েছে। এই অভিযানে নাতাঞ্জে অবস্থিত ইরানের প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র, শীর্ষ পারমাণবিক বিজ্ঞানী এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির মূল কেন্দ্র লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

নেতানিয়াহু বলেন, “এই অভিযান যতদিন প্রয়োজন চলবে, যতক্ষণ না এই হুমকি পুরোপুরি নির্মূল হয়।”

এই প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা জানিয়েছে, শুক্রবার সকালে নাতাঞ্জ কেন্দ্রে বিকিরণ মাত্রা স্বাভাবিক ছিল এবং ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনার কোনো ক্ষতি হয়নি।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক বিবৃতিতে জানান, ইসরায়েল একক সিদ্ধান্তে এই হামলা চালিয়েছে এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা নেই। তিনি বলেন, “আমাদের শীর্ষ অগ্রাধিকার হল পশ্চিম এশিয়ায় মোতায়েন মার্কিন বাহিনীকে সুরক্ষা দেওয়া। ইসরায়েল আমাদের জানিয়েছে যে, তাদের আত্মরক্ষার জন্য এই অভিযান প্রয়োজনীয় ছিল।”

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই হামলার জবাবে ইরান ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো লক্ষ্যবস্তুতে পাল্টা হামলা চালাতে পারে, যার ফলে উত্তেজনা আরও বেড়ে গিয়ে জ্বালানি সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে। এপ্রিল মাসে ইরান দৈনিক ৩.৩০৫ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন করেছে বলে ওপেক-এর মে মাসের মাসিক রিপোর্ট জানিয়েছে।

আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা জানিয়েছে, তাদের জরুরি তেল মজুদ ব্যবস্থায় ১.২ বিলিয়ন ব্যারেল তেল মজুত রয়েছে এবং পরিস্থিতি খারাপ হলে তারা তা ব্যবহার করতে প্রস্তুত। সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ফাতিহ বিয়রল বলেন, “তেল বাজারের উপর ইসরায়েল-ইরান পরিস্থিতির প্রভাব আইইএ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বর্তমান বাজারে সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও প্রয়োজনে আমরা ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত আছি।”

তেল বাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এখন সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হচ্ছে ইরানের সম্ভাব্য প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ এবং তেল রপ্তানিকারক অন্যান্য রাষ্ট্রের সংঘাতে জড়িয়ে পড়া, যা বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সরবরাহে বড় রকমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।