আদানি পাওয়ার প্রকল্পকে ঘিরে উত্তাল কোকরাঝাড়: হাজার হাজার গাছ ও আদিবাসী জীবনের অস্তিত্ব সংকটে

কোকরাঝাড়, ১১ জুন: আসামের কোকরাঝাড় জেলার পারভাতঝোরা সাবডিভিশনের পাগলিজোড়া পার্ট-II এলাকায় আদানি গ্রুপের থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণকে ঘিরে ব্যাপক উপজাতীয় বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বোড়ো আদিবাসী সম্প্রদায় এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে পড়েছে, যাকে তাঁরা আদিবাসী জমিতে জোরপূর্বক উচ্ছেদ হিসেবে বর্ণনা করছেন।
আদানি গ্রুপ ও আসাম পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড-এর যৌথ উদ্যোগে গড়ে তোলা এই প্রকল্পের জন্য প্রায় ৪৮০ হেক্টর জমি বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। প্রস্তাবিত জমিটি ছায়াঘন বনাঞ্চল, যেখানে প্রায় ৫ লক্ষ সেগুন ও শাল গাছ রয়েছে। এরইমধ্যে, জেলাপ্রশাসন ও আদানি গ্রুপ কর্তৃপক্ষ গত বুধবার জমির সীমানা নির্ধারণ ও উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করতেই স্থানীয়দের তীব্র প্রতিরোধে পড়ে।
বোরোল্যান্ড জনজাতি সুরক্ষা মঞ্চের কার্যনির্বাহী সভাপতি দাওরাও ডেকরাব নার্জারি এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত অঞ্চলে বেসরকারি সংস্থাকে জমি দেওয়া সম্পূর্ণভাবে অসাংবিধানিক। স্থানীয়দের অনুমতি ছাড়া এক ইঞ্চি জমিও হস্তান্তর করা যাবে না।”
প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকা বশবাড়ি এলাকার পাগলিজোড়া অঞ্চলে পড়ে, যা বোড়োল্যান্ড টেরিটোরিয়াল রিজিয়ন এর অন্তর্গত। ষষ্ঠ তফসিল অনুযায়ী এই অঞ্চলের জমি শুধুমাত্র স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত। বিরোধীদের দাবি, আদানি গ্রুপ এই জমি বাণিজ্যিক প্রকল্পের জন্য আইনি ও সাংবিধানিকভাবে অধিকারী নয়।
পারভাতঝোরা এলাকার এমসিএলএ মুন মুন ব্রমা সম্প্রতি ঘটনাস্থলে গিয়ে আন্দোলনরতদের সঙ্গে সংহতি জানান এবং বলেন, “আমি আপনাদের সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং থাকব। প্রধান নির্বাহী সদস্য প্রমোদ বোরো কীভাবে নিজের স্বার্থে আদানিদের হাতে পারভাতঝোরার জমি তুলে দেন, তার জবাব দিতে হবে।”
পরিবেশবিদ ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই প্রকল্পের ফলে বায়ু, জলদূষণ, মাটির উর্বরতা হ্রাস, স্বাস্থ্য সমস্যা সহ পরিবেশগত ভারসাম্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে সালফার ডাই-অক্সাইড (SO₂), নাইট্রোজেন অক্সাইড (NOₓ), কার্বন মনোক্সাইড (CO), ওজন (O₃), সাসপেন্ডেড পার্টিকুলেট ম্যাটার (SPM), সীসা এবং নন-মিথেন হাইড্রোকার্বন নির্গত হয়। এদের প্রভাবে অ্যাসিড রেইন হতে পারে এবং শ্বাসজনিত রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
এছাড়াও, কয়লা ধোয়ার জন্য ব্যবহৃত জল ভূগর্ভস্থ জলের দূষণ ঘটায় এবং তাপযুক্ত জল জলাশয়ে ছেড়ে দেওয়া হলে জলজ জীববৈচিত্র্য বিপন্ন হয়।
এই পরিস্থিতিতে, জয়েন্ট ল্যান্ড স্ট্রাগলস কমিটি, আসাম আন্দোলনকারীদের পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক সুব্রত তালুকদার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, “আদানি-অম্বানিদের ঋণ শোধ করতে রাজ্য সরকার করবি, বোড়ো, রাভা আদিবাসীদের জমি বিক্রি করছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।”
প্রতিবাদ এখন ব্যাপক রূপ নিচ্ছে। বেসরকারি সংস্থা ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণআন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে, যার মূল লক্ষ্য আদিবাসীদের ভূমির অধিকার ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করা।